“এখন থেকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সে এ ধরনের অনিয়ম সংঘটিত করা হবে না”

নিজস্ব প্রতিবেদক: “এখন থেকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সে এ ধরনের অনিয়ম সংঘটিত করা হবে না” বলে অঙ্গিকার করেছেন বীমা কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ। এই হলফনামার ভিত্তিতে মীর নাজিমের অপসারণের সিদ্ধান্ত মার্জনা করে তাকে কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

তবে এর আগে একই ধরনের অপরাধের কারণে দু’টি বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীকে অনুমোদন দেয়নি সংস্থাটি। অপর দিকে মীর নাজিম উদ্দিনকে অপসারণের সিদ্ধান্ত দেয়ার পর কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মীর নাজিমের পক্ষে নি:স্বার্থ ক্ষমা চাইলে তা নাকোচ করে অপসারণের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। ফলে হলফনামা নিয়ে অপসারিত ব্যক্তিকে নিয়োগের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দু’বার অপসারণের সিদ্ধান্তের পর মুচলেকা নিয়ে আবার মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দেয়ার পিছনে আইডিআরএ’র দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একই সাথে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আইন সঙ্গত কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।

তাদের মতে, এ ধরনের ক্ষমা বীমা খাতে সুশাসনের অন্তরায়। এই প্রবণতা চালু হলে অনেকেই অপরাধ করার সুযোগ পাবে। তারা হয়তো শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেও মুচলেকার পথ বেছে নিবে।

সূত্র মতে, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সে মীর নাজিম উদ্দিনের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ জুলাই ২০১৯ সালে। এর আগে ১০ জুলাই মীর নাজিমের নিয়োগ অনুমোদন নবায়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আবেদন করেন।

ওই আবেদনের ভিত্তিতে মীর নাজিমকে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ সংক্রান্ত নথিতে আইডিআরএর’র ১২৬তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে তাকে অনুমোদন দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে মতামত দেয়া হয়। আইডিআরএ’র অধিকাংশ কর্মকর্তাই এই নিয়োগ নবায়নের সুযোগ নেই বলে মতামত দেন।

পরবর্তীতে আইডিআরএ’র একজন প্রভাবশালী কর্মকতার সিদ্ধান্ত অনুসারে নতুন করে ফাইল উত্থাপন করা হয়। মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতে নতুন করে মীর নাজিমের অনুমোদন নবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে ওই সূত্র জানায়।

মীর নাজিমকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইডিআরএ’র ১২৬তম বোর্ড সভায়। বীমা আইন লঙ্ঘন, অনিয়ম ও জালিয়াতি কর্মকাণ্ডের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পরে কর্তৃপক্ষের ১৩০তম বোর্ড সভায় মীর নাজিমকে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচ্যসূচিতে মীর নাজিমকে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করা হলেও এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পরবর্তীতে আলোচনার জন্য বোর্ডে উপস্থিত সকল সদস্য একমত হন। এই সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে।

এরপর ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার বিষয়ে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ার এবং মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ রিভিউ আবেদন করেন। তবে তাদের আবেদন ‘রিভিউ এর (সময়, ফরম ও ফি) প্রবিধানমালা, ২০১৫’ অনুযায়ী যথাযথ না হওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর তা নামঞ্জুর করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

সূত্র মতে, বীমা আইন লঙ্ঘন, অনিয়ম ও জালিয়াতির জন্য মীর নাজিমকে অপসারণসহ ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও মীর নাজিমকে ১ লাখ টাকা জারিমানা ও দোষী অন্যান্য কর্মকর্তাদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। এই নির্দেশ দেয়া হয় ১৫ নভেম্বর ২০২০ সালে।

এর প্রেক্ষিতে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স রিভিউ আবেদন করেন। গত ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত রিভিউ আবেদনের শুনানিতে মীর নাজিমকে অসরারণের সিদ্ধান্ত মার্জনা করা হয়। একই সাথে ৩শ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভবিষ্যতে এ ধরণের অপরাধ করবেন না মর্মে হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়।

সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ও ৭ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে সিটি সেন্টারে অবস্থিত ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং সিটি সেন্টার শাখা পরিদর্শন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সার্ভিলেন্স টিম।

পরিদর্শনে বীমা আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, গড়মিল তথ্য প্রদান, পরিচয় গোপন করে মোটা অংকের বেতনে মূখ্য নির্বাহীর ছেলেকে নিয়োগ, অবলিখন কর্মকর্তাকে এজেন্ট নিয়োগ, অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলনসহ ১০টি অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য পায় সার্ভিলেন্স টিম।

অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণসহ ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সরে বিরুদ্ধে ৬টি শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের ১২৬তম সভায়।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি অনিয়মের জন্য ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা আরোপসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, সিটি সেন্টার শাখার ব্যবস্থাপক এবং ওই শাখার অবলিখন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জরিমানা আরোপ; সিটি সেন্টারর শাখার কার্যক্রম বন্ধ; কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে পত্র প্রেরণ এবং কোম্পানি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত জরিমানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ থেকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেয়ার পরেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।