এসবিসি'র কর্মশালায় আলোচকরা

খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ কৃষি বীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান বিশ্বের সবগুলো উন্নত দেশেই কৃষি বীমা রয়েছে। আবহাওয়ার ক্ষতি থেকে কৃষকের সুরক্ষায় কৃষি বীমা খুবই প্রয়োজন। তাছাড়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কৃষি বীমা সরকারের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কম ঝুঁকিতে কৃষিখাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

এমনটাই জানিয়েছেন সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) আয়োজিত "ডব্লিউআইবিসিআই স্কেল আপ অপশন্স: চ্যালেঞ্জেস, পোটেনশিয়ালস এন্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড" শীর্ষক কর্মশালার আলোচকরা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীতে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, সাধারণ বীমা করপোরেশন, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।

কর্মশালার সূচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিত চৌধুরী বলেন, সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক শস্য বীমা চালু করা হয়েছে। জুনে এ প্রকল্প শেষ হবে। কৃষকের সুরক্ষায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শস্য বীমার ক্ষেত্রে ডাটা সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

অরিজিত চৌধুরী বলেন, বিশেষ ক্ষেত্রে শস্য বীমা চালু করা হয়েছে। তবে এটা আরো কোন কোন বিষয়ে হতে পারে সেটা জানা দরকার। তিনি বলেন, শস্য বীমাকে আরো কিভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশন স্বল্প সময়ে একটি প্রস্তাবনা দিলে আমাদের মাঝে বড় ধরণের কোন ফারাক সৃষ্টি হবে না। ভবিষ্যতে আমরা শস্য বীমার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো। যা কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে জরুরি।

কৃষি বীমার গুরুত্ব তুলে ধরে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বলেন, বর্তমানে জিডিপি'র ১৬.৫ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। এই কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষায় কৃষি বীমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান বিশ্বের সবগুলো উন্নত দেশেই কৃষি বীমা রয়েছে। বাংলাদেশে শস্য বীমার পাইলট প্রকল্পে ভালো সাড়া পড়েছে বলেও জানান শাহরিয়ার আহসান।

আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক শস্য বীমার এ পাইলট প্রকল্পকে সফল বলে মন্তব্য করেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক'র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পরকাশ। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমি প্রকল্পটি দেখেছি এবং প্রকল্প এলাকাতেও গিয়েছি। কৃষকের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে এই শস্য বীমা প্রকল্প। তবে শস্য বীমার আওতা আরো বাড়াতে হবে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নও প্রয়োজন। এখানে আন্ডাররাইটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও মন্তব্য করেন মনমোহন পরকাশ।

ডব্লিউআইবিসিআই প্রকল্পের পরিচালক ওয়াসিফুল হক বলেন, ভৌগলিক কারণে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ২০০৫ সাল থেকে ২০৫০ সালে প্রতি বছর জিডিপি'তে কৃষির অবদান ৩.১ শতাংশ কমবে। অথচ পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি প্রচলিত কৃষি বীমায় ব্যাপক লোকসানের কারণে দেশে শস্য বীমা পর্যাপ্ত হয়নি। চরম আবহাওয়ায় কৃষকের জন্য কৃষি বীমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে মন্তব্য করেন ওয়াসিফুল হক।

কর্মশালায় "প্রপোজাল ফর ফিউচার স্কেল আপ অব দ্যা ওয়েদার ইনডেক্স বেসড ক্রপ ইন্স্যুরেন্স ইন বাংলাদেশ" বিষয়ে আলোচনা রাখেন আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক শস্য বীমা (ডব্লিউআইবিসিআই) প্রকল্পের কনসালটেন্ট অনুজ কুমভাত ও সতিশ অরজিল্লি এবং "অপশনস ফর স্কেলিং আপ ক্রপ ইন্স্যুরেন্স ইন বাংলাদেশ" বিষয়ে আলোচনা করেন ম্যানিলায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর প্রিন্সিপাল ফিনান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিষ্ট অরুপ কুমার চ্যাটার্জি।