অর্থদণ্ড অপরিশোধে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা

মীর নাজিমকে অপসারণের নির্দেশ, কোম্পানি ও কর্মকর্তাদের ৯ লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। একইসঙ্গে বীমা কোম্পানিটি এবং মীর নাজিমসহ ৪ কর্মকর্তাকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। আর যথাসময়ে অর্থদণ্ড পরিশোধ না হলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা গুণতে হবে সবাইকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয় এবং সিটি সেন্টার শাখা পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রমাণ পায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সার্ভিলেন্স টিম। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শুনানিতে মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণসহ ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৮টি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা, মূখ্য নির্বাহী মীর নাজিম উদ্দিনকে এক লাখ টাকা জরিমানা, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আখতারুজ্জামানকে এক লাখ টাকা জরিমানা, সিটি সেন্টার শাখার অবলিখন কর্মকর্তা সোলায়মান মিয়াকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং ওই শাখার ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে এক লাখ টাকা জরিমানা আরোপ।

এ ছাড়াও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রমের জন্য ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের সিটি সেন্টার শাখার কার্যক্রম বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই শুনানিতে।

আর সার্বিকভাবে বীমা আইন ২০১০ ও এর বিধিবিধান এবং কর্তৃপক্ষের সার্কুলারসমূহ পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় বীমা গ্রাহকদের স্বার্থে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ প্রদান।

একইসাথে আগামী ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখের মধ্যে উল্লেখিত অর্থদণ্ডসমূহ পরিশোধের সময়সমীমা বেঁধে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধ না করা হলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই শুনানিতে।

এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়ার পর গত ১৮ নভেম্বর অর্থদণ্ড কমানো, সিটি সেন্টার শাখা বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাসহ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মূখ্য নির্বাহী মীর নাজিমকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান ইসলামী কমার্শিয়ালের চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ার। ওই চিঠিতে তিনি মীর নাজিমকে একজন ভালো, সৎ ও নিষ্ঠাবান বীমা ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেন এবং তার শেষ সময়টুকুতে সম্মান জানানোর সুযোগ চান।

অন্যদিকে সিটি সেন্টার শাখা বন্ধের সিদ্ধান্ত ও অর্থদণ্ড পুনর্বিবেচনাসহ মান-সম্মানের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ চেয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে একইদিন তথা ১৮ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে আরেকটি আবেদন করেন ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ।

তবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার বিষয়ে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ার এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদের আবেদন ‘রিভিউ এর (সময়, ফরম ও ফি) প্রবিধানমালা, ২০১৫’ অনুযায়ী যথাযথ না হওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর তা নামঞ্জুর করেছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

ফলে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের সিদ্ধান্তসহ তার ব্যক্তিগত জরিমানা এবং কোম্পানি ও অন্যান্য কর্মকর্তার অর্থদণ্ড বহাল থাকছে। একইসঙ্গে আগামী ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখের মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধ না করা হলে তাদেরকে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানা গুণতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ও ৭ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে সিটি সেন্টারে অবস্থিত ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং সিটি সেন্টার শাখা পরিদর্শন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সার্ভিলেন্স টিম।

পরিদর্শনে বীমা আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, গড়মিল তথ্য প্রদান, পরিচয় গোপন করে মোটা অংকের বেতনে মূখ্য নির্বাহীর ছেলেকে নিয়োগ, অবলিখন কর্মকর্তাকে এজেন্ট নিয়োগ, অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলনসহ ১০টি অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য পায় সার্ভিলেন্স টিম।

অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণসহ ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৬টি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের ১২৬তম সভায়।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি অনিয়মের জন্য ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা আরোপসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, সিটি সেন্টার শাখার ব্যবস্থাপক এবং ওই শাখার অবলিখন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জরিমানা আরোপ;

সিটি সেন্টারর শাখার কার্যক্রম বন্ধ; কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে পত্র প্রেরণ এবং কোম্পানি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত জরিমানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ।