১০ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি মীর নাজিম উদ্দিনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইডিআরএ’র ১২৬তম বোর্ড সভায়, অর্থাৎ ১০ মাসে আগে।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে উল্টো আবারো মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদের নিয়োগ নবায়নের জন্য আলোচনা করা হয় আইডিআরএ’র সর্বশেষ সভায়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ এই ১৩০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সভায় মীর নাজিম উদ্দিনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত আবারো পেছানো হয়।

উল্লেখ্য, মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণ ও কোম্পানির রিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আইডিআরএ’র আইন বিভাগকে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স এবং প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জালিয়াতি ও অনিয়মের সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া রহস্যজনক। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এ ধরণের কর্মকাণ্ডে বিরুপ প্রভাব পড়বে বীমাখাতে।

তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ও ৭ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে সিটি সেন্টারে অবস্থিত ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং সিটি সেন্টার শাখা পরিদর্শন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সার্ভিলেন্স টিম।

পরিদর্শনে বীমা আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, গড়মিল তথ্য প্রদান, পরিচয় গোপন করে মোটা অংকের বেতনে মূখ্য নির্বাহীর ছেলেকে নিয়োগ, অবলিখন কর্মকর্তাকে এজেন্ট নিয়োগ, অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলনসহ ১০টি অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য পায় সার্ভিলেন্স টিম।

অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণসহ ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সরে বিরুদ্ধে ৬টি শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের ১২৬তম সভায়।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি অনিয়মের জন্য ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা আরোপসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, সিটি সেন্টার শাখার ব্যবস্থাপক এবং ওই শাখার অবলিখন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জরিমানা আরোপ; সিটি সেন্টারর শাখার কার্যক্রম বন্ধ; কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে পত্র প্রেরণ এবং কোম্পানি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত জরিমানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ।

তবে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তাবয়ন না করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ ১৩০তম সভায় মীর নাজিম উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া বিষয়ে আবারো আলোচনায় নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৌখিকভাবে কিছু বলতে নারাজি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, লিখিতভাবে কোন কিছু জানতে চাইলে আমি তার জবাব দিতে প্রস্তুত আছি।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।