আইডিআরএ’র নির্দেশ অমান্য, ১৪ মাসেও মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়নি মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে আইডিআরএ’র দেয়া নির্দেশ অমান্য করেছে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও গত ১৪ মাসেও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি বীমা কোম্পানিটি।

আইন লঙ্ঘন করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ শূন্য রাখায় কেন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না মর্মে চিঠি দেয়ার পরও মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়নি বীমা কোম্পানিটি। এমনকি এর সন্তোষজনক কোন ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি কোম্পানিটি।  

সবশেষ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আইডিআরএ প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও তা দু’মাসেও বাস্তবায়ন করেনি মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

তবে বীমা কোম্পানিটি বলছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে আইডিআরএ’র নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য তারা অন্তত আরো তিন মাস সময় চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে।

তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন মজুমদার। এরপর থেকেই শূন্য রয়েছে বীমা কোম্পানিটির এই শীর্ষ পদ।

বর্তমানে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চলতি দায়িত্বে রয়েছেন কোম্পানিটির ডিএমডি মোহাম্মদ সাইদুল আমিন। ২৭ জুলাই থেকে তাকে সিইও’র চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অথচ আইনে বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ একাধারে ৩ মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাবে না। তবে কর্তৃপক্ষ অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনায় উক্ত সময়সীমা আরো ৩ মাস বর্ধিত করতে পারবে৷

আইনে আরো বলা হয়েছে, এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ পূরণ করা না হলে কর্তৃপক্ষ কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ মাসেও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়ায় গত ১৯ মে ২০২১ বীমা কোম্পানিটিকে শোকজ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই চিঠিতে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কেন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না এবং কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার ব্যাখ্যা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জানতে চায় কর্তৃপক্ষ।  

এ প্রেক্ষিতে গত ২৭ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পাঠানো এক চিঠিতে বীমা কোম্পানিটি জানায়, বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে শত চেষ্টা করেও একজন দক্ষ এবং উপযুক্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে ইতোমধ্যে একটি জাতীয় দৈনিকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগর জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সাথে সিইও নিয়োগের ব্যর্থতার বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানায় কোম্পানিটি।

এদিকে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের এই ব্যাখ্যাকে অজুহাত বলে আখ্যায়িত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষ বলছে, বীমা কোম্পানিটি বিভিন্ন অজুহাতে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে গড়িমসি করছে।

এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই আরেক চিঠিতে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

ওই কমিটিকে স্বনামধন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান থেকে শুরু করে আবেদন গ্রহণ, মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণসহ সার্বিক কার্যক্রম ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান করতে নির্দেশ দেয়া হয়।   

তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে আইডিআরএ’র নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী।

কমিটি করে দু’মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, আইডিআরএ’কে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি এবং তাদের নির্দেশনা মেনে আমরা কাজ করছি।

কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অথবা সর্বনিম্ন আরো তিন মাস সময় চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।

তবে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, বীমা আইন ২০১০ এর ৮০(৪) উপধারায় বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ একাধারে ৩ (তিন) মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃপক্ষ অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনায় উক্ত সময় সীমা আরো ৩ (তিন) মাস বর্ধিত করিতে পারিবে৷

(৫) উপ-ধারা (৪) এ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন বীমা কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ পূরণ করা না হইলে কর্তৃপক্ষ কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করিতে পারিবে এবং কর্তৃপক্ষ যেইরূপ নির্ধারণ করিবে কোম্পানী তদানুযায়ী উক্ত প্রশাসকের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করিবে৷