নতুন বাজেটে বিআইএফ’র ৪ প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট উপলক্ষ্যে বীমাখাতের জন্য চারটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) । গত ২২ মার্চ, ২০২১ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছে মূখ্য নির্বাহীদের এ সংগঠন।

২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট প্রণয়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির সদস্য সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে প্রাস্তবনা ও সুপারিশমালা আহবানের প্রেক্ষিতে এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেছে বিআইএফ। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী।

বিআইএফ’র প্রস্তাবগুলো হলো- এক) করপোরেট কর হার হ্রাস করে লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ৩৫ শতাংশ করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়েছে, ব্যাংক এবং বীমা কোম্পানির কর হার সমান হওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ ব্যাংকের আয়ের তুলনায় বীমা ব্যবসার আয় তুলনামুলক অনেক কম। তাছাড়া বীমা কোম্পানিসমূহ বীমা সেবার মাধ্যমে ঝুঁকি গ্রহণ করে জনসাধারণের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। অপরদিকে বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর হার ২৫ শতাংশ বা তার চেয়েও কম। যদিও তাদের আয় এবং ব্যবসার পরিধি ব্যাপক।

দুই) জীবন বীমা পলিসির গ্রাহকের পলিসি বোনাস বা মুনাফার উপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স রহিত করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়েছে, এর ফলে জীবন বীমায় পলিসি গ্রাহকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষুদ্রবীমা গ্রাহকগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে জীবন বীমা ব্যবসায় এ ধরনের গেইন ট্যাক্স আরোপের নজির নেই।

তিন) বীমা ব্যবসায় পুনর্বীমা কমিশনের উপর ১৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট কর্তন বা আদায় রহিত করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানিসমূহ প্রিমিয়াম গ্রহণকালে গ্রাহকের নিকট হতে ১৫ শতাংশ হারে মূসক সংগ্রহ করে তা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা প্রদান করে থাকে। সংগৃহীত প্রিমিয়ামের অংশ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য কোম্পানিসমূহ পুনর্বীমাকারীকে প্রিমিয়াম হিসেবে প্রদান করে পুনর্বীমা গ্রহণ করে থাকে।

যেহেতু সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম গ্রহণের সময় উক্ত প্রিমিয়ামের উপর আইন অনুযায়ী মূসক কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়; এক্ষেত্রে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের একটি অংশ পুনর্বীমা কোম্পানিকে প্রদান করা হয়। সেহেতু পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের উপর অর্জিত কমিশনের উপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ যুক্তিসঙ্গত নয়। তাই এ ধরনের ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে তার ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ন্যায়সঙ্গত হবে।

চার) কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বীমা ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বীমা এজেন্টদের উপর ৫ শতাংশ অগ্রিম উৎসে কর কর্তন পরিশোধ আপাতত তিন বছরের জন্য স্থগিত করা।

এ দাবির পক্ষে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ২০২০ সালে সকল বীমা এজেন্টগণ ঘরবন্দি থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যবসা আহরণ করতে পারেনি। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতার কারণে তারা প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকের নিকট পৌঁছে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে না পারায় আয় বাধাগ্রস্ত হয়ে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই এজেন্টদের উপর অগ্রিম ৫ শতাংশ কর আদায় রহিত করা যুক্তিসঙ্গত হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হার ৩৭.৫ শতাংশ।

এ ছাড়াও ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বর্তমানে জীবন বীমা পলিসি গ্রাহকের বোনাস বা মুনাফার উপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কর্তন করা হয়।

বর্তমানে বীমা আইন ২০১০ এবং বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর অধীনে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর এবং মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা এর বিধি- ১৮(ক), বিধি- ১৮(খ) মোতাবেক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট কর্তন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হয়।

বিধি অনুযায়ী বর্তমানে পুনর্বীমা কমিশনের উপর ১৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট কর্তন করে জমা প্রদান করতে হয়।

এ ছাড়াও বর্তমানে আয়কর আইন অনুযায়ী বীমা এজেন্টদের আয়ের উপর ৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করে পরিশোধের বিধান রয়েছে।