কুমিল্লার মামলায় বাদীর সঙ্গে রুপালী লাইফের আপোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লায় দায়ের হওয়া অর্থ আত্মসাৎ মামলার বাদীর সঙ্গে আপোষ করেছে বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি রূপালী লাইফ। এ আপোষনামা দাখিল করায় আসামিদের জামিন দিয়েছেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে ১৩ মার্চ এক আপোষ রফা বৈঠকে বিষয়টি সুরাহা করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন ১৪ মার্চ ধার্য্য তারিখে আদালতে এ আপোষনামা দাখিল করে জামিন নেন মামলার আসামিরা। কোম্পানিটি সব দাবি মেনে নেয়ায় এ আপোষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মামলার বাদী মো. ছারোয়ার আলম পাঠান।
জমা করা প্রিমিয়াম, বেতন-ভাতা, কমিশন, কার্যালয়ের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, টিএডিএ বিল ও দাফতরিক খরচ বাবদ ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০১৩ সালের ১১ জুন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন ছারোয়ার আলম।
এ মামলায় আসামি করা হয় রূপালী লাইফের তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া (বর্তমানে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যূরেন্সের মূখ্য নির্বাহী), উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল (বর্তমানে যমুনা লাইফের মূখ্য নির্বাহী), উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসনও সংস্থাপন) গোলাম কিবরিয়া (বর্তমানে রুপালী লাইফের মূখ্য নির্বাহী), সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা (অর্থ ও হিসাব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধরকে। মামলা নম্বর ৫৭২/১৩।
১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বৈঠকের আপোষ নামায় স্বাক্ষর করেন বাদী মো. ছারোয়ার আলম পাঠান ও তার আইনজীবী এসটি আহমেদ ফয়সাল। অন্যদিকে আসামি নূর মোহাম্মদ ভূইয়া, বিশ্বজিত কুমার মণ্ডল, মো. গোলাম কিবরিয়া, মো. নজরুল ইসলাম, প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধর ও তাদের আইনজীবী আবু তাহের এতে স্বাক্ষর করেন।
আপোষ নামায় যা বলা হয়েছে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো- দরখাস্তকারি বাদী/ বিবাদীর পক্ষে নিবেদন এই যে বিগত ১৩/০৩/২০১৭ তারিখে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবু তাহের সাহেবের বাসভবনে পক্ষদের ও তাদের নিয়োজিত আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এক আপোষ রফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আপোষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতিমধ্যে বাদী কর্তৃক হেড অফিসে জমাকৃত ৭০৯টি ডিসিএস কোম্পানি কম্পিউটার ডাটাবেজে পোস্টিং দেয়া আছে এবং বাকী ৩টি ডিসিএস ১ মাসের মধ্যে পোস্টিং দেয়া হবে এবং কুমিল্লা বিভাগীয় অফিসসহ অনুমোদিত অফিসের ভাড়া বাদী বরাবর পরিশোধ করা হবে।
কুমিল্লা বিভাগীয় অফিসের বিদ্যুৎ বিল ৩০ জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত পরিশোধ করা হবে অর্থাৎ ৩০০ টাকা করে ২৭ মাসের (৩০০x২৭) টাকা বা ৮ হাজার ১০০ টাকা। কুমিল্লা বিভাগীয় অফিসের ক্যাশিয়ার লুৎফা আক্তারের ১৭ হাজার ৯০৬ টাকা বকেয়া বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড যদি পাওনা হয় এবং উক্ত অফিসের পিয়নের ৫ হাজার ২৫০ টাকা বকেয়া বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড পাওনা পরিশোধ করা হবে।
বীমা গ্রাহক মো. রনি (বাবু) পলিসি নং ৬০১৮০১৫০৭-৭ এর মৃত্যু দাবি পরিশোধ করা হবে বিধিমত পাওনা হলে এবং বাদীর চাকরিকালীন টিএ/ডিএ মেডিকেল বিল ও অফিস খরচ যদি চুক্তি বা বিধি অনুযায়ী পাওনা থাকে তা পরিশোধ করা হবে এবং মাঠকর্মী সেলিমা পারভীন চৌধুরী ও তার ছেলে বীমা গ্রাহক রিফাত হোসেন ও তাদের দায়েরকৃত জিডি মামলা এবং বাদী সরওয়ার আলমসহ সকল মামলার প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোম্পানির প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। বাদীর সাংগঠনিক কোড সেটাপে অদ্য পর্যন্ত যত প্রিমিয়াম জমা হয়েছে তার ন্যায্য কমিশন বাবদ প্রাপ্য যদি বিধি মোতাবেক পাওনা হয় প্রদান করা হবে।
বাদী সরওয়ার আলম পাঠান তার স্ত্রী লুৎফা আক্তারের নিকট কোম্পানির পিআর বই ও প্রয়োজনীয় কাগজ যা জমা আছে তা ফেরত দেবে। বাদীর বা তার স্ত্রী কোন কাগজ বা চেক থাকলে কোম্পানি ফেরত দেবে। কোম্পানির পিআর বই ব্যবহার করে বাদী বা তার স্ত্রী নতুন কোন বীমা চুক্তি করলে সে দায়ভার কোম্পানির উপর বর্তাবে না এবং মামলার উল্লেখিত ডিসিএস বহির্ভূত কর্তনকৃত কোন পিআর এর দায়ভার কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বহন করবে না, বাদী ছারোয়ার আলম পাঠান ও তার স্ত্রী লুৎফা আক্তার নিজ দায়িত্বে বহন করবে। উপরোক্ত বিষয়সমূহ নিষ্পত্তি হলে বাদী তার মামলা প্রত্যাহার করে নেবে।