ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে লাইফ বীমায় নতুন উদ্যোগ

আবদুর রহমান আবির: লাইফ বীমা খাতের ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এটি বাস্তবায়ন হলে কোম্পানিগুলোর সুপারভাইজরি লেভেলে বর্তমান প্রচলিত ৫টি গ্রেডের পরিবর্তে ৩টি গ্রেড রাখতে হবে। একইসঙ্গে এই তিন গ্রেডের জন্য বেতন-ভাতা, কমিশন, বোনাস ও যাতায়াতসহ সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ খরচ করতে পারবে কোম্পানিগুলো।

আইডিআরএ বলছে, লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা বায় ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে নতুন এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সফলভাবে কার্যকর করা গেলে লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। আর নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বীমা দাবি পরিশোধ করাও সহজতর হবে। একইভাবে যথাসময়ে দাবি পরিশোধ করা হলে গ্রাহক সন্তুষ্টির মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থাও বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গত ২৭ মে। সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২০১২ সালের ১৫ মার্চ জারিকৃত সার্কুলার নং লাইফ-০৩(খ)/২০১২ এর উল্লেখিত সুপারভাইজরি লেভেলে ৫টি গ্রেড সম্বলিত অনুচ্ছেদ ‘এফ’ বাতিলপূর্বক সুপারভাইজরি লেভেলে সর্বোচ্চ ৩টি গ্রেড কার্যকর হবে।

তথ্য অনুসারে, সুপারভাইজরি লেভেলের গ্রেড ৩টি হবে ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর (ডিসি), রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর (আরসি) এবং ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর (বিসি) । এক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল এসোসিয়েট (এফএ), ইউনিট ম্যানেজার (ইউএম) এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (বিএম) সা্কুলার নং লাইফ-০৩(খ)/২০১২ মোতাবেক বলবং থাকবে।

সুপারভাইজরি লেভেলে তিনটি গ্রেডের কর্মকর্তার জন্য লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানের অর্জিত প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। বেতন কাঠামো নির্ধারণের সময় এই তিন গ্রেডের কর্মকর্তার অর্জিত প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ খরচ বিবেচনায় নেয়া যাবে।

এই ১৮ শতাংশ খরচে সকল ধরনের ব্যয় যথা ও বেতন-ভাতা, পারফরমেন্স বোনাস, যাতায়াত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অর্থাৎ সুপারভাইজরি লেভেলে কোন ক্রমেই ১৮ শতাংশের বেশি খরচ করা যাবে না। প্রত্যেক গ্রেডের কর্মকর্তার প্রাপ্য সুবিধা নিরুপনের সময় স্ব স্ব গ্রেডের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের লক্ষ্যমাত্রাসহ বিক্রিত পলিসির মেয়াদ অর্থাৎ কম মেয়াদ কম সুবিধা, বেশি মেয়াদ বেশি সুবিধা প্রদান নীতি অনুসরণ করতে হবে।

এ ছাড়াও সুপারভাইজরি লেভেলের তিনটি গ্রেডের কর্মকর্তাকে তার অব্যবহিত নিম্ন গ্রেডের কর্মকর্তার প্রাপ্য সুবিধার সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ হারে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা যাবে। অথাৎ ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের (বিএম) প্রাপ্য সুবিধার সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্রাঞ্চ কো-অর্ভিনেটর (বিসি) পাবেন এবং একই হারে আরসি এবং ডিসিগণ আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

আইডিআরএ বলছে, মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো পিরামিড আকারের হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ইউনিট ম্যানেজারের অধীনে ৫জন সক্রিয় ফাইন্যান্সিয়াল এসোসিয়েট থাকবে (ইউনিট ম্যানেজার: ফাইন্যান্সিয়াল এসোসিয়েট =১:৫), প্রত্যেক ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের অধীনে ৪ জন সক্রিয় ইউনিট ম্যানেজার থাকবে (ব্রাঞ্চ ম্যানেজার: ইউনিট ম্যানেজার =১:৪), প্রত্যোক সুপারভাইজারের অধীনে ৩জন অধীনস্ত উন্নয়ন কর্মকর্তা থাকবেন। যথা: ডিসি: আরসি = ১:৩, আরসি: বিসি =১:৩, বিসি: বিএম =১:৩।

এ ছাড়াও গত ২৫ মার্চ জারিকৃত সকল বীমা কোম্পানির একইরূপ সাংগঠনিক কাঠামো সংক্রান্ত সার্কুলার নং- জিএডি-৬/২০২১ তে উল্লেখিত সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কমিশন ভিত্তিক কোন নিয়োগ বা পদায়ন করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও মূখপাত্র এস এম শাকিল আখতার বলেন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণে কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে না। যার ভুক্তভোগী বীমা গ্রাহকসহ কোম্পানিগুলোও। তাই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমে আসবে। তবে বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে অফিস আদেশের মাধ্যমে এটি কার্যকর করা হবে।