পুনর্বীমা দাবির ২১ কোটি টাকা নিয়ে ২ বছরেও গ্রাহককে পরিশোধ করেনি ইসলামী কমার্শিয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক: চার বছর আগে আগুনে পুড়ে যায় আফিল পেপার মিল। এর পরের বছর অর্থাৎ ৩ বছর আগে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয় ২৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ বছরেই পুনর্বীমাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন আফিল পেপার মিলের পুনর্বীমা দাবির ২১ কোটি ১৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে পরিশোধ করে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বীমা গ্রাহককে তার দাবির পুরো টাকা আজো পরিশোধ করেনি ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স। বীমা দাবি বাবদ আফিল পেপার মিলের এখনো পাওনা ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এর ফলে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে না পারায় দিন দিন সুদের টাকা বেড়েই চলছে। আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে মুক্তি পেতে বীমা উন্নয়ন ও নিযন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন আফিল পেপাল মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আফিল উদ্দিন। গত এপ্রিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে এই অভিযোগ দাখিল করেন আফিল পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আফিল উদ্দিন।

আইন অনুসারে, বীমা দাবিদারের পক্ষ থেকে সকল কাগজপত্র দাখিলের ৯০ দিনের মধ্যে দাবি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে প্রচলিত ব্যাংক রেটের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে সুদ মাসিক ভিত্তিতে হিসাব করে সুদসহ তা পরিশোধ করতে হবে। এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বীমা আইন ২০১০ এর ৭২ নং ধারার উপ-ধারা ২ এবং উপধারা ২ এর ১ অনুচ্ছেদে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পুনর্বীমার টাকা নিয়ে তা গ্রাহককে পরিশোধ না করা বড় অপরাধ। সরকার সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাথে পুনর্বীমাযোগ্য প্রিমিয়ামের ৫০ শতাংশ সাধারণ বীমা করপোরেশনকে দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। এর কারণ বীমা গ্রাহক যাতে তার ন্যায়সঙ্গত দাবি দ্রুত পায়। মূলত গ্রাহকদের সেবা নিশ্চত করার জন্য সরকারের এ আইন। সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পুনর্বীমার টাকা নিয়ে তা গ্রাহককে না দেয়া সরকারি তহবিল তছরুপের সামিল।

উল্লেখ্য, এর আগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও জালিয়াতি কারণে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে। এ সময়ে কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ অপসারণের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ‘ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃক এ ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত করবে না’ মর্মে হলফ নামা নিয়ে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিমকে অপসাররে নির্দেশ মার্জনা করে। তবে অপসারণের নির্দেশ মার্জনা করার কোনো বিধান বীমা আইনে নেই বলে মন্তব্য করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

আফিল পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আফিল উদ্দিন আইডিআরএ’র কাছে লিখিত অভিযোগে বলেন, আফিল পেপার মিলে আগুন লাগে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ। এর ২ মাস পরে আগুণে ক্ষয়ক্ষতির সকল প্রমাণাদি আফিল পেপার মিল কর্তৃপক্ষ ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের কাছে দাখিল করে। আফিল পেপার মিল ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সে ৫০ কোটি টাকার অগ্নিবীমা পলিসি করে ২০১৬ সালের ১ জুন।

ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ অর্থাৎ যেদিন আগুন লাগে সেদিনই জরিপকারী নিয়োগ করে। ২০১৮ সালে ১ জানুয়ারি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান তাদের জরিপ প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে আফিল পেপার মিলে আগুণে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা হয় ৪০ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ২৫৬ টাকা। যার মধ্যে ইসলামী কমার্শিয়ালের অংশ ২৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৫০ টাকা। বাকিটা অপর বেসরকারি কোম্পানির অগ্রনী ইন্স্যুরেন্সের পলিসিতে আবরিত। যা অগ্রনী ইন্স্যুরেন্স পরিশোধ করে দিয়েছে।

এরও প্রায় এক বছর পর ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রায়াত্ব পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন বীমা দাবির ২১ কোটি ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা অনুমোদন করে। পুনর্বীমা দাবি বাবদ অনুমোদিত এই টাকা পরবর্তী কোয়ার্টারের প্রিমিয়ামের সাথে সমন্বয় করার অনুমোদন করে। সারপ্লাস টিট্রির আওতায় সাধারণ বীমা করপোরেশন ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সকে এ টাকা পরিশোধ করে।

কিন্তু সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে বীমা দাবির টাকা পরিশোধ করলেও তা সময় মতো গ্রাহককে পরিশোধ করেনি ইসলামী কমার্শিয়াল। কোম্পানিটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে ২ বছর চার মাসে পরিশোধ করেছে ২২ কোটি টাকা। বাকি টাকা কবে নাগাদ পরিশোধ করবে তাও সঠিকভাবে জানাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন শেখ আফিল উদ্দিন।

তবে আফিল পেপার মিলের ডিজিএম (হিসাব) মো. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া (কনক) জানিয়েছেন, পরে আরো ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করায় এখন কোম্পানিটির কাছে পাওনা ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার।

আফিল উদ্দিন তার অভিযোগে বলেছেন, বীমা কোম্পানিটি সময় মতো টাকা পরিশোধ না করায় ব্যাংকের সুদ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অতিরিক্ত সুদের টাকাসহ বাকি টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন আফিল উদ্দিন। অভিযোগ পত্রের সাথে সুদ বৃদ্ধির একটি ক্যালকুলেশন শীটও দাখিল করেন আফিল উদ্দিন।

এ বিষয়ে আফিল গ্রুপের ডিজিএম (হিসাব) মো. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া (কনক) ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি সার্ভে রিপোর্ট জমা হওয়ার পর ৩ মাসের মধ্যে আফিল পেপার মিলের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার নিয়ম থাকলেও ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স বীমা দাবির অর্থ পরিশোধে নানা টালবাহানা করছে। সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে আফিলের ক্ষতির বিপরীতে ২১ কোটি টাকা পেলেও বীমা কোম্পানিটি আমাদের দায় ঠিকমতো পরিশোধ করছে না।

তিনি আরো বলেন, এমনিতেই কারখানা পুড়ে গেছে। আবার পেপার মিলের বিপরীতে ব্যাংকের ঋণও রয়েছে। যদি ব্যাংকের ঋণ ঠিকভাবে পরিশোধ করা যেত, তাহলে ব্যাংক থেকে আবার ঋণ নিয়ে ব্যবসা পুনরায় দাঁড় করানো সম্ভব হতো। এতে অনেকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও লাভবান হতো। এসব দুর্নীতিবাজ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কারণে দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।