কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ

আবদুর রহমান আবির: কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এ লক্ষ্যে ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন, ইন্স্যুরেন্স একাডেমি এবং নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীদের সমন্বয়ে ১৯ সদস্যের মূল কমিটি ও একটি সব-কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে এসব কমিটির একাধিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সূ্ত্রের তথ্য মতে, কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. দলিল উদ্দিনকে আহবায়ক করে গত ১ এপ্রিল ১৯ সদস্যের কমিটি গ্রহণ করা হয়। এরপর গত ১৫ এপ্রিল কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই সভায় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (আইন) এস এম শাকিল আখতারকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের একটি সব-কমিটি গঠন করা হয়। গত ২১ এপ্রিল ওই সাব-কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৮২/২০২০ জারি করে যানবাহনের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তথা থার্ড পার্টি বীমা পরিকল্প বাতিল করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ‘মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩’ রহিত করে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ জারি করার মাধ্যমে সরকার থেকে যানবাহনের থার্ড পার্টি বীমা তুলে দেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।

মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। যা সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-তে তুলে দেয়া হয়েছে। তবে নতুন আইনের ৬০(২) ধারায় বলা হয়েছে, মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বীমা করবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকবে। বীমাকারী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, ৭ সদস্যের ওই কমিটিকে তিনটি কাজ দেয়া হয়েছে- কম্প্রিহেনসিভ মটর ভেহিকল ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করতে বীমা কোম্পানির পাশাপাশি পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে কৌশলপত্র প্রণয়ন। কম্প্রিহেনসিভ মটর ভেহিকল ইন্স্যুরেন্স যুগোপযোগী করতে কার্যকরী রুলস/রেগুলেশন্সের খসড়া তৈরী করা এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৬০ এবং ১১১ ধারা বিশ্লেষণপূর্বক উদ্ভুত সমস্যা নিরসনে পরামর্শ প্রদান করা।

এদিকে কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হলেও বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনার পর সাব-কমিটির বৈঠকে থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব উঠে এসেছে। তারা বলছেন, সারা বিশ্বেই থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক, কম্প্রিহেনসিভ নয়। আবার সক্ষমতার বিচারেও কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা যুক্তি সম্মত নয়।

আইডিআরএ গঠিত ওই দুই কমিটির সদস্য এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম শাহীন বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ নেই যেখানে ইন্স্যুরেন্স ছাড়া গাড়ি রাস্তায় নামে। তাছাড়া রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় একজন পথচারী মারা গেলে তার দায় রাষ্ট্র নেবে না, আবার কোন বীমা কোম্পানিও নেবে না -এটা হতে পারে না। বিআরটিএ ইন্স্যুরেন্স ছাড়া গাড়ি চলার যে অনুমোদন দিয়েছে এটা ঠিক নয়।

তাই আমরা সাব-কমিটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিচ্ছি যে, কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স যেটা রয়েছে সেটা তো থাকবেই বরং থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্সটাকে আরো যুগোপযোগী করে বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা হোক। এক্ষেত্রে থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্সের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এবং প্রিমিয়াম হার বাড়াতে হবে।

আগামী ৫ মে'র মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সয়ংসম্পুর্ণ প্রস্তাব মূল কমিটির কাছে তুলে ধরা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্স বাদ দেয়ার ফলে দুর্ঘটনায় পথচারী যেমন ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

ইমাম শাহীন বলেন, সারা বিশ্বেই থার্ড পার্টি মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক, কম্প্রিহেনসিভ নয়। আবার সক্ষমতার বিচারেও কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স গ্রহণ সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। হয়তো আয় বা চাকরি থাকা অবস্থায় এটা সম্ভব হলেও অবসর জীবনে সবার পক্ষে কম্প্রিহেনসিভ মটর ইন্স্যুরেন্স গ্রহণ সম্ভব হবে না।