খামারিদের আর্থিক সুরক্ষায় ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের প্রাণী বীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক: খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাণী বীমা চালু করেছে বেসরকারি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সনাক্তকরণের মাধ্যমে গবাদি প্রাণীর সঠিক অবস্থান ও স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রাণী সম্পদের সার্বিক উন্নয়ন এই বীমা পরিকল্পের লক্ষ্য। এ ধরণের বীমা পরিকল্প বাংলাদেশে এটিই প্রথম বলে জানিয়েছে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানিটির তথ্য মতে, প্রাথমিকভাবে গরু ও মহিষ এই বীমার আওতায় থাকবে। বীমাকৃত প্রাণী চুরি বা হারিয়ে গেলে এবং দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দেবে বীমা কোম্পানি। এ ছাড়াও স্থায়ীভাবে পূর্ণাঙ্গ পঙ্গু হলে এবং মানবিক কারণে গাবাদি প্রাণী বিনাস করা হলেও ক্ষতিপূরণ পাবেন খামারি। প্রতিটি বীমাকৃত প্রাণীর সর্বোচ্চ বীমা অংক হবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

গবাদি প্রাণীর মোট মূল্যের ওপর বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে স্কিম এনিমেল বা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক প্রণোদনা প্রাপ্ত প্রাণীর মৃত্যু ঝুঁকিতে বছরে প্রিমিয়াম দিতে হবে ২.৭৫ শতাংশ। আর স্থায়ীভাবে পূর্ণাঙ্গ পঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম দিতে হবে ১ শতাংশ। তবে স্কিম এনিমেলের ক্ষেত্রে চুরি বা হারানোর ঝুঁকি গ্রহণ করা হয় না।

অন্যদিকে নন-স্কিম এনিমেল বা সরকারি প্রকল্পের বাইরে গরু-মহিষের মৃত্যু ঝুঁকিতে বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৫০ শতাংশ। চুরি বা হারানোর ঝুঁকিতে প্রিমিয়াম ২.২৫ শতাংশ এবং স্থায়ীভাবে পূর্ণাঙ্গ পঙ্গুতে ১.৫০ শতাংশ। আর বিদেশি গরুর ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকিতে ৪.৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হবে।  

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, জরিপ প্রতিবেদন এবং আনুসঙ্গিক কাগজপত্র কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। মৃত্যু এবং হারানো বীমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বীমাকৃত প্রাণীর সর্বোচ্চ মূল্য বা বর্তমান বাজার মূল্য পর্যন্ত পরিশোধ করা হবে। তবে প্রতিটি বীমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দাবিকৃত অংকের ওপর ১০ শতাংশ ডিডাকটেবল বা কর্তন প্রযোজ্য হবে।

দেশজুড়ে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ৩১টি শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে খামারিদের প্রাণী বীমা সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে এই বীমা গ্রহণ করা যাবে। গ্রাহকদের বীমা দাবি পাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্ববিখ্যাত পুনর্বীমা কোম্পানি সুইস রি’র সাথে পুনর্বীমা চুক্তি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কোম্পানিটি।

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের প্রাণী বীমা প্রকল্পের পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি রফিকুর রহমান ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা দিতে দেশে কোন প্রাণী বীমা ছিল না। এ কারণে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক ক্ষতির আংশঙ্কায় গবাদি প্রাণীর খামারিদের বৃহৎ আকারের কোন ঋণ প্রদান করে না।

ফলে গবাদিপ্রাণী লালন-পালনের সাথে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ কৃষক ও খামারিরা তাদের খামারে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এবং জখম, অসুস্থতা কিংবা রোগের কারণে গবাদিপ্রাণী মারা গেলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। তাই খামারিদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান ও ঋণ প্রদানের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রথমবারের মতো দেশে এই বীমা চালু করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্র্যাকিং সিস্টেম হচ্ছে একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) বা সবযন্ত্রে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাণীর জাত নির্ণয়, সফল প্রজনন, অবস্থা শনাক্ত করা, রোগব্যধির আগাম তথ্য জানা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়।

এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অংশ হিসেবে একটি বায়োসেন্সর গবাদি প্রাণীর পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়। এই বায়োসেন্সর বা বোলাস প্রাণীর পাকস্থলী থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় তথ্য তৈরি এবং প্রদান করে। এই বোলাস গবাদি প্রাণীর পাকস্থলিতে অন্তত ৫ বছর কার্যকর থাকে এবং গবাদি প্রাণীর দেহে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

এই প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি এবং জার্মান এগ্রিকালচার সোসাইটি (ডিএলজি) কর্তৃক অনুমোদিত। প্রকল্পটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেরও (বিটিআরসি) অনুমোদনপ্রাপ্ত।