গ্রাহক কমেছে লক্ষাধিক

একশ’ কোটি টাকা ব্যবসা হারিয়েছে ফারইস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: জমি ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানান আর্থিক অনিয়মে অভিযুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ছিল বছর জুড়েই আলোচিত কোম্পানি। তবে কোম্পানিটির অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন ব্যবস্থা না নিলেও এর প্রভাব যেন পড়েছে কোম্পানিটির বীমা ব্যবসায়।

বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশীয় বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রিমিয়াম আয়ে শীর্ষ স্থানে থাকা ফারইস্টের সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছরে নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে গেছে ৯৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেই সাথে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয়, কোম্পানিটির অন্যান্য সূচকও নিম্নমুখী।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) –এ দাখিল করা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের ব্যবসা সমাপনীর অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।  

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেলো বছর বীমা ব্যবসায় বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে করোনা মহামারী। এ ছাড়াও বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে গ্রাহক হয়রানি, মেয়াদ শেষে বীমার টাকা পরিশোধ না করা, কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, কর্মী ছাঁটাই ও গণহারে বদলি, জমি ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানান কারণেই ব্যবসা হারাতে পারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ।

নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৩০ শতাংশ:

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রথম বর্ষ তথা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে সর্বমোট ২২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০১৯ সালে ছিল ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে গেলো বছর কোম্পানিটির নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৯৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ।

গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৫ শতাংশ:

নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্রস প্রিমিয়ামও কমেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ ১ হাজার ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গেলো বছরে কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমেছে ১৭ শতাংশ:

প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা খাতেও ব্যয় কমেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের। ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে কোম্পানিটির উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা। কমেছে অফিস ভাড়া ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খরচও। সব মিলিয়ে ২০২০ সালে বীমা কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় আগের বছরের তুলনায় আরো ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে। গেলো বছর কোম্পানিটির সর্বমোট ব্যয় ২৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যেখানে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ২৯৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

নতুন পলিসি ইস্যু কমেছে ৩২ শতাংশ:

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির নতুন পলিসি ইস্যু কমেছে ৩২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বা ৫৭ হাজার ৩৭৪টি। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি সর্বমোট ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৫টি নতুন পলিসি ইস্যু করে। অন্যদিকে বছরটিতে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৩২টি পলিসি ল্যাপস হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির নতুন পলিসি ইস্যুর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০৯টি।  

মোট পলিসি কমেছে ১ লাখ ১২ হাজার ২০৫টি:

নতুন পলিসি ইস্যু এবং ল্যাপস পলিসি রিভাইভ করার পরও গেলো বছর ফারইস্টের মোট পলিসি কমেছে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ বা ১ লাখ ১২ হাজার ২০৫টি। বছর শেষে কোম্পানিটির মোট পলিসি দাঁড়িয়ে ১২ লাখ ৪ হাজার ৭৮৭টি। এর আগে ২০১৯ সালের শেষে কোম্পানিটির মোট পলিসির সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৯২টি। গেলো বছর কোম্পানিটির দ্বিতীয় ও তদুর্ধ্ব বর্ষের ৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৮টি পলিসি নবায়ন হয়েছে।

লাইফ ফান্ড কমেছে ৪০ কোটি ৮০ লাখ টাকা:

বীমা দাবি পরিশোধ না করার অসংখ্য অভিযোগের ভিড়েও ২০২০ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড কমে গেছে ৪০ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ২১ শতাংশ। বছর শেষে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৭২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

বিনিয়োগ কমেছে ৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা:

২০২০ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মোট বিনিয়োগ ৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৯৪ শতংশ কমেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ২ হাজার ৬০৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গেলো বছর কোম্পানিটির সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লেও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ কমেছে ৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্লাহ’র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি কল রিসিভ করেননি। কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।