ভবানীপুরের কেউ বীমা বিশ্বাস করে না: পর্ব-৩

মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু:

আমার খুব কষ্ট । আরো কিছু টাকা জমা দিলে টাকা পাওয়া যাবে। টাকা তো জমা দিতে পারছি না। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে বিদেশ গেল। কষ্ট করে ২ বছর টাকা জমা দিলাম। এক বছর পরেই ছেলে ফিরে আসে। এখন তো টাকা নেই। ৫০০ টাকা করে জমা করেছি। এখন আর পারছি না। টাকাটা পেলে খুব ভাল হত। ৭/ ৮ বছর হয়ে গেলে টাকা পাচ্ছি না। আরো কিছু টাকা দিলে নাকি টাকা পাওয়া যাবে। সে টাকা পাব কোথায়। টাকা মাইর যাবে তাও বলছে না।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বীমা গ্রাহক উত্তর ভবানী পুরের রহিমা খাতুন এভাবেই আক্ষেপ জানায় ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে।

এ গ্রামেরই তারিফা বেগমের স্বামী রেকেন আলী মারা গেছেন তাও ৫ বছর আগে। বীমা করে মারা গেলেও টাকা পেল না। ৫ বছর হয়ে গেল। রেকেন আলী কোন কোম্পানিতে পলিসি করেছিল তা জানে না তার স্ত্রী তায়িফা। সে শুধু জানে গ্রামের গুলু তার পলিসি করেছিল। সেই গুলু এখন লটারী নিয়ে আমেরিকায়।

ইঁদুরে কাগজপত্র সব কেটে ফেলেছে রেকেন আলীর পলিসির। বাকি ৪টি কাগজ ছিল তা দেয়া আছে ছেলের কাছে। ছেলে কার কাছে দিয়েছে তা জানা নেই। এর ওর কাছে ধরণা দিলে দু’একজন ৫০০, ১০০০ টাকাও নিয়েছে। অফিসে গিয়ে নাম লিখে দেয়া হয়েছে। তাও কিছু হয়নি।

পাশের বাড়ির সজীবকে ডেকে আনা হলে সে জানায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে পলিসি করেছিল রেকেন আলী। তবে মোখলেস বলেছে টাকা তুলে দেবে। পপুলার লাইফে চাকরি করেন মোখলেস। তার কাছে কাগজ দেয়া আছে। সে বলেছে টাকা তুলে দেবে।, জানায় সজীব ।

গ্রামের আছিয়া খাতুনও ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহক। ২ বছর টাকা জমা করতে পারেনি। আছিয়া খাতুন অভাবের কারণে কাজ করতে ঢাকা চলে গিয়েছিল। ঢাকা থেকে ফিরে আর টাকা জমা দিতে পারেনি। এখন টাকা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ কারে ছেলে মেয়েকে দু’ বেলা খাওয়ানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। কিস্তির টাকা জমা দিবে কি করে। কোম্পানির লোকজন বলেছে ১০ বছর টাকা জমা দিলে টাকা পাওয়া যাবে।

কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উত্তর ভবানীপুর গ্রামের এই ৩ তিন বীমা গ্রাহেকর পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বীমা বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন গ্রাহকের কাছে পলিসি বিক্রি করতে গেলে প্রথমে দেখতে হবে গ্রাহকের প্রিমিয়াম দেয়ার আর্থিক সঙ্গতি আছে কি না। তারপর পলিসিতে কোন ধরণের ঝুঁকি নেয়া হবে, কত টাকার বীমা, প্রিমিয়াম হার কত, কতদিন পর পর প্রিমিয়াম দিতে হবে ইত্যাদি সব খুঁটিনাটি তথ্য গ্রাহককে ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এটা বীমা ব্যবসার রেওয়াজ। এসব গ্রাহককে কেন বীমা করানো হলো যে কোন  কোম্পানিতে বীমা করছে তার নামই জানে না।

তাছাড়া এসব নগন্য উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের বীমা করানোটাও বীমা আইনের লঙ্ঘন। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা স্রেফ টাকা মেরে দেয়ার উদ্দেশ্যেই এদের বীমা করিয়েছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিও এড়াতে পারে না। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা না দেয়া প্রতরণা। কোম্পানিগুলোর এমন কর্মকাণ্ডের জন্যই তো বিভিন্ন জায়গায় মামলা মোকদ্দমা হচ্ছে, মন্তব্য তাদের। তাদের মতে, এমন চিত্র শুধু ভবানীপুরের নয়, দেশব্যাপী এমন অবস্থা। এখনই এসব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা বীমা খাতে মারাত্মক বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।