অভিবাসী পরিবারের আয়ের সুরক্ষায় বীমা পরিকল্প চালুর আহবান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিবারের আয়ের সুরক্ষায় বীমা পরিকল্প চালুর আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি) আয়োজিত সেমিনারের বক্তারা। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নতুন এই বীমা পরিকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা হয় ওই সেমিনারে। এ ধরণের পলিসি দেশের জন্য অর্থবহ হবে বলে প্রত্যাশা করেন বক্তারা।

‘ইনকাম প্রোটেকশন প্ল্যান ফর বাংলাদেশ ইমিগ্রান্টস: সুইট্যাবল প্রোডাক্ট আইডিয়া’ শীর্ষক সেমিনারটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাহরাইনের ট্রাস্ট রি'র লাইফ ও হেলথ অবলিখক ধর্মেশ দেব। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন আদিত্য বিড়লা'র রিইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড লার্জ রিস্ক কর্মকর্তা অভিনব চ্যাটার্জি। বুধবার রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

ফ্যামিলি ইনকাম প্রোটেকশন প্ল্যানের বিষয়ে ধর্মেশ দেব বলেন, কাজের জন্য বিদেশগামী একক অভিবাসীদের বীমা কভারেজ প্রদানের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে সুরক্ষা প্রদানই এই পলিসির উদ্দেশ্য। অভিবাসীকে এককভাবে বীমাবৃত করবে এই পলিসি। বাংলাদেশি বীমা কোম্পানির মাধ্যমে এই বীমা কভারেজ প্রদান করা যাবে। এতে করে বীমা গ্রাহকের মনে শান্তি আসবে এবং পলিসির সুবিধা তাদের পরিবারে পৌঁছা নিশ্চিত হবে।

এই বীমা পলিসির মাধ্যমে যেকোন কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি গ্রহণ করা যাবে। হতে পারে সেটা দুর্ঘটনায় মৃত্যু অথবা অসুস্থতায় মৃত্যু। যেকোন কারণে স্থায়ী সম্পূর্ণ অক্ষমতার ঝুঁকি গ্রহণ করা যাবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যু বীমা অংক দ্বিগুণ হতে পারে। দুর্ঘটনায় আহতের ক্ষেত্রে মেডিকেল ব্যয় ও নেটওয়ার্কভুক্ত হাসপাতালে ভর্তির ব্যয় বহন করা যাবে। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণে চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে একবার মাসিক বেতনের পরিমাণ এককালীন আর্থিক সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।

ধর্মেশ দেব আরো বলেন, দুই বছরের ভিসার জন্য এই পলিসি মঞ্জুর হতে পারে। বার্ষিক ভিত্তিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যাবে। মেডিকেল ডকুমেন্ট ছাড়াই পলিসি নবায়ন করা যাবে। নির্ভরশীল সন্তানের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে বীমা অংক কম-বেশি হবে। ভিসার মেয়াদ নবায়ন করলে পলিসিও নবায়ন করা যাবে। দুই বছর পর বীমা অংক বাড়ানো যাবে। বাংলাদেশি টাকায় বীমা অংক নির্ধারিত হতে পারে। তবে মার্কিন ডলারে হিসাব করা সুবিধাজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং এসবিসি ও জেবিসি'র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন, অ্যাকচ্যুয়ারি জানান, সরকার ও আইডিআরএ গত ৬ মাস ধরে প্রবাসী শ্রমিকদের বীমা পলিসি নিয়ে আলোচনা করছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বীমা ও ইনকাম প্রটেকশন প্ল্যান নিয়ে। এ বিষয়ে কমিটিও গঠন করেছে সরকার। নিজে ওই কমিটির আহবায়ক বলেও জানান ড. সোহরাব।

বাংলাদেশের বীমাখাতের জন্য এখনো অনেক বিধি-বিধান প্রয়োজন বলে জানান সেমিনারের সভাপতি ড. সোহরাব। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রবীমার কোন সংজ্ঞা নেই। দেশে বাহ্যিকভাবে কোন স্বাস্থ্য বীমা নেই বলেও জানান। বাংলাদেশে অ্যাকচ্যুয়ারির সংকটের কথা তুলে ধরে ড. সোহরাব বলেন, দেশে অ্যাকচ্যুয়ারি তৈরির কোন প্রচেষ্টান নেই। তবে বর্তমানে ওয়াল্ড ব্যাংক এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে, সরকারও এতে সম্মতি দিচ্ছে।

বিআইপিডি'র একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য দাস দেব প্রসাদ বলেন, ৮০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বাইরে কাজ করে। তাদের আয়ের সুরক্ষায় ইনকাম প্রটেকশন প্ল্যানের বিষয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। এ ধরণের পলিসিতে খরচ খুবই সামান্য। শ্রমিকদের পাশাপাশি দেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য এই পলিসি ভালো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করার আহবান জানান।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান আলহাজ মো. নজরুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিআইপিডি'র ডাইরেক্টর জেনারেল কাজী মো. মোরতুজা আলী। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিআইপিডি'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ খালেক, বিআইপিডি'র ডাইরেক্টর ড. এম মোশাররফ হোসাইন, ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্লাহ প্রমুখ।