করোনা আক্রান্ত গ্রাহকদের চিকিৎসা খরচসহ বীমা সুবিধা দিতে আইডিআরএ'র নির্দেশ

আবদুর রহমান আবির: যেকোন বীমা গ্রাহক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা সুবিধাসহ মৃত্যুদাবি পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষ (আইডিআরএ) । করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতে বীমা গ্রাহকদের পাশে দাঁড়াতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল সোমবার (২ আগস্ট) বীমা কোম্পানিগুলোকে পাঠানো হয়েছে।

সংস্থার চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, প্রচলিত বীমা পলিসির মাধ্যমেই আমরা করোনা বীমার সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এর ফলে করোনা সংক্রমণের আগেই যারা বীমা গ্রহণ করেছেন তারাসহ নতুন যারা বীমা গ্রাহক হবেন তাদের সবার ক্ষেত্রে এই সুবিধা কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে করোনা বীমার সুবিধা পেতে আলাদা কোন পলিসি কিনতে হবে না গ্রাহকদের।

লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তারা কারোনা ভাইরাস আক্রান্ত গ্রাহকদের হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ এবং মৃত্যুদাবি পরিশোধ করে আসছে। গ্রাহক সেবার দায়বদ্ধতা থেকেই কোম্পানিগুলো বিদ্যমান পলিসিতে করোনা বীমার সুবিধা দিয়ে আসছে। তবে করোনা আক্রান্ত অবস্থায় অর্থাৎ কোভিড-১৯ পজিটিভ অবস্থায় নতুন কোন পলিসি ইস্যু করছে না এসব বীমা কোম্পানি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের নতুন এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে দেশে বিদ্যমান সকল জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পে করোনা ভাইরাস রোগ সয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ করোনা সংক্রান্ত বীমা দাবির একটা আইনগত ভিত্তি তৈরি হলো। এক্ষেত্রে বীমা গ্রহণের পর কোন গ্রাহক করোনা আক্রান্ত হলে সব ধরণের স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে নির্ধারিত হসপিটালাইজেশন খরচ পাবেন। আবার মত্যুতেও নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পাবেন বীমা গ্রাহকের পরিবার।

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বীমা দাবির বিষয়ে বেশ কয়েকটি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সাথে কথা বলেছে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি। এর মধ্যে ‘কোভিড ইন্স্যুরেন্স’ নামে পৃথক একটি পলিসি চালু করেছে নন-লাইফ বীমা কোম্পানি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। তবে এককভাবে নয়, সংশ্লিষ্ট অন্য কোন পলিসির সাথে নেয়া যায় এই সুবিধা। এর মাধ্যমে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স জানিয়েছে, কোম্পানিটির প্রায় ১৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে এই কোভিড ইন্স্যুরেন্সের। প্রায় সবাই করপোরেট গ্রাহক। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০টির মতো বীমা দাবি উত্থাপন হয়েছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গ্রাহকদের হসপিটালাইজেশন খরচের। তবে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কোন গ্রাহকের মৃত্যু হয়নি।

অন্যদিকে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই ২০২১ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৪০২ জন গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধ করেছে যারা কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা বাবদ মোট ১ কোটি ৩৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৮ টাকা পরিশোধ করেছে চার্টার্ড লাইফ।

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত বীমা কোম্পানিটির দু’জন গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিটি করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত মৃত্যুদাবি বাবদ ৬ লাখ ৭৬ হাজার ২শ’ টাকা এবং চিকিৎসা খরচ বাবদ ৭৮ হাজার ২৫০ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছে।

এ ছাড়াও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেটলাইফ (আলিকো), প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাথে কথা বলেও জানা গেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বীমা গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের বিষয়টি। সময় স্বল্পতার কারণে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বীমা দাবি পরিশোধের তথ্য দিতে না পারলেও এর সংখ্যা বেশ বড় হবে বলেই জানিয়েছে বীমা কোম্পানিগুলো।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, কোভিড-১৯ অন্যান্য রোগের মতোই একটি রোগ। তাই প্রচলিত স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমেই গ্রাহকরা এই রোগের চিকিৎসা খরচ পাচ্ছেন। বীমা গ্রহণের পর কোন গ্রাহক করোনা আক্রান্ত হলে তিনি ওই পলিসিতে নির্ধারিত সকল সুবিধা পাবেন। তবে করোনা ভাইরাস পজিটিভ থাকা অবস্থায় কারো বীমা পলিসি ইস্যু করা হয় না। এ ছাড়াও যেকোন পলিসির ক্ষেত্রেই করোনায় মৃত্যুদাবি পরিশোধযোগ্য।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের হেড অব ইম্প্যাক্ট বিজনেস শুভাশিষ বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশ বড় হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণকারীর সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগই বাসায় চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। ফলে হসপিটালাইজেশন ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে গ্রাহকের বীমা দাবি পাওয়ার সংখ্যা আরো কম।

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম জিয়াউল হক বলেন, গ্রাহক সেবাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা করোনা সংক্রান্ত বীমা দাবি পরিশোধ করেছি এবং যারা বীমা দাবি পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে আমরা দ্রুত পরিশোধ করেছি। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আমাদের গ্রাহকপ্রিয়তা বেড়েছে। আমাদের ব্যবসাও আগের তুলনায় বড় হচ্ছে। আমরা মনে করি, দ্রুত দাবি পরিশোধের কারণে এই ইতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, করোনার এই ভয়াবহ ছোবলে বিপর্যস্ত বীমা গ্রাহকদের পাশে দাঁড়াতেই আমরা এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনা সংক্রান্ত বীমা সুবিধা দেয়ার জন্য নতুন পলিসি চালু করেছে। এতে করে একজন গ্রাহকের বীমা পলিসি থাকার পরও নতুন আরেকটি পলিসি কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের গ্রাহকরা বিদ্যমান পলিসিতেই এ সুবিধা পাবেন।

ড. এম মোশাররফ বলেন, লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ইতোমধ্যে ইস্যুকৃত এবং নতুন যেগুলো ইস্যু হবে এমন সব হেলথ ইন্স্যুরেন্স, মেডিক্লেইম ইন্স্যুরেন্স, হসপিটালাইজেশন ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি স্বাস্থ্য বীমায় কোভিড-১৯ জনিত হসপিটালাইজেশনসহ মৃত্যুতে উক্ত বীমা পলিসিসমূহের আওতাভুক্ত হিসেবে গণ্য করে বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। একইসঙ্গে লাইফ বীমার অন্যান্য পলিসির ক্ষেত্রেও এ বিধান কার্যকর।