বীমাখাত উন্নয়নে তদারকি জোরদার করেছে আইডিআরএ

আবদুর রহমান আবির: বীমাখাত উন্নয়নে তৎপর হয়ে উঠেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । নিয়ন্ত্রণের চেয়ে উন্নয়নের দিকেই তারা বেশি নজর দিচ্ছে। উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এবার তারা নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। নিয়ম করে তারা বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ব্যবসায়িক তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি করছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন।

শুধু মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেই থেমে থাকছে না সংস্থাটি। এর ওপর ভিত্তি করে বীমা কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী ও মালিকদের সাথে নিয়মিত বৈঠকে বসছেন আইডিআরএ’র শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা। কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ও আর্থিক অবস্থা এসব বৈঠকে তুলে ধরা হচ্ছে। সেই সাথে জবাব দিহীতা নিশ্চিত করতে অসঙ্গতিগুলো চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা নেয়া হচ্ছে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে।

আইডিআরএ’র এসব কর্মকাণ্ডে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বীমা দাবি পরিশোধ, ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, সরকারের রাজস্ব আয় ও কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত মজবুত করা। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সংস্থাটি একটি গবেষণা সেলও গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে আইডিআরএ প্রথম প্রান্তিক এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪টি সমন্বয় সভা করেছে। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকের মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে তা সকল কোম্পোনির কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে বীমা কোম্পানির উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত বিষয়ে ব্যাখা নিয়েছে।

অপর দিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর সমন্বয় সভা হয়েছে। সভায় চিহ্নিত অসঙ্গতি তুলে ধরা হয় এবং এসব অসঙ্গতি থেকে বের হয়ে আসার উপায়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকের মূল্যায়ন প্রতিবেদন এখনো কোম্পানিগুলোর কাছে পাঠানো হয়নি।

বীমাখাতের উন্নয়নে জনগণের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তন করে ইমেজ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করাই বৈঠকের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে আইডিআরএ’র এ ধরণের পদক্ষেপ বীমাখাতে উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব রাখবে বলে মনে করছে বীমা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এতে করে কোম্পানির মালিক ও শীর্ষ নির্বাহীদের মাঝে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পরবে। তারা মনস্তাত্বিকভাবে পরিবর্তনে এগিয়ে আসবে।

তথ্য অনুসারে, লাইফ এবং নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে আইডিআরএ’র চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয় ৪ জুন। আর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৬ আগস্ট। এসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। এতে বীমাকারীর ব্যবসায় কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন সম্পর্কিত পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) খলিল আহমদ।

এসব বৈঠকে লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম আয়, পলিসির সংখ্যা, মার্কেট শেয়ার, লাইফ ফান্ড, সম্পদ, বিনিয়োগ, তামাদি পলিসি, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, দাবি নিষ্পত্তি, পরিশোধিত মূলধন, অনুত্তীর্ণ ঝুঁকি সঞ্চিতি, কমিশন হার, রিজার্ভ, পুনর্বীমা ব্যালেন্স, পরিচালনা পর্ষদ এবং বীমা আইন সংক্রান্ত বিধি-প্রবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়াও প্রথম ত্রৈমাসিক বৈঠকের পর গত ২ আগস্ট নন-লাইফ বীমাকারীর পরিচালনা পর্ষদ গঠন, পুনর্বীমা ব্যালেন্স সম্পর্কে মতামত প্রদান, মোট রিজার্ভের চেয়ে বিনিয়োগ ঘাটতি, অনুমোদিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থানা ব্যয়ের ব্যাখ্যা, অনুত্তীর্ণ ঝুঁকি সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে এবং পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পরিপালন না করার কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয় বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

একই সঙ্গে লাইফ বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন, পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পরিপালন না করা, পলিসি তামাদির কারণ ও চাহিদা মোতাবেক তামাদি পলিসির তথ্য প্রদান না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ দাবিসহ অন্যান্য দাবি অনিষ্পন্ন থাকা, লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক, প্রিমিয়াম সংগ্রহ কম, এবং অনুমোদিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয় আইডিআরএ।

বীমা কোম্পানিগুলোকে ৭ দিনের সময় দিয়ে আইডিআরএ’র পাঠানো এসব চিঠির জবাবও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। এরপর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা। ওই সভায় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক বীমা ব্যবসার দক্ষতার মূল্যায়ন, বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহের অগ্রগতির পর্যালোচনা, বিগত সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রদানকৃত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ব্যাখ্যার জবাব বিশ্লেষণ করা হয় বলেও জানা গেছে।

এসব বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। বীমাকারীরা চেষ্টা করছে তাদের দুর্বলতাগুলো দূর করার। তবে বছর শেষে আমরা বুঝতে পারব কতটা অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার জন্য। তবে জনবল কম থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী আমারা কাজ করতে পারছি না। বীমা কোম্পানিগুলো সরাসরি পরিদর্শন ছাড়াও তারা যেসব তথ্য আমাদের সরবরাহ করছে সেগুলো যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এতো অল্প জনবল নিয়ে আমরা পেরে উঠছি না।তবে আমরা চেষ্টা করছি, বলেন গকুল চাঁদ দাস।