‘আমি ৬ মাস বেতন পাই না’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ...আমি ৬ মাস বেতন পাই না। যারা বলছে বেতন বোনাস পাইছে তারা একটু আমারটার ব্যবস্থা করে দিবেন। মোটর বীমা বন্ধ, আমার বেতনও বন্ধ। কই কোম্পানি তো আমার খবর নেয় নাই... –এভাবেই নিজের ক্ষোভ ও দুঃখ-কষ্টের কথা প্রকাশ করেছেন একজন বীমা কর্মী। আরহাম উদ্দিন নামের ওই নন-লাইফ বীমা কর্মী গতকাল শুক্রবার (২৮ মে, ২০২১) রাতে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র ফেসবুক পেইজে এমন মন্তব্য করেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে, ২০২১) ‘নন-লাইফে কমিশন বন্ধের ৩ মাস: সব কোম্পানির অভিযোগ- কমিশন দিয়ে ব্যবসা নিচ্ছে অন্য কোম্পানি’ শীর্ষক এক সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি। খাতটির বেশ কয়েকটি কোম্পানির ব্রাঞ্চ ইনচার্জ ও মুখ্য নির্বাহীর বক্তব্য তুলে ধরা হয় ওই সংবাদে। ফেসবুকে শেয়ার করা ওই সংবাদে অনেকেই মন্তব্য করেন। পাঠকদের সুবিধার্থে বীমা কর্মীদের এসব মন্তব্য (বানান সংশোধ করে) তুলে ধরা হলো।

আরহাম উদ্দিন নামের ফেসবুক আইডি থেকে একজন নন-লাইফ বীমা কর্মী মন্তব্য করেছেন, ধান্দাবাজীর একটা লিমিট থাকে। আইডিআরএ’র এত নাটক। তারা কি জানে না যে কোন কোম্পানি কত কমিশন দেয়। সব জেনে নাটক করার দরকারটা কি। আমি ৬ মাস বেতন পাই না। যারা বলছে বেতন বোনাস পাইছে তারা একটু আমারটার ব্যবস্থা করে দিবেন। মোটর বীমা বন্ধ, আমার বেতনও বন্ধ। কই কোম্পানি তো আমার খবর নেয় নাই। আইডিআরএ’র জ্ঞানহীন নোটিশের কারনে আজ আমি পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামছি। আর তারা বলে উন্নয়ন করবে। ফালতুমির একটা লিমিট থাকা দরকার। দালালি বন্ধ করে কিভাবে মোটর বীমা ফিরিয়ে এনে কর্মীদের চাকরি ফিরিয়ে দিবেন তা চিন্তা করেন। জীবন মরণ বীমা না করে। আমাদের হারানোটা ফিরিয়ে দেন। অন্তত পরিবার নিয়ে জেনো বিষ খেয়ে মরতে না হয়।

ববি আইভি নামের আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে আরহাম উদ্দিনের এই মন্তব্য ঠিক বলে সমর্থন করেছেন।  

ফাবিহা রাত্রি নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, আসলে কি আইডিআরএ’র কোন ভূমিকা আছে। তারা নিজেরা হল ভর মাপের দালাল। কোন কোম্পানি ৩০/৪০% দিয়ে ব্যবসা করতেছে। তা কি জানে না। না কি না জানার নাটক করতেছে। আইডিআরএ’র কিছু ভুল নোটিশ এর কারনে অনেক বীমা কর্মীর চাকরি নাই। আর যারা বলতেছে যে বেতন বোনাস ঠিক মত পাচ্ছে তাদের বলছি ৮০% বীমা কর্মী এখন না খেয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতেছে। সব কিছু বাদ দেন, যেখানে বীমা ব্যবসা করতেছে তা কেনো বন্ধ করছেন। মোটর বীমা এখন কবরে গেলেও পাওয়া যাবে না। এই মোটর বীমা নিয়ে কত বীমা কর্মী ছিল একটা কোম্পানি বলতে পারবে যে মোটর বীমা বন্ধ হওয়ার পর কর্মীদের বেতন বোনাস তো দূরে থাক খবর নিছে কিনা। এই যে আজ তারা যে চাকরি হারিয়েছে কার জন্য। শুধু মাত্র আইডিআরএ’র এর ভুল নোটিশ আর বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করার কারনে।

লায়ন এমরানুল হক নামের ফেসবুক আইডি থেকে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, আইডিআর যদি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে প্রজ্ঞাপন জারি করে কি লাভ হলো? বরং বীমাকারীদের জন্য এটা বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই নয়। আইডিআরএ’কে এ ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে এবং অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন চিঠি প্রত্যেক কোম্পানিকে প্রেরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও ভূমিকা নিতে হবে।

সৈয়দ রেজাউল ইসলাম নামে আরেক ফেসবুক আইডি থেকে লায়ন এমরানুল হকের এই মন্তব্যকে ১০০% সঠিক বলে সমর্থন করা হয়েছে।

এনামুল হক এনাম নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ২৫-৩০% কমিশন দিচ্ছে কম করে হলেও ২০টি কোম্পানি। এখানে যারা বলছেন কমিশন দেন না, তারাই ৩০% দিচ্ছেন। তার মধ্যে নাম্বার ওয়ান হলো সিটি ইন্সুরেন্স।

কামরুল ইসলাম নামে আরেজন মন্তব্য করেছেন, ভালো কোম্পানির অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ছোট কোম্পানিতে কাজ করা ভালো।

উল্লেখ্য, দেশের নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন প্রদানে অনিয়ম দূর করতে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৮৪/২০২১ জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ওই সার্কুলারে বলা হয়, নন-লাইফ বীমা খাতে ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের বিপরীতে বীমা এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বীমাকারীর পে-স্কেল অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয় সার্কুলারে।

এর আগে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৮২/২০২০ জারি করে যানবাহনের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা তথা থার্ড পার্টি বীমা পরিকল্প বাতিল করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ রহিত করে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ জারি করার মাধ্যমে সরকার থেকে যানবাহনের থার্ড পার্টি বীমা তুলে দেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ।