ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, নন-লাইফে সর্বোচ্চ মুনাফা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে বেসরকারি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয়। কার্যকর অবলিখনের কারণে কোম্পানিটিতে বীমা দাবির পরিমাণও কমে এসেছে। গেলো বছর দেশের নন-লাইফ বীমায় কোম্পানিটি সর্বোচ্চ মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। কাজের সফলতায় কোম্পানিটি এরইমধ্যে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পদক ও স্বীকৃতিও অর্জন করেছে। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং কোম্পানি সূত্রে পাওয়া গেছে সফলতার এই চিত্র।

প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধি ১১.৭১%

তথ্য অনুসারে, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ২০১৯ সালে গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছে ৩শ’ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা আগের বছর ২০১৮ সালের চেয়ে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা বা ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। সে বছর গ্রস প্রিমিয়াম আয় ছিল ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি অগ্নি বীমায় ১৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, নৌ-কার্গো বীমায় ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, নৌ-হাল বীমায় ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা, মটর বীমায় ২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং অন্যান্য বীমায় ৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে।

ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমেছে ২.১৪%

প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা ব্যয়। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ব্যয় করেছে ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা আলোচ্য বছরে সংগৃহীত গ্রস প্রিমিয়ামের ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ৪২ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ব্যবস্থাপনা খাতে, যা গ্রস প্রিমিয়ামের ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। সে হিসাবে ২০১৯ সালে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা খরচ কমেছে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।

কমেছে বীমা দাবি উত্থাপন

কার্যকর অবলিখনের কারণে লোকসানের অনুপাত তথা বীমা দাবি উত্থাপন কমেছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটিতে সর্বনিম্ন বীমা দাবি উত্থাপন হয়েছে, নেট প্রিমিয়ামের ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বা ১৭ কোটি ৫৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে বীমা দাবি ছিল নেট প্রিমিয়ামের ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। অর্থাৎ গেলো বছর কোম্পানিটির লোকসানের অনুপাত বা বীমা দাবি উত্থাপন কমেছে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের গ্রস ক্লেইমের পরিমাণ ৬৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

বেড়েছে বিনিয়োগ আয়

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে  কোম্পানিটি বিনিয়োগ ও অন্যান্য খাতে সর্বমোট আয় করেছে ৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যা আগের বছর ২০১৮ সালের চেয়ে ১২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। সে বছর কোম্পানিটির এই আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮৭ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৯৯ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

কর পূর্ব মুনাফা বেড়েছে ২২%

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করে আসছে। সবশেষ ২০১৯ সালে কোম্পানিটির কর পূর্ব নেট মুনাফা হয়েছে ৮৪ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা ২০১৮ সালের চেয়ে ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। সে বছর কোম্পানিটির কর পূর্ব নেট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির কর পরবর্তী নেট মুনাফা হয়েছে ৫৮ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির কর পরবর্তী নেট মুনাফা ছিল ৪৯ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের অর্জিত কর পূর্ব ও কর পরবর্তী মুনাফা দেশের নন-লাইফ বীমায় সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বীমা কোম্পানিটি।

ব্যবসা সফল রিলায়েন্সের স্বীকৃতি

১৯৮৮ সালে অনুমোদন পাওয়া রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সফলতার জন্য ২০১৯ সালে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পদক ও স্বীকৃতিও অর্জন করেছে। এরমধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) থেকে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট প্রেজেন্টেট অ্যানুয়াল রিপোর্ট-২০১৮। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) থেকে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট গভার্ন্যান্স এক্সিলেন্স, ২০১৮ এবং সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্টস (এসএএফএ) থেকে সার্টিফিকেশন অব মেরিট ফর করপোরেট গভার্ন্যান্স ডিসক্লোজার-২০১৯।

এসব বিষয়ে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ খালেদ মামুন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আমরা সব সময় গ্রাহকসেবাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তাই বীমা দাবি পরিশোধে আমরা সব সময় সচেষ্ট। শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থকেও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। বীমা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়া আমাদের অঙ্গীকার। আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইনের মধ্যে থেকেই আমরা সরকারের রাজস্ব আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশাকরি আগামীতে আরো ভালো করতে পারবো।