ব্যবসা পর্যালোচনা

প্রিমিয়াম আয় কমেছে প্রগ্রেসিভ লাইফের, কমেনি অতিরিক্ত ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছরই প্রিমিয়াম আয় কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত ব্যয়। এছাড়াও কমে গেছে সরকারি খাতের বিনিয়োগ। লাইফ ফান্ডের প্রবৃদ্ধি নেমে গেছে ১ শতাংশের নিচে। প্রগ্রেসিভ লাইফের ব্যবসা, বিনিয়োগ ও আর্থিক অবস্থার গেল ৩ বছরে চিত্র এটি।

কোম্পানিটির ৩১ ডিসেম্বর ব্যবসা সমাপনীর সাময়িক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গেল ৩ বছরে নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৪৩.২ শতাংশ, নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ১৮.০৪ শতাংশ। লাইফ ফান্ডে প্রৃবদ্ধি মাত্র .৭৬ শতাংশ। নেই আশানুরুপ বিনিয়োগও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইফ বীমা কোম্পানির মূল সমস্যা অতিরিক্ত খরচ। খরচ কমিয়ে ফান্ড বাড়াতে না পারলে কোম্পানির আর্থিক ভিত শক্তিশালী হবে না। এতে গ্রাহকদের ঝুঁকি বাড়বে।

গ্রাহকদের মুনাফা দিতে পারবে না। নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বাড়ানোর সাথে সাথে প্রিমিয়াম সংগ্রহের খরচ কমাতে হবে। সেই সাথে বাড়াতে হবে নবায়ন সংগ্রহ।

প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৪৩.২%

ব্যবসা সমাপনীর হিসাব অনুসারে, কোম্পানিটি ২০১৯ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যা ২০১৬ সালে ২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৩ বছরের ব্যবধানে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ১১ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৪৩.২ শতাংশ।

এর আগে ২০১৮ সালে ১ম বর্ষের এই সংগ্রহ ছিল ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে তা ছিল ২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। 

নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ১৮.০৪%

নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহও কমেছে ১৮.০৪%। ২০১৬ সালে কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৬৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গেলো ৩ বছরে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ১৮.০৪ শতাংশ।

এর আগে ২০১৭ সালে কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং ২০১৮ সালে তা ছিল ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ২৫.৩১%

তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে মোট প্রিমিয়াম (প্রথম বর্ষ ও নবায়ন ) সংগ্রহ ছিল ৮৯ কোটি ২ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে যা ১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা কমে যায়। মোট প্রিমিয়ামের সংগ্রহ হয় ৭৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে তা আরো ৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা কমে যায়। মোট প্রিমিয়ামের সংগ্রহ হয় ৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তা ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেড়ে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

অর্থাৎ ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা ২৫.৩১ শতাংশ।

মোট প্রিমিয়ামের ১৪.৯১% অতিরিক্ত ব্যয়

প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে গেলেও কমেনি অতিরিক্ত ব্যয়। আইন অনুসারে অতিরিক্ত ব্যয় অবৈধ। অথচ অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে পারেনি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৪৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। যা আলোচ্য সময়ে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের প্রায় ১৪.৯১ শতাংশ। এই ব্যয় করা হয়েছে কমিশন, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে।

সূত্র মতে, চার বছরে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে সর্বমোট ব্যয় করেছে ১৩০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অথচ ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে কোম্পানিটি অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা ওই বছরের মোট প্রিমিয়ামের প্রায় ১৪ শতাংশ।

২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ১২ কোটি ৭ লাখ টাকা বা মোট প্রিমিয়ামের প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ১০ কোটি ৪ লাখ টাকা বা মোট প্রিমিয়ামের ১৩ শতাংশের বেশি এবং ২০১৬ সালে ১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বা মোট প্রিমিয়ামের ১৯ শতাংশ।

লাইফ ফান্ডে গড় প্রবৃদ্ধি ০.৭৬%

সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০১৯ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফের লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ২৭৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আর গেল ৩ বছরে গড়ে লাইফ ফান্ডে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৭৬ শতাংশ। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অতিরিক্ত ব্যয় ও ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণে লাইফ ফান্ডে কোনো প্রবৃদ্ধি করতে পারছে না। তাদের মতে, লাইফ ফান্ডে আশানুরুপ প্রবৃদ্ধি না হলে কোম্পানির আর্থিক ভিত দুর্বল হয়ে পরবে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে এই ফান্ডের পরিমাণ ছিল ২৭০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা ২০১৭ সালে ২৩ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় ২৭০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর তা ২০১৮ সালে দাঁড়ায় ২৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে ১৯.৩২%

সরকারি খাতে বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবেই কমছে প্রগ্রেসিভ লাইফের। পর্যালেচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সালে এসে কোম্পানিটির সরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে ২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ১৯.৩২ শতাংশ।

তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালে কোম্পানিটির সরকারি খাতে বিনিয়োগ ছিল ১৫২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৪৯ কোটি ৯ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ১৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং সবশেষ ২০১৯ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

মোট বিনিয়োগে গড় প্রবৃদ্ধি ২.১৮%

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গেল ৪ বছরে প্রগ্রেসিভ লাইফের বিনিয়োগে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.১৮ শতাংশ।

তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা আগে বছর ২০১৮ সালে ছিল ২৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে বিনিয়োগ ছিল ২৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, তা আগের বছর ২০১৬ সালে ছিল ২৬৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এই হিসেবে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ গড়ে ২.১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ০.৭৮ শতাংশ, ২০১৮ সালে ০.৬৭ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ৫.০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে হিসাবে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ বেড়েছে ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ৬.৬০ শতাংশ।

এ বিষয়ে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) অজিত চন্দ্র আইচ ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আমি কোম্পানিতে যোগদানের পর মাত্র এক সপ্তাহ অফিস করেছি। এখনো পরিচয় পর্বের মধ্যেই রয়েছি। কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু জানার সুযোগ হয়নি। তাই এ অবস্থায় কোন মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তবে অফিসে এসে কোন বিষয় জানতে চাইলে সে বিষয়ে তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো। মোবাইল ফোনে আমি কিছু বলতে পারব না।