গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল প্রবিধানমালা রহিত করার দাবি বিআইএ'র

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল প্রবিধানমালা ২০১৬ রহিত করার দাবি জানিয়েছে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) । গতকাল রোববার (২৭ জুন, ২০২১) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র কাছে পাঠিয়েছে সংগঠনটি।

এই প্রবিধানমালা অনুসারে, প্রতি বছর দেশের সকল লাইফ বীমা কোম্পানির প্রথম বর্ষের প্রিমিয়ামের একটি অংশ (লেভি) এ সংক্রান্ত তহবিলে জমা করা হয় এবং কোন লাইফ বীমা কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়লে এই তহিবল থেকে ওই কোম্পানির পলিসি গ্রাহকদের দায় পরিশোধ করা হবে।

২০১৭ সালের ২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল প্রবিধানমালা ২০১৬ গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। এরপর ২০২০ সালের ৪ আগস্ট প্রবিধানমালাটির দু’টি প্রবিধানে সংশোধন এবং নতুন একটি দফা সংযোজন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।

বিআইএ বলছে, কোন কোম্পানি দেউলিয়া হলে উপর্যুক্ত বিধির আলোকে গঠিত তহবিল থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হবে। এরূপ নিয়ম থাকলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যয় করার প্রবণতা থাকবে না। কোম্পানিগুলো যথেচ্ছভাবে ব্যয় করবে এবং পরিণতিতে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারবে না। এতে করে সুশাসিত এবং স্বচ্ছল কোম্পানিগুলো তাদের তহবিল বৃদ্ধিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং ‘ভার্চু ইজ রিওয়ার্ডেড; ভাইস পানিশড’ এই নীতির যথার্থ প্রতিফলন ঘটবে না।

শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যাংক বিপদগ্রস্ত বা দেউলিয়া হয়ে যায় তখন সরকার ব্যাংকটির দায় দায়িত্ব গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর পদ্ধতিটি প্রস্তাবিত তহবিল থেকে ভিন্নতর। সিআরআর পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ একটি হিসাব খুলে নির্দিষ্ট অনুপাতে অর্থ জমা রাখে। কোন ব্যাংকের দেউলিয়াত্ব বা আপদকালীন সময়ে বিপদগ্রস্থ ব্যাংকের সিআরআর-এ গচ্ছিত অর্থ হতে শুধুমাত্র ওই বিপদগ্রস্ত ব্যাংককেই প্রদান করা হয়। কোন সুশাসিত ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থ অপশাসিত ব্যাংকের পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রস্তাবিত লাইফ বীমা গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিলের মত এটি কোন কমন ফান্ড নয়।

বিআইএ বলছে, বীমা কোম্পানির দেউলিয়া হয়ে গেলে সেই কোম্পানিতে সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়। তাছাড়া শক্তিশালী বীমা কোম্পানির স্বার্থে দুর্বল কোম্পানি একীভূত করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু সকল কোম্পানির অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করে অপশাসিত ও দুর্বল কোম্পানিকে রক্ষা করার কোনো বিধান বাস্তবসম্মত নয়।

কোন কোম্পানি সঠিকভাবে আইন কানুন মেনে চললে এবং আইডিআরএ'র সঠিকভাবে তদারকি করলে কোম্পানির দেউলিয়া হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছেমতো টাকা খরচ এবং যথার্থ খাতে বিনিয়োগ না করার ফলে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে পারে না। যে সকল কোম্পানি সরকার নির্দেশিত বিধি-বিধান না মেনে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা লংঘন করে কোম্পানিকে দুর্দশাগ্রস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।

সংগঠনটি বলছে, এই উপমহাদেশে বিগত একশ’ বছরের মধ্যে কোন লাইফ বীমা কোম্পানির দেউলিয়া হওয়ার উদাহরণ নেই। অধিকন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক খাতে প্রস্তাবিত তহবিলের আদলে কোন বিধি-বিধান বিদ্যমান নেই। বিধায় লাইফ ইন্সুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল প্রবিধানমালা ২০১৬ রহিত বা সংশোধন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রণালয়, আইডিআরএ এবং বিআইএ’র সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে।