মিয়া ফজলে করিমের অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিয়া ফজলে করিমের অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'কে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। উপসচিব মো. সাঈদ কুতুব চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
সূত্র মতে, মিয়া ফজলে করিম মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা-২০১২ এর শর্ত পূরণ না করলেও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। মিয়া ফজলে করিম শিক্ষাগত যোগত্যার শর্ত পুরণ করেননি। অন্যদিকে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাও তার নেই।
মিয়া ফজলে করিমকে ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ১৮ নভেম্বর ৩ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত তার নিয়োগ অনুমোদন করে আইডিআরএ। অনুমোদন পত্র নং বী:উ:নি:ক/নন-লাইফ/২২০৩/২০১৩-৩৮৭৬- তারিখ- ১৮ নভেম্বর, ২০১৫।
তবে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্ম অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ করেননি মিয়া ফজলে করিম, এমন অভিযোগ রয়েছে।
মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ ’এর শর্তানুসারে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে অন্যুন ৩ বছর মেয়াদি স্নাতক ও ১ বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ৪ বছরের স্নাতক ও সমমানের ডিগ্রি।
অন্যদিকে কোন স্বীকৃত পেশাগত ডিগ্রি যেমন একচ্যুয়ারি, এসিআইআই, সিএলইউ, সিএ বা এফসিএ, এসিসিএ, আইসিএমএ, সিএফএ, সিপিএ ইত্যাদি ডিগ্রি বা পদধারীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা যাবে।
এই আইনের ভাষ্য মতে, এ সমস্ত স্বীকৃত পেশাগত ডিগ্রি শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তের পরিপূরক নয়।
অথচ মিয়া ফজলে করিম ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত জগন্নাথ কলেজ থেকে একাউন্টিং এ দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক (বিকম অনার্স) পাস করেন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) থেকে তিনি চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ডিগ্রি লাভ করেন।
সে হিসেবে তিনি প্রবিধানে নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূর্ণ করেন না।
মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ এর শর্তানুসারে, মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ পেতে একই ধরণের কোন কোম্পানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে অন্যূন ৩ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে মিয়া ফজলে করিম ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারণের স্বপক্ষে ৩টি সনদ দাখিল করেছেন। ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কুমার সাহা এবং এএমডি এন্ড সিএফও আবদুল হামিদ ওই ৩টি সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
রীতি অনুসারে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারীর সার্টিফিকেট সর্বোচ্চ পদধারী তথা মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করার কথা।
কিন্তু এসব সনদে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (ডিএমডি) এন্ড চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অথচ ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ওয়েবসাইট-এ ২০১১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ রয়েছে এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বা এএমডি। এ পদের দায়িত্বে রয়েছেন অরুণ কুমার সাহা।
ডিএমডি হিসেবে রয়েছে ৪ জন। এদের মধ্যে মিয়া ফজলে করিমের নাম নেই।
২০১১ সালে যেহেতু কোম্পানির ২য় সর্বোচ্চ পদ এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর রয়েছে সেক্ষেত্রে ডিএমডি ২য় সর্বোচ্চ পদ হতে পারে না।
একইভাবে ২০১২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা যায়, কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পরের পদ এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বা এএমডি। ওই পদের দায়িত্বে রয়েছেন অরুণ কুমার সাহা।
ডিএমডি পদে কোম্পানিটির সিএফওসহ ৫ জনের নাম রয়েছে। এখানে মিয়া ফজলে করিমের নাম নেই। ২০১২ সালে কোম্পানিটির সিএফও হিসেবে আব্দুল হামিদের নাম রয়েছে।
অথচ মিয়া ফজলে করিম কোম্পানিটির ডিএমডি ও সিএফও ছিলেন ,এমন দাবী সঠিক নয় বলেই প্রমান হয়।
এসব বিষয়ে মিয়া ফজলে করিম ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'কে বলেন, আমি ৩ বছরের অনার্স করেছি। তবে মাস্টার্স করিনি। এফসিএ করেছি। এফসিএ ডিগ্রিকে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করেছে আইডিআরএ।
বীমা আইন অনুসারে অনার্স ৩ বছরের হলে সঙ্গে ১ বছরের মাস্টার্স বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে এফসিএ শিক্ষাগত যোগ্যতার এই শর্ত পূর্ণ করে কি না, এমন প্রশ্নে মিয়া ফজলে করিম বলেন, আমাকে আইডিআরএ নিয়োগ দিয়েছে। তাই বিষয়টি সম্পর্কে তারাই বলতে পারবে।
সিইও'র অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ইষ্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে আমি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএমডি এন্ড সিএফও ছিলাম। যা কোম্পানিটির দ্বিতীয় পদ।
তবে কোম্পানিটির ২০১১ ও ২০১২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ডিএমডি বা সিএফও পদে আপনার নাম নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কোম্পানির কোন ধরণের ভুল। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।