ক্রোক ঠেকাতে আপোষে যাচ্ছে গোল্ডেন লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ৯৭ জন গ্রাহকের সঞ্চয়কৃত টাকা ফেরত না দেয়ায় কুষ্টিয়ায় রুজু হওয়া মামলায় মালামাল ক্রোক ঠেকাতে আপোষ করতে যাচ্ছে বেসরকারি বীমা কোম্পানি গোল্ডেন লাইফ । এ লক্ষ্যে ওই গ্রাহকদের পাওনা টাকার চেক পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।

মূখ্য নির্বাহী নূর মোহাম্মদ ভূঁইয়া জানান, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার ৯৭ গ্রাহকের পাওনা টাকার নির্বাহী রশিদ তৈরী করতে কিছুটা সময় লেগেছে। সব পদ্ধতি শেষ করে চেক ইস্যু করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। গ্রাহকের হাতে চেক তুলে দিয়েই মামলাটি আপোষ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির বন্ধুবীমা প্রকল্পে ৯৭ জন গ্রাহকের ৭ লাখ ৫ হাজার ৭’শ টাকা জমা করে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা ইউনিট। পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করার জন্য তাগিদ দেয় সংশ্লিষ্ট ইউনিট। কিন্তু কোম্পানিটি গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এতে গ্রাহকের টাকা পাওয়া নিয়ে শংকা দেখা দেয়। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধানের ওপর চাপ দিতে থাকে গ্রাহকরা ।

এরপর গ্রাহকদের পক্ষে বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভেড়ামারার ইউনিট প্রধান শাহনাজ পারভীন। মামলা নং সি আর ১৭১/১৬। তিনি নিজেও একজন বীমা গ্রাহক।

মামলায় আসামি করা হয় কোম্পানিটির তৎকালীন মূখ্য নির্বাহি কর্মকর্তা সুশান্ত প্রামানিক, (বর্তমানে বায়রা লাইফের মূখ্য নির্বাহী)  বন্ধুবীমা প্রকল্প পরিচালক এজেডএম মাসুদ আজাদী এবং  অর্থ ও হিসাব পরিচালক ফিরোজ আলমকে।

উক্ত মামলার সমন পাওয়ার পরেও আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় গত বছরের ৩ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানাটি ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় প্রেরণ করা হয়। আদালতের পরোয়ানা পেয়েও ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।

এরপরও আদালতে হাজির না হলে এ বছরের ৫ জানুয়ারি কোম্পানিটির ওই ৩ কর্মকর্তার অফিসের মালামাল ক্রোকের আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মোর্শেদ।

মামলার বাদী শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে কথা হয় ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র। তিনি বলেন, আমি নিজেই গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একটি পলিসি করি। পরবর্তীতে কোম্পানির কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। অনেক গ্রাহক সংগ্রহ করি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হতেই কোম্পানি গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে। নানা কারণে এখানকার অফিসটি বন্ধ হয়ে যায়।

আমি, আমার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনদের পলিসি করাই। মেয়াদ শেষে কোম্পানি টাকা ফেরত নিয়ে টালবাহানা শুরু করে।

কোম্পানি যখন গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয় না তখন অবস্থাটা এমন হয় নিজেদের লোক আমাদের অবিশ্বাস করতে শুরু করে। তারা সন্দেহ করে আসলে আমরা কোম্পানিতে টাকা জমা করেছি কিনা। মাঠে বের হলেই সবাই বলে আমাদের টাকা দাও। আমি তখন বাধ্য হয়ে মামলায় যাই ।

এরপরও কোম্পানির লোকজন গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে নানাভাবে ঘোরাতে থাকে। পরে এক পর্যায়ে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তখন কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলা তুলে নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু টাকা না পেয়েত মামলা তুলতে পারি না। এখন আদালত কোম্পানির মালামাল ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছে।