করোনা মহামারীতে বিপাকে কমিশন ভিত্তিক বীমা কর্মীরা

আবদুর রহমান আবির: বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের মহামারী। সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই প্রেক্ষিতে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান সাধারণ ছুটি বর্ধিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ রয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান।

এদিকে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির কমিশন ভিত্তিক এজেন্টরা। দীর্ঘ এই বন্ধে বীমা শিল্পের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস শেষে বেতন-ভাতা পেলেও কোন কমিশন পাবেন না এসব এজেন্ট। নিয়ম অনুসারে বীমা পলিসি বিক্রির নির্ধারিত কমিশনের বাইরে তাদের কোন বেতন-ভাতা নেই।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি ৭৮টি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। নতুন আরেকটি লাইফ বীমা কোম্পানি সম্প্রতি অনুমোদন লাভ করেছে। এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্টসহ এসব বীমা কোম্পানির বিভিন্ন পদে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ নারী-পুরুষ।

২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে দেশের ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানির এজেন্ট সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৫১। আর এমপ্লয়ার অব এজেন্ট রয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ১৭৮। অন্যদিকে ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির এজেন্ট সংখ্যা ২ হাজার ৬০৭। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বর্তমানে এজেন্ট ও এমপ্লয়ার অব এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে।

বীমা এজেন্টরা বলছেন, নতুন পলিসি বিক্রির বাইরে নবায়ন প্রিমিয়াম থেকে কিছু কমিশন আসলেও তার পরিমাণ খুবই কম। তবে করোনা ভাইরাসের এই মহামারীতে সব অফিস বন্ধ থাকায় নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহেরও কোন সুযোগ নেই। আর প্রিমিয়াম জমা না হলে কোন কমিশন পাওয়ারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় চরম হতাশায় পড়েছেন এসব বীমা এজেন্ট।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বীমা এজেন্ট (এফএ) মজিবুর রহমান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির সব কর্মকর্তার নির্দিষ্ট বেতন আছে। করোনা মহামারীতে তারা কাজ না করলেও মাস শেষে বেতন পাবেন। কিন্তু বীমা এজেন্টরা কাজ না করলে কোন টাকা পাবেন না। ঘরে থাকার এই সময়ে কোম্পানিও তো আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, আইডিআরএ’র নিয়ম অনুসারে বিসি ও ব্রাঞ্চ ইনচার্জদের নির্দিষ্ট বেতন দেয়ার কথা। কিন্তু ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বিসি ও ব্রাঞ্চ ইনচার্জদের সুনির্দিষ্ট কোন বেতন-ভাতা নেই। কমিশনের ভিত্তিতেই তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে। আবার যাদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে তাদের বেতন দেয়া হয় না। আমরা কিভাবে টিকে থাকবো, সেটা তো কাউকে ভাবতে হবে।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র ফেসবুক পেইজে সাইয়্যেদা ইয়াসমিন নামে একজন বীমা কর্মী লিখেছেন, বীমা কোম্পানি খোলা থাকলেও কি? আর বন্ধ থাকলেও কি? বীমা কোম্পানি তে বীমা প্রতিনিধি বা বীমা এজেন্ট যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদেরকে কোন বেতন দেয়া হয় না, শুধুমাত্র কমিশনের উপর ভিত্তি করে তাদের জীবন চলে।

এমতাবস্থায় এই দূর্যোগের দিনে বীমা কর্মীদের (জীবন বীমা) জীবন রক্ষা করার জন্য অফিস ঠিকই বন্ধ, কিন্তু তাদের জীবন-সংসার কিভাবে চলছে কোম্পানি কি একটি বারও তা ভাবছে? তারা তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারবে না। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ) এর যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

রাজিব খান নামে আরেকজন লিখেছেন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবীরা বেতন-ভাতা পাবে। আর যারা উন্নয়ন কর্মকর্তা তাদের কি হবে? কোম্পানি বা সরকারের পক্ষে থেকে তাদের জন্য কোনো সুখবর আছে কি?

এম এ হাসান নুর লিখেছেন, ছুটি দিলে কি করে বীমা উন্নয়ন কর্মীদের দিনকাল চলবে? এই সময়ে কি আর বীমাপত্র বিক্রি হবে? তাই আপনাদের বীমার শিল্পের মুখপাত্র হিসেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের বিশেষ প্রণোদনা সহায়তা একান্ত কাম্য। নয়তো সবাই হতাশা ও চরম অনিশ্চয়তায় মানবেতর জীবনযাপন করবে।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র ফেসবুক পেইজে প্রণব চাকমা নামে আরকজন লিখেছেন, মাঠ পর্যায়ে বীমা প্রতিনিধিরা এই মহামারিতে কেমন করে দিন কাটাচ্ছে বীমা প্রতিষ্ঠান কোন খবর রাখে না।

এইচএম আনোয়ার নামে আরেকজন লিখেছেন, বীমা কর্মীরা না খেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে আছে কোন কোম্পানি কি খবর নিচ্ছে?

আমি শান্ত নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একজন লিখেছেন, ‘মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের একটু খোঁজ খবর রাখেন, শুধু এই সেই, কইরা পেট ভরব না’।