এসবিসি’র এমডি’র বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ, সত্যতা যাচাইয়ে আইডিআরএ’র তদন্ত শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি বাড়িতে থেকেও বাড়ি ভাড়া গ্রহণ, কমিশন নিয়ে বাকীতে পুনর্বীমা ব্যবসা, টাকার বিনিময়ে কর্মচারী নিয়োগ, বিধি ভেঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকে অতিরিক্ত এফডিআর, আয়কর উপদেষ্টা নিয়োগের নামে বেতন ভাগ-বাটোয়ারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ এসব অভিযোগ করেছেন সাধারণ বীমা করপোরেশনেরই একজন কর্মকর্তা। সম্প্রতি এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’কে দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কর্তৃপক্ষের একজন সদস্যকে প্রধান করে এরইমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। তবে তার পদবি বা কোন ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি অভিযোগপত্রে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে এই অভিযোগ দায়ের করেন। আর চলতি বছরের অক্টোবরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অভিযোগটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে দুদক।
এই প্রেক্ষিতে গত ২৯ অক্টোবর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-কে বিষয়টি তদন্ত করে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ নভেম্বর কর্তৃপক্ষের সদস্য মইনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি গত ৯ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া গুলশান-১ এ এসবিসি’র বাড়িতে বসবাস করেও ৯০ হাজার টাকা বেতনের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। বিধান অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা বাসা বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করে তারা বাড়ি ভাড়া পাবেন না। এ ছাড়াও স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি বাড়িটির উন্নয়নে টেন্ডার না করেই বারবার আরএফকিউ’র মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করেছেন । এই খরচ বিধি এবং ক্ষমতা বহির্ভূত।
বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য তিনি সাধারণ বীমা করপোরেশনের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছেন এবং কোন কোন কর্মকর্তাকে তার সময় দু’বারও বদলি করেছেন। এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তিনি সহযোগিদের নিয়ে একের পর এক অন্যায় করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাধারণ বীমা করপোরেশনের হিসাব বিভাগের অনিয়মের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক তদন্ত করে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশসহ সেই সুপারিশ এসবিসি’তে প্রেরণ করলেও সে বিষয়ে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম।
বর্তমান এমডি’র আমলে পুনর্বীমার প্রিমিয়ামের টাকা সর্বাধিক বকেয়া রয়েছে উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়েছে তিনি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বিপুল অংকের কমিশন নিয়ে তাদের ছাড় দিচ্ছেন। ১১শ’ কোটি টাকা পুনর্বীমা প্রিমিয়াম বকেয়া থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও নিজের দুর্নীতি ঢাকতে পুনর্বীমা বিভাগ ও পুনর্বীমা হিসাব বিভাগ দু’টি নিজের বিশ্বস্ত ডিজিএম দিয়ে পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
সিলেকশন কমিটির সুপারিশ ছাড়াই কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে। বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে যাচাই কমিটি গঠন করে গাড়ি চালকদের লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হলেও ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীরা অনুপস্থিত ছিল। ফলে কারো নাম সুপারিশ না করেই নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে কমিটি।
কিন্তু পরবর্তীতে সবার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়ে ৪ জন লিফট অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়, যাদের নিয়োগে সরকারি কোন অনুমোদন নেই এবং তাদের পরীক্ষাও নেয়া হয়নি। এই নিয়োগকৃত কর্মচারী এসবিসি’র বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল বলে দাবি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
এসবিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার পর থেকে সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বিধি ভেঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে অতিরিক্ত এফডিআরএ করছেন। বেসরকারি ব্যাংকে ১৫ শতাংশ এফডিআরএ করার বিধান থাকলেও তিনি ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা বেসরকারি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখছেন। এতে সরকারি টাকা আদায়ের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা সৃষ্ট হচ্ছে।
এ ছাড়াও নিয়ম ভেঙ্গে কোটি টাকার জিপ গাড়ি ক্রয়, চুক্তি ছাড়াই ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য সংস্কার কাজে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়, এসআরও’র নির্দেশনা অমান্য করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম ঋণ অনুমোদন, আয়কর উপদেষ্টা নিয়োগের নামে বেতন ভাগ-বাটোয়ারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রে সাধারণ বীমা করপোরেশনের অভিযোগকারী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের পদবি বা ঠিকানা না থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার তার মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে বিষয় উল্লেখ করে তার মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন অনুবিভাগ) ও তদন্ত কমিটির দলনেতা মইনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষ হলে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। মন্ত্রণালয় তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আমাদের কিছু বলার সুযোগ নেই।