আইন না মেনে আবদুল হককে ৩ দফা নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন বলছে প্রবিধানমালা অনুসারে যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করলে কোন ব্যক্তির মুখ্য নির্বাহী পদের নিয়োগ অনুমোদন করবে না বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
অথচ এ আইন লঙ্ঘন করে যোগ্যতার শর্তপূরণ ছাড়াই আবদুল হককে ৩ দফা নিয়োগ দিয়েছে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সে ১ বার ও নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে ২ দফা তার নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে।
২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পর ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
এ প্রবিধানমালার ধারা ৬ এর ২ উপ-ধারায় বলা হয়, প্রবিধান কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আগে নিয়োগ পাওয়া মুখ্য নির্বাহীদের প্রবিধানমালার শর্ত পূরণ করে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।
মূলত এ সময়েই প্রবিধানমালা অনুসারে শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় আবদুল হক মুখ্য নির্বাহী পদে থাকার যোগ্যতা হারান।
প্রবিধানামালার শর্ত অনুসারে মুখ্য নির্বাহীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ৩ বছর মেয়াদী স্নাতক ও ১ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি।
এ শর্তের কারণে আবদুল হক মুখ্য নির্বাহী পদে থাকার যোগ্যতা হারান। আবদুল হক ২ বছর মেয়াদী ডিগ্রি পাস। তার মাস্টার্স ডিগ্রিও নেই।
তবে যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করা ব্যক্তিদের পদ থেকে অপসারণ করার বিধান থাকলেও বীমা কোম্পানি এবং আইডিআরএ’র কেউই আবদুল হককে অপসারণের কোন উদ্যোগ নেয়নি।
বরং দফায় দফায় আবদুল হকের নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এমনকি আবদুল হকের নিয়োগ অনুমোদন দিতে আইনের মনগড়া ব্যাখাও দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা।
আইডিআরএ’র একটি সূত্র বলছে, বিগত বছরগুলোতে আবদুল হকের মুখ্য নির্বাহী পদে থাকা ও এফসিএ ডিগ্রিকে বিবেচনায় নিয়ে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অথচ বীমা আইন ২০১০ বা বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালায় এফসিএ ডিগ্রি থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যাবে এমন কোন বিধান নেই।
এছাড়া এফসিএ ডিগ্রি থাকলে মুখ্য নির্বাহী পদে শিক্ষাগত যোগ্যতার শিথিল করা হবে বা ওই ব্যক্তি মাস্টার্স করার সমমান ডিগ্রি ধরা হবে এমন কোন বিধান রাখা হয়নি বীমা আইন ও মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ প্রবিধানমালায়।
অপরদিকে প্রবিধানমালা কার্যকর হওয়ার আগে যেসব ব্যক্তিকে মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে তারা প্রবিধানমালার শর্ত পূরণ না করলেও তাদের অনুমোদন দেয়া যাবে এমন কোন বিধানও নেই প্রবিধানমালায়।
তবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা- ২০১২ অনুসারে, এফসিএ ডিগ্রি থাকলে ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ৩ বছরের শিথিলতা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতায় কোন শিথিলতা পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি বিধিমালায়।
অথচ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্ম অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না করে অনেকেই নিয়োগ অনুমোদন পেয়েছেন। এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা না দেয়া ও অনুমোদন বিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জমা দিয়েও অনেকেই নিয়োগ অনুমোদন পেয়েছেন। এসব অনুমোদনে অনৈতিক সুবিধা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
আবদুল হক মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান ১ ডিসেম্বর ২০১০ সালে। এ সময় তাকে ২ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর তার নিয়োগ অনুমোদনের মেয়াদ ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২ বছর বৃদ্ধি করে আইডিআরএ।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালার গেজেট প্রকাশ হয় ৩ জানুয়ারি ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহী পদে আবদুল হকের নিয়োগ অনুমোদন দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়োগ নবায়ন ৩ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৯ সালে ৬ জুলাই।
এবার ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স আবদুল হককে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। এ আবেদন করা হয়েছে গত ১৩ অক্টোবর।
২৯ নভেম্বর ২০২১ থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ২ বছরের জন্য তার এই নিয়োগ অনুমোদন চেয়েছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। গত ২৮ সেপ্টেম্বর এই সিদ্ধান্ত নেয় ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবদুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে আইডিআরএ'র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতার বলেন, দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য প্রবিধানমালা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই দক্ষ জনবল পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে তুলনামূলক যারা দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন তাদেরকে নিয়োগ দিতে হচ্ছে। সেক্টেরের স্বার্থেই এটা করতে হচ্ছে।