চাকরি স্থায়ীকরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা আইডিআরএ কর্মকর্তাদের

আবদুর রহমান আবির: অস্থায়ীভাবে নিয়োগের দীর্ঘ ১০ বছরেও চাকরি স্থায়ী হয়নি বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র ৫৭ কর্মকর্তার। ২০১১ সালে কর্তৃপক্ষে যোগদান করায় এরইমধ্যে তাদের সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সও শেষ হয়েছে। এখন চাকরি স্থায়ী না করা হলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে এসব কর্মকর্তার। এমন অবস্থায় চাকরি স্থায়ী করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই ৫৭ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৮ মার্চ বীমা আইন ১৯৩৮ রহিত করে বীমা আইন ২০১০ প্রণয়ন করে সরকার। একই সাথে বীমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ জারির মাধ্যমে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠন হলেও সাংগঠনিক কাঠামোর আদেশ জারি করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের জনবল আইনী সু্যোগ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে আত্তীকরণ হলে কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে এবং কর্তৃপক্ষকে সচল রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য মাধ্যমে উচ্চ ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের জন্য আহবান করা হয়। এরপর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে অফিস সহায়কসহ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের অস্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়।

সূত্র মতে, পদ সৃষ্টির আদেশ প্রাপ্তির পূর্বে বীমা শিল্পের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে অস্থায়ীভাবে এসব জনবল নিয়োগ করে এবং বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে। এছাড়া বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের সেট্রাল রেটিং কমিটির জনবলও অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয় কর্তৃপক্ষে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষে অস্থায়ী ভিত্তিতে মোট ৫৭ জন কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটিতে একজনও স্থায়ী কর্মকর্তা নেই বলেও জানা গেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুক্তভোগী এসব কর্মকর্তা বলছেন, বীমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করার পর সরকার জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে। এরপর বিভিন্ন সময় এসব কর্মকর্তাকে চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এক দশকেও চাকরি স্থায়ী করা হয়নি কর্তৃপক্ষের কোন কর্মকর্তার। এ অবস্থায় কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ভবিষ্যৎ নিয়ে। আশা নিরাশার দোলাচলে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছেন না কর্ম সম্পাদনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, বিগত দশ বছরে আমাদের চাকরি স্থায়ী হওয়ার আশ্বাস এবং বীমা শিল্পকে বাঁচাতে ও বীমা শিল্পের উন্নয়নে আমরা নিবেদিত হয়ে সুনামের সাথে কাজ করেছি। অন্যত্র চাকরির সুযোগ থাকলেও আমরা সেখানে যাইনি। সমগ্র বীমা খাতও আমাদের কার্যক্রমের জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যুগিয়ে আসছে।

তারা আরো বলেন, এই সংস্থায় আমরা যখন কাজে যুক্ত হয়েছি তখন আমাদের সবার চাকরিতে ঢোকার বয়স ছিল। কিন্তু এই দশ বছরে আমরা যারা কর্মরত আছি তাদের কারও আর কোন চাকরিতে ঢোকার বয়স নাই। এ কারণে এ মূহূর্তে আমাদের চাকরি স্থায়ী না হলে আমাদের সকলকে তাদের পরিবার ও পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।

অস্থায়ী এসব কর্মকর্তা বলছেন, আসন্ন বীমা দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং নির্দেশনা বিনীতভাবে কামনা করছি। তিনি যদি আমাদের চাকরি স্থায়ী করেন তাহলে বিগত দশ বছরে আমাদের বীমা বিষয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, বীমা বিষয়ে একাডেমিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং অদ্যাবধি গৃহীত কার্যক্রম প্রভৃতি প্রয়োগের মাধ্যমে বীমা শিল্পের উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে পারব।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি একটি নিয়োগ বিধি প্রস্তাব করা হয়েছে সরকারের কাছে। বর্তমানে সেটা গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। সেটা গেজেট আকারে আমাদের হাতে আসলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে একজন চেয়ারম্যান ও দু’জন সদস্য এবং ৬৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন ছাড়াও ৩২টি বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি এবং ৪৫টি বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসহ সর্বমোট ৭৯টি বীমা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দেশে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করছে।

স্বাধীনতার পূর্বে বাংলাদেশে দেশী বিদেশী ৬৭টি কোম্পানি রেজিস্ট্রিকৃত ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা শিল্পের উন্নয়নকল্পে ১৯৭২ সালের ৮ আগস্ট এ শিল্পকে জাতীয়করণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান গঠনের সুযোগ প্রদান করে সরকার। আইডিআরএ গঠনের পূর্বে বীমা ব্যবসার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বীমা অধিদপ্তরের ওপর।