মেয়াদপূর্তির টাকা না দেয়ায়

সানলাইফকে ৫শ' গ্রাহকের লিগ্যাল নোটিশ  

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বীমা দাবির টাকা না পেয়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে মেহেরপুরের ৫ শতাধিক গ্রাহক। ন্যায্য দাবি আদায় না হলে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। ৫ আইনজীবীর পাঠানো পৃথক ৫টি লিগ্যাল নোটিশে এ হুমকি দেয়া হয়। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'কেও এসব লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়।

এ ছাড়াও উক্ত জেলার ৬ বীমা গ্রাহকের পক্ষে আইডিআরএ'কে এককভাবে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান মেহেরপুর জেলা জজ কোর্টের এক আইনজীবী।   

এসব লিগ্যাল নোটিশের প্রেক্ষিতে দ্রুত দাবি নিষ্পত্তি করতে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে চিঠি দেয় আইডিআরএ। এ ব্যাপারে একটি শুনানি ডেকে বীমা কোম্পানিটির বক্তব্যও গ্রহণ করে আইডিআরএ।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি চিঠির জবাবে বীমা গ্রাহকদের পলিসি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলেই দাবি পরিশোধ করা হবে বলে জানায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স।

অথচ কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রেরণ করেও দাবির টাকা পায়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকরা। এ ছাড়াও বীমা কোম্পানিটির স্থানীয় কর্মকর্তারা গ্রাহকদের নতুন করে পলিসি করার জন্য চাপ দিচ্ছে। নতুন পলিসি না হলে গ্রাহকরা টাকা পাবেন না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ গ্রাহকদের।

ইন্স্যুরেন্স নিউজবিডি'র পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেহেরপুরের ২৬ বীমা গ্রাহকের দাবি আদায়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান মেহেরপুর জজ কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সাহেব। ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

এই লিগ্যাল নোটিশের প্রেক্ষিতে আইডিআরএ'র পক্ষ থেকে কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জবাব দেয় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ওই জবাবে বলা হয়, পলিসির নম্বর, নাম ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেলেই আমরা টাকা দিয়ে দেব।

অথচ ওই ২৬ গ্রাহকের একজন শরিফুল ইসলাম ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে জানান, গত ৪ মাস আগেই পলিসির নাম ও নম্বরসহ ব্যাংক হিসাব কোম্পানির কাছে দাখিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করেনি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স।

তিনি আরো জানান, আমাদের এলাকায় এখন আর সানলাইফের কোন কার্যক্রম নেই। তবে মেহেরপুরের দায়িত্বে ছিলেন সেলিম রেজা। তিনি সানলাইফের জোনাল ম্যানেজার। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কুষ্টিয়া অফিসে কথা বলে আমাদের জানিয়েছেন, নতুন করে ১০ হাজার টাকার পলিসি না করলে তারা টাকা দেবে না।

মেহেরপুর জেলার প্রায় ৩০০ গ্রাহকের দাবি আদায়ে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন মেহরপুর নিমতলা জজ কোর্টের আইনজীবী মেহেরুন নেসা মনি।

তিনি ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে বলেন, শুধুমাত্র ৩০০ গ্রাহকই নয়, আরো অনেক রয়েছে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যারা গরীব এবং অশিক্ষিত। সানলাইফের ইসলামী আসান প্রকল্পের আওতায় বীমা করে শেষ সঞ্চয়টুকু হরাতে বসেছেন তারা। তবে লিগ্যাল নোটিশের পরও দাবি পরিশোধ না করলে মামলা করা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।

মেহেরপুর নিমতলা জজ কোর্টের আরেক আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, বীমা দাবি আদায়ে আমি প্রায় একশ' গ্রাহকের পক্ষে কোম্পানিটিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। আমি ছাড়া অন্তত ৬ আইনজীবী ৪ শতাধিক গ্রাহকের পক্ষে কোম্পানিটিকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে। তবে এখনো কারো দাবি পরিশোধ হয়নি বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

অন্যদিকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষকে এককভাবে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান মেহেরপুর জজ কোর্টের আইনজীবী এ কে এম জিল্লুর রহমান। মেহেরপুরের শিশিরপাড়ার ৬ বীমা গ্রাহকের পক্ষে গত ৪ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে তিনি এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে বলেন, আমাদের কাছে লিগ্যাল নোটিশ এসেছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে লিগ্যাল নোটিশ আসলে তার জবাব আমরা দিয়ে থাকি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে তার গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়।

তবে বীমা দাবি পাওয়ার ক্ষেত্রে লিগ্যাল নোটিশের চেয়ে গ্রাহকের আবেদন বেশি কার্যকর হয়। কারণ গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি। গ্রাহক টাকা না পেলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যায়। আর লিগ্যাল নোটিশের ক্ষেত্রে এর জবাব প্রদান এবং কোম্পানিকে চিঠি দেয়া হয়। গ্রাহক টাকা পেল কিনা তা জানা যায় না। তাই পরবর্তী কোন পদক্ষেপও নেয়া যায় না, বলেন গকুল চাঁদ দাস।

এ বিষয়ে জানতে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান প্রফেসর রুবিনা হামিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি বাইরে আছেন উল্লেখ করে কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।

কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম শরীফুল ইসলামের কাছেও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।