তবুও ৬ বছর ধরে মূখ্য নির্বাহী সানাউল্লাহ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মো. সানাউল্লাহ দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ১৯৮৪ সালে। এরপর পড়ালেখায় বিরতি টানা ১৩ বছর। ওই সময়ে তিনি বীমা কোম্পানির এভিপি, ভিপি ও এসভিপি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। 

এরপর তিনি ২০০২ সালে অনার্স ও ২০০৩ সালে মাস্টার্স করেন ইসলামের ইতিহাসে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে তিনি এ ডিগ্রি নেন। মাস্টার্স করার ৯ বছর পর ২০১৩ সালে মে মাসে বীমা কোম্পানির সর্বোচ্চ পদ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সে মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তার বেতন ধরা হয় আড়াই লাখ টাকা, সাথে জ্বালানীসহ গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা।  

উচ্চমাধ্যমিক পাস করার ২০ বছর পর এমএ পাস করা বা শিক্ষাজীবনে দ্বিতীয় বিভাগ থাকা মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ এর পরিপন্থী নয়। তবে শর্ত হলো সংশ্লিষ্ট খাতে মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যা মো. সানাউল্লাহর নেই। 

মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ এর ৩(খ) বিধিতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা উহার অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর কর্ম অভিজ্ঞতাসহ যে শ্রেণীর বীমার জন্য কোন ব্যক্তিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করা হবে, অনুরূপ শ্রেণীর বীমা ব্যবসায় অন্যূন ১৫ (পনের) বৎসরের কাজের অভিজ্ঞতা; 

সূত্র মতে, বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দেন বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। আর নিয়োগ আইন অনুসারে বা যোগ্যতার শর্ত মেনে দেয়া হলো কিনা তা যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দেন বীমাখাতে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।  আর তাই আইন অনুসারে অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করার পরও কি করে মো. সানাউল্লাহকে মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

সানাউল্লাহকে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের পূর্ব অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার। আবেদনটি করা হয় ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১৫ মে থেকে সানাউল্লাহকে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন দেয় আইডিআরএ।  এরপর ২০১৬ সালে তাকে আবারো ৩ বছরের জন্য মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়।  চলতি বছরের ১৫ মে তার নিয়োগের এ মেয়াদ শেষ হয়েছে।

আইডিআরএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, আবারো ৩ বছরের জন্য অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজীবী আবদুল বাসেত মুজমদার।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে মো. সানাউল্লাহ এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকরি করতেন।  সানাউল্লাহ এ পদে চাকরি করেছেন মাত্র ১ বছর ১১ মাস ১৯ দিন। 

এ ছাড়া তার মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে চাকরির আর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। 

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দাখিল করা সানাউল্লাহ’র জীবন বৃত্তান্তেই এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ অদৃশ্য কারণে তা আমলে নেয়নি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বীমাখাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেন, সরকারি এ সংস্থার এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে অযোগ্য অনেক ব্যক্তিকেই মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছেন। আবার ৩ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেককেই মূখ্য নির্বাহী পদে চলিত দায়িত্ব নিয়ে ৩ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণের পর অনুমোদন পেয়েছেন।  নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন দ্বিমূখী আচরণের বিষয়ে অভিযোগও করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, টাকা দিলে অনেক কিছুই সম্ভব এ খাতে।

জানা যায়, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের শুরু থেকেই অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদ।  সানাউল্লাহ’র আগে এ পদে ছিলেন রেজাউল কবির।

রেজাউল কবিরের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তিনি ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এখন তিনি ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের ডিএমডি হিসেবে কর্মরত।

সানাউল্লাহ এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সে নিয়োগ পান ২০০৭ সালে। এর আগে তিনি নর্দান ইন্স্যুরেন্সে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। নর্দান ইন্স্যুরেন্সে মো. সানাউল্লাহ নিয়োগ পান ১৯৯৬ সালে এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিন্টে হিসেবে। ১৯৮৯ সালে অফিসার পদে নিয়ো নেয়ার মধ্য দিয়ে বীমা পেশা শুরু করেন সানাউল্লাহ।

এ বিষয়ে মো. সানাউল্লাহ ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র কাছে দাবি করেন, এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অথবা ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ বলেন, কেউ যদি মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্নের পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই মূখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন তাহলে আইনের ব্যত্যায় হবে।

কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের আবেদনে অব্যবহিত নিম্নপদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে মো. সানাউল্লাহ’র ক্ষেত্রে সেটি কি অবস্থায় ছিল তা আমরা খোঁজ নিয়ে জানাবো।