ব্যবসা কমেছে মেটলাইফের

আবদুর রহমান আবির: ব্যবসা কমেছে মেটলাইফের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চে। গেলো বছর কোম্পানিটির এই ব্রাঞ্চে নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ২৬ শতাংশ। আর মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৪ শতাংশ। এ ছাড়াও গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কমেছে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি। কোম্পানিটির ২০২০ সালের ব্যবসা সমাপনীর হিসাব পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই চিত্র।

নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ২৬ শতাংশ:

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে মেটলাইফের প্রথম বর্ষ তথা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে সর্বমোট ৪৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০১৯ সালে ছিল ৫৮১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে গেলো বছর কোম্পানিটির নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ১৫০ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা  ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।  

গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৪ শতাংশ:

নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহও কমেছে মেটলাইফের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির বাংলাদেশ ব্রাঞ্চে গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ ২ হাজার ৭শ’ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৯৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ গেলো বছরে কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ১১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৩ দশমকি ৮৪ শতাংশ।

ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় কমেছে ১ শতাংশ:

ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় কমেছে মেটলাইফের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম আয়ের উপর মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালে ব্যয়ের এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের এই হার অনুমোদিত সীমার নিচে রয়েছে।

তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে মেটলাইফের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চে ব্যবস্থাপনা খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৬২৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে অনুমোদিত সীমার নিচে ব্যয় হয়েছে ১৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মোট ব্যয় ছিল ৬৮৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সে বছর কোম্পানিটির অনুমোদিত সীমার নিচে ব্যয় ছিল ২০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

নতুন পলিসি ইস্যু কমেছে ৩৮ শতাংশ:

মেটলাইফ নামে পরিচিত আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির নতুন পলিসি ইস্যু কমেছে ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ৭৭ হাজার ২৩০টি। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি সর্বমোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৭১টি নতুন পলিসি ইস্যু করে। অন্যদিকে বছরটিতে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬৯টি পলিসি ল্যাপস হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির নতুন পলিসি ইস্যুর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৩০১টি। 

মোট পলিসি কমেছে ৬ শতাংশ:

নতুন পলিসি ইস্যু এবং ল্যাপস পলিসি রিভাইভ করার পরও গেলো বছর মেটলাইফের মোট পলিসি কমেছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৭৬ হাজার ৮৬০টি। বছর শেষে কোম্পানিটির মোট পলিসি দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫টি। এর আগে ২০১৯ সালের শেষে কোম্পানিটির মোট পলিসির সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৫টি। গেলো বছর কোম্পানিটির ৫ হাজার ৮৯৮টি তামাদি পলিসি পুনরায় সচল হয়েছে।

লাইফ ফান্ডের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ শতাংশ:

২০২০ সালে মেটলাইফ ১ হাজার ১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লাইফ ফান্ডে যুক্ত করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে  এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। বছর শেষে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যা ২০১৯ সালে ছিল ১৩ হাজার ১৫৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ শতাংশ:

২০২০ সালে মেটলাইফের বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১৪ হাজার ২৯১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ ছাড়াও গেলো বছর কোম্পানিটির সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লেও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ কমেছে ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ৬৪৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।

বিনিয়োগ রিটার্নে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ শতাংশ:

বিনিয়োগ রিটার্নেও প্রবৃদ্ধি কমেছে মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এই কমে যাওয়ার পরিমাণ ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে মেটলাইফের বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বা ১০৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০১৯ সালে ছিল ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ১৫২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গেলো বছর কোম্পানিটির মোট রিটার্ন এসেছে ১ হাজার ৪৮৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মেটলাইফ বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ আলা উদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র অফিসার (কমিউনিকেশন্স) ফারিয়া মাহবুবের সঙ্গে। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠানোর জন্য একদিন সময় নেন। তবে তিন দিনেও বক্তব্য পাঠায়নি মেটলাইফ। এমনকি তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।