প্রাইম ইসলামী লাইফের ‘পরিবার কল্যাণ বীমা’ কল্যাণ আনেনি রিক্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাইম ইসলামী লাইফের ‘পরিবার কল্যাণ ডিভিশন’র বীমা দাবির চেক নিয়ে দেড় মাস ধরে ঘুরছেন নাটোরের গ্রাহক রিক্তা গোলাপ। পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণের একবছর পর চেকের মাধ্যমে বীমা দাবি ‘পরিশোধ’ দেখানো হলেও হাতে টাকা পাননি তিনি। তাকে দেয়া হয়েছে এমন একটি চেক যা দিয়ে তিনি টাকা তুলতে পারছেন না। একাউন্টে টাকা নেই। নিজ একাউন্টে চেকটি জমা দিলেও সেটি ‘ডিজ-অনার’ হয়ে ফেরত আসে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের গ্রাহক মোছা. রিক্তা গোলাপের বীমার টাকা প্রাপ্তি। তবে দ্বিতীয়বার চেকটি জমা দেয়ার পর নগদায়ন না হলে ‘নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টে’ (এনআই অ্যাক্ট) মামলা করবেন বলে জানান রিক্তা গোলাপ। যদিও প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, চেক নগদায়ন না হওয়ার কোনো কারণই নেই।
তথ্যমতে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পুজাইল গ্রামের গ্রাহক মোছা. রিক্তা গোলাপ। প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ‘পরিবার কল্যাণ বীমা ডিভিশন প্রকল্প’র আওতায় তিনি ১০ বছরের জন্য পলিসি (নম্বর-০০২৬০০৪৯৪১-৬) করেন। মাসে ৫শ’ টাকা করে প্রিমিয়াম জমা দেন ১০ বছর ধরে। মেয়াদ পূর্ণ হয় ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ । বীমা দাবির চেক হাতে পান একবছর পর, চলতি বছর ১৫ মার্চ । প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেকটি (নং ২২১৫১৯৮) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ’র প্রধান কার্যালয়স্থ একাউন্টের। ৭৯ হাজার ৯৫৩ টাকার এই চেক নগদায়নের জন্য রিক্তা গোলাপ গত ৩ মে জমা দেন জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কাটাখালিবাজার শাখাস্থ নিজ সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে। কিন্তু নগদায়ন না হয়ে ১৪ মে ফেরত আসে চেকটি। যে কারণে রিক্তা গোলাপের পরিবারের কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কথিত ‘পরিবার কল্যাণ বীমা প্রকল্প’র কার্যক্রম।
হয়রানি ও প্রতারণার শিকার রিক্তা গোলাপ বলেন, এমন জানলে ওই কোম্পানিতে আমি কোন দিন পলিসি করতাম না। এর আগেও আমার মা হাসিনা বেগমের (পলিসি নম্বর- ০০২৬০০৪৪১০-৬) বীমার টাকা পেতেও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পলিসির মেয়াদ পূর্তির এক বছর পর প্রাইম ইসলামী লাইফের দেয়া চেক ব্যাংকে জমা দেয়ার পর দু'দফা ফেরত আসে। ওই সময়ও ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। বহু দেনদরবার করে ওই চেকের টাকা ওঠাতে হয়। মানুষকে হয়রানি করাই প্রাইম ইসলামী লাইফের মূল পলিসি বলে কোম্পানির প্রতি ক্ষোভ ঢালেন তিনি।
রিক্তা গোলাপ আরো জানান, বাবা, মা, বোন ও ফুপুসহ তারা ৫ জন প্রাইম ইসলামী লাইফে বীমা করেন। প্রায় একই দিনে সবার পলিসি করা হয়। রিক্তা ও তার বোন নার্গিস পারভীনের বীমা অংক ৬০ হাজার টাকা করে। বাবা আবদুস সাত্তার ও মা হাসিনা বেগমের বীমা অংক ২৪ হাজার টাকা করে। ফুপু সামেনা খাতুনের বীমা অংক ১২ হাজার টাকা। তাদের পলিসির মেয়াদও পূরণ হয়েছে। সোমবার ১৫ মে পর্যন্ত বীমা দাবির টাকা হাতে পাননি বলে জানান রিক্তা গোলাপ।
এ বিষয়ে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিবার কল্যাণ বীমা ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তফা জামালের কাছে জানতে চাওয়া হলে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, ব্যাংক থেকে চেকের বিপরীতে গ্রাহকের টাকা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোম্পানির সংশ্লিষ্ট একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা পাঠানো হয়। এর আগে সব গ্রাহকই টাকা পেয়েছেন। টাকার না পাওয়ার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।
রিক্তা গোলাপের বিষয়টি আমার কাছেও বোধগম্য নয়। তবে যেদিন তিনি ব্যাংকে চেক জমা দিয়েছেন সেদিন হয়তো কোম্পানির একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। এ কারণে হয়তো চেকটি নগদায়ন হয়নি। গতকালও কোম্পানির মূল একাউন্ট থেকে সংশ্লিষ্ট একাউন্টে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে- যোগ করেন মোস্তফা জামাল।
প্রসঙ্গত: এরআগে গত ২৫ মার্চ নাটোরের ৭২ গ্রাহকের টাকা দিচ্ছে না প্রাইম ইসলামী লাইফ শীর্ষক প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি। পরে ২৮ মার্চ বিলম্বে দাবি পরিশোধ এবং বিলম্বজনিত প্রাপ্য সুদ পরিশোধ না করার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পরই প্রাইম ইসলামী লাইফ কর্তৃপক্ষ নাটোরের গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ শুরু করে। মাত্র দু’দিনের মধ্যে ৩৫ জন গ্রাহকের চেক ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয় কোম্পানিটি। বাকীদের চেক ও নির্বাহী রশিদ প্রস্তুতের কাজ চলছে বলে জানায় প্রাইম ইসলামী লাইফ কর্তৃপক্ষ।