ফারইস্টের এক একাউন্টে লেনদেন ৫ কোটি টাকা, স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে কর্মকর্তার জিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নোয়াখালী ডিভিশন ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুল মান্নানের নামে ঢাকার তোপখানা রোডে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলে প্রায় ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা লেনদেন করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার নামে একাউন্ট খুলে অবৈধভাবে এ লেনদেন করা হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আবদুল মান্নান। জিডি নং-১০৯৮, তারিখ-২১-১০-২০২১।  

একই অভিযোগে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় অপর একটি জিডি করেন তার সহকর্মী ফারইস্ট ইসলামী লাইফের খুলনা ডিভিশনাল ইনচার্জ মোস্তফা জামান হামিদী। জিডি নং-৯৯০, তারিখ-১৭/০৪/২০২১।  

জিডিতে আবদুল মান্নান উল্লেখ করেছেন, ১৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে তার সহকর্মী মোস্তফা জামান হামিদীর মাধ্যমে জানতে পারেন তাদের দু’জনের নামে ঢাকায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তোপখানা শাখায় তাদের অনুমোদন ব্যতীত হিসাব খুলে লেনদেন করা হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে হিসাব বিবরণীর তথ্য জানার চেষ্টা করেন আবদুল মান্নান। তবে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বলেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের এমডি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা)’র নির্দেশে তারা হিসাব খুলেছেন।

ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, যদি কোন তথ্য দিতে হয় এমডি’র অনুমতি লাগবে। পরবর্তীতে ব্যাংকটি ওই শাখার ম্যানেজারের সাথে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা বলেছেন বলে জিডিতে উল্লেখ করেছেন আবদুল মান্নান।

জিডিতে আরো বলা হয়েছে, আবদুল মান্নান তার সহকর্মীর মাধ্যমে জানতে পারেন একাউন্ট দু’টিতে প্রায় ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবদুল মান্নান জিডিতে উল্লেখ করেছেন, একাউন্ট নম্বরটি খোলার ব্যাপারে তিনি মোটেই অবগত নন এবং এর সাথে তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। তার আইডি কার্ড ও ছবি ব্যবহার এবং স্বাক্ষর জালিয়াতি করে একাউন্টটি খোলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় তিনি থানায় জিডি করেছেন। 

অপর দিকে মোস্তফা জামান হামিদী খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় হিসাব খোলার জন্য যান।

তবে হিসাব খোলার জন্য কর্তব্যরত অফিসার তাকে জানান, তোপখানা রোড ব্রাঞ্চ, ঢাকায় তার নামে একটি হিসাব খোলা আছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি নিয়ে সেকেন্ড ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তিনি তার ছবি ও আইডি কার্ড দেখান।

মোস্তফা হামিদীর জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ওই হিসাবে ব্যবহৃত ‘মোস্তফা’ নামে স্বাক্ষর তিনি কখনো তার ব্যাংক একাউন্টে ব্যবহার করেন না। ভবিষ্যতে যাতে তার কোন সমস্যা না হয় এ জন্য তিনি বিষয়টি থানায় সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করেন।

এ বিষয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহ ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আমার দায়িত্বকালে (২০১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১) আমি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের জোনাল অফিস, সার্ভিস সেন্টার ও ডিভিশনাল অফিস ইনচার্জের দৈনন্দিন লেনদেন করার জন্য প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বিভাগ/ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের প্রস্তুতকৃত একাউন্ট খোলা সংক্রান্ত কাগজপত্র সত্যায়নসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় একাউন্ট খোলা ও পরিচালনার অনুমোদন দিয়ে শত শত ফরোয়ার্ডিং প্রদান করি।

কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সার্থেই উক্ত ফরোয়ার্ডিং দেয়া হয়। এসব হিসাব কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বিভাগ/ ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণে প্রধান কার্যালয়, জোনাল অফিস, সার্ভিস সেন্টার ও ডিভিশনাল অফিস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।  

এখন স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কেউ একাউন্ট পরিচালনা করলে তা আমার জানার কথা না। আর কোম্পানির একাউন্ট পরিচালনার জন্য হিসাব বিভাগ ছিল। আমার কোন একক সিদ্ধান্তে একাউন্ট খোলা হয় নাই। তবে আমি মনে করি এ ধরণের ঘটনা খুবই দুখঃজনক। এ বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে দোষীদের আইনের আওতায় আনা উচিত।