খুলনা বীমা মেলায় আইডিআরএ চেয়ারম্যান

দূর হচ্ছে আস্থার সঙ্কট, বীমা একদিন মহৎ পেশা হিসেবে পরিগণিত হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেছেন, গত তিন বছরে বীমাখাতে অনেক ডেভেলপমেন্ট ঘটেছে। আমাদের যে আস্থার সংকট ছিল তা কটিয়ে উঠছে। বিদেশে বীমার টাকা সাথে সাথে পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এটি হবে। বীমা একদিন মহৎ পেশা হিসেবে পরিগণিত হবে।

তিনি বলেন, আস্থার সংকট দূর করার জন্য বিগত দিনগুলোতে আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। তার মধ্যে একটি বীমা মেলা। এর আগে আমরা ২০১৬ তে ঢাকায় এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামে ও সিলেটে বীমা মেলা করেছি। আমরা খুলনাতে এতো বড় মেলা করতে পেরেছি, এতে আমরা আনন্দিত।

আজ শুক্রবার খুলনা বীমা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মাঝে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন, এ জন্য আমরা আনন্দিত। আজকে যে আস্থার সংকট তার জন্য শুধু বীমা কোম্পানি নয় গ্রাহকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা অনেক অভিযোগ পাই। গ্রাহক বীমা করছে ৭ বছর, কোন টাকা পেমেন্ট করে নাই। এরপর তিনি অভিযোগ করেন আমি টাকা পাচ্ছি না। টাকা ঠিকভাবে জমা করলে টাকা পাওয়ার কোন সমস্যা হয় না। তাই তাদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব আছে।

তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি নিজে মাঠ পর্যায়ে বীমার চেক বিতরণ করি। এর উদ্দেশ্য একটাই সাধারণ মানুষের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনা। বীমার উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকের আস্থার সংকট বৃদ্ধি। আজ মেলায় আমরা কোটি কোটি টাকার চেক দিলাম। তাই আজ সবাই দেখেছে যে, বীমা করলে টাকা পাওয়া যায়। এতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। এটাই প্রচারণার জন্য আমরা খুলনায় মেলার আয়োজন করেছি। এ মেলা আমরা দেশের অন্যান্য শহরেও করব।

শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে আমাদের পরিবাবের সদস্য মনে করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি তার প্রথম জীবনে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি পূর্ব পকিস্তানের ব্যুরো প্রধান ছিলেন। তার চাকরিতে যোগদানের তারিখটি আমরা পেয়েছি ১ মার্চ ১৯৬০। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, এবারই প্রথম জাতীয় বীমা দিবস উৎযাপন হবে ১ মার্চ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি গভীরভাবে দাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন তিনি থাকবেন। আর এসব কারণেই বীমার প্রতি আমাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে বীমা পরিবারে সদস্য মনে করেন। তাই বীমার প্রসার ও উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনার জানেন আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার প্রবাসী বীমা চালু করেছি। আমরা হাওর এলাকায় শষ্য বীমা চালু করব। সরকারি কর্মচারিদের জন্য স্বাস্থ্যবীমার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই চলছে। জনসাধারণের জন্য আমরা শিগগিরই স্বাস্থ্যবীমার কার্যক্রম শুরু করবো। আমরা জনগণের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করবো।

তিনি আরো বলেন, আমরা মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু করবো। আমরা জানি যে, কোনো ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা দেশের সকল ভবনের জন্য ভবন বীমা চালু করবো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে ভবনের বীমা করতে হবে।

শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আরো একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। তা হলো- অনলাইন চালু করা। আমরা অভিযোগ পাই ৮ কিস্তি জমা করে ৪ কিস্তি পেয়েছে । এটা আর এখন হবে না। এর কারণ ৭৮টি কোম্পানির ৭৮টি সারভার থাকবে। আর এর মূল সারভার থাকবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে। প্রত্যেক গ্রাহক তাদের প্রিমিয়াম কত, তারা কত টাকা জমা দিয়েছেন, কবে ম্যাচুরিটি হবে তার তথ্য থাকবে। এটা আমরা জানবো, গ্রাহক জানবে, কোম্পানি জানবে। কাজেই ফাঁকির কোন সম্ভাবনা আর নাই। তাই বীমা আজকে যে অবস্থায় আছে তার আরো প্রসার ঘটবে আরো উন্নয়ন হবে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বে রোল মডেল, উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি ইতোমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। ২০৩১ সালে এলডিসি, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ। আর ২০২১ সালে হবো মধ্যম আয়ের দেশ। কাজেই এসব বাস্তবায়নে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। সব সেক্টরেই এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে। তবে বীমা সেক্টরের এটি বেশি। এর কারণে তিনি নিজেকে বীমা পরিবাবের সদস্য মনে করেন। তাই আমি বলবো- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আসুন আমরা সবাই এগিয়ে যাই।