প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলন

কর থেকে রেহাই চায় বীমা কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন নামে নানান রকমের কর থেকে রেহাই চায় দেশের বীমাখাতে ব্যবসা পরিচালনাকারী লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে বীমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) ।

সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট আসন্ন বাজেটে কর প্রত্যাহার চেয়ে ৫টি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- বীমা এজেন্ট কমিশনের বিপরীতে ১৫% উৎস কর প্রত্যাহার করা, পুনঃবীমার বিপরীতে ১৫% উৎস কর প্রত্যাহার, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ওপর আয়কর নির্ধারণ না করা, পলিসিহোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর ৫% গেইন ট্যাক্স কাটা বন্ধ করা এবং কর্পোরেট ট্যাক্স হার কমানো।

শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রতিবছর বাজেট আসলেই আমরা এ দাবিগুলো জানিয়ে আসছি। কিন্তু বাজেটে আমাদের দাবির প্রতিফল দেখতে পাই না। দাবি না মানার ক্ষেত্রে কি কারণ থাকতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যম আমাদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে না। এটাই হয় তো কারণ। আশাকরি এবার আমাদের দাবি সংবাদ মাধ্যম গুরুত্বসহকারে তুলে ধরবে।

এজেন্ট কমিশনে ১৫% মূসক:

সংবাদ সম্মেলনে এজেন্ট কমিশনের উৎসে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের পক্ষে বলা হয়, বীমা এজেন্টরা কোম্পানির কাছ থেকে যে কমিশন পায় তার ওপর ৫ শতাংশ হারে আয়কর প্রদান করে। এক্ষেত্রে তার এই আয়ের উপর যদি আবার ১৫ শতাংশ মূসক দিতে হয় তাহলে দ্বৈত কর ধার্য কর হবে যা কাম্য নয়। এই বিধানের ফলে বীমা এজেন্টরা এবং দেশের বীমা শিল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে বীমা শিল্প বিকাশে বাধাগ্রস্ত হবে।

পুনর্বীমা প্রিমিয়ামে ৫% মূসক:

পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলা হয়, বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের নিকট থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। বীমা কোম্পানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এই প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনর্বীমা করে। যেহেতু প্রিমিয়াম নেয়ার সময় সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামের ওপর আইন অনুযায়ী মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় এবং এই প্রিমিয়ামেরই একটি অংশ পুনর্বীমাকারীকে দেয়া হয়, সেহেতু পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট আরোপের কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট ধার্য্য করা হলে বিষয়টিকে দ্বৈতকর বলে বিবেচিত হবে।

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে আয়কর:

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ওপর থেকে আয়কর প্রত্যাহারে দাবি করে বলা হয়, বীমা কোম্পানি প্রিমিয়াম আয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট অঙ্কে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে খরচ করতে পারে। যদি এর বেশি হয় তবে বীমা আইন ২০১০ এর ১৩০ ধারা অনুসারে বীমা কোম্পানিকে জরিমানা করতে পারে অথবা অতিরিক্ত খরচ যদি হয় বীমা আইনের ৬৩ ধারা অনুযায়ী তা মওকুফ করতে পারবেন। বিষয়টি নিতান্তই বীমা নিয়ন্ত্রকের বিষয়, আয়করের বিষয় নয়।

সুতরাং বীমা আইনের বিধানকে আয়কর নিরুপণের বিধান আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। অনুমোদনযোগ্য ব্যবস্থাপনা খরচের অতিরিক্ত খরচের ওপর ৪০ শতাংশ হারে আয়কর নির্ধারণ করার কারণে দুর্বল কোম্পানিগুলোর পক্ষে অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ২০০৫-২০০৬ সালের অর্থ বিলের মাধ্যমে সংশোধন করা বীমা কোম্পানির আয় নিরুপন সংক্রান্ত অধ্যাদেশের চতুর্থ তফসিলের অনুচ্ছেদ ৬ এর অনুচ্ছেদ (১) এর বিধান বাতিল করতে হবে।

বীমা গ্রাহকের বোনাসে ৫% গেইন ট্যাক্স:

লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের জমাকৃত প্রিমিয়ামের অতিরিক্ত প্রদেয় বোনাসের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ৫২টি ধারা সন্নিবেশ করে ২০১৪ সালে এই গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। যার কারণে বীমা ব্যবসা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং লাইফ বীমার প্রতি সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারাবে। একইসঙ্গে বীমা শিল্পের অগ্রগতির জন্য সরকারের চলমান উদ্যোগও ব্যহত হবে বলে তারা মনে করেন।

৪০% করপোরেট ট্যাক:

করপোরেট ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, বর্তমানে নন-লাইফ বীমা ও লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে ৪০ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। অথচ তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ২৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিচ্ছে। তাই বীমা কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্স হার কমানো উচিত।