ডিজিটাইজেশনে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে দেশের বীমা খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাইজেশনে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে দেশের বীমা খাত। আসছে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম রশিদ হিসেবে কাগজে ছাপা রশিদের পাশাপাশি ইউএমপি’র মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ই-রিসিপ্ট প্রদান শুরু হচ্ছে। তবে এর দু’মাস পর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাগজে ছাপা রশিদ ব্যবহার করা যাবে না। গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত জিএডি সার্কুলার নং- ৮/২০২১ জারি করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এর আগে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল জিএডি সার্কুলার নং ৭/২০২১ জারি করে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহের ক্ষেত্রে গ্রাহককে ই-রিসিপ্ট দেয়া বাধ্যতামূলক করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । যা পরবর্তী ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আইডিআরএ। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বীমা কোম্পানিগুলোর ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, বীমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে বীমাকারী ও বীমা গ্রাহকদের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা প্রদান, বীমাকারী কর্তৃক বীমা গ্রাহকগণকে প্রিমিয়াম রশিদ প্রেরণ (প্রিমিয়াম রশিদ লেখা বা প্রিন্টের জন্য শ্রম ঘণ্টা, ডাক, কুরিয়ার ইত্যাদি) বাবদ খরচ সাশ্রয়, এ সংক্রান্ত প্রিমিয়াম রশিদ ছাপানো ও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য জটিলতা নিরসন, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধ, বীমা পলিসি গ্রাহকগণের টাকা আত্মসাৎ বন্ধ, গ্রাহক হয়রানি রোধ, বীমা গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধি, সরকারের রূপকল্প ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অংশ হিসেবে সামগ্রিকভাবে বীমা খাতকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনয়নপূর্বক স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেসসহ ইন্টিগ্রেটেড একাউন্টিং সফটওয়্যার, পলিসি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ইত্যাদির সমন্বয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে কার্যক্রম পরিচালনা ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।

রিয়াল টাইম ভিত্তিতে ই-রিসিপ্ট প্রদানের জন্য প্রিমিয়াম রশিদ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের নিমিত্ত বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সিন্টেম এবং কর্তৃপক্ষের ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি)’র মধ্যে এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)’র মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

১ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ থেকে প্রিমিয়াম রশিদ হিসেবে কাগজে ছাপা রশিদের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ইউএমপি’র মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ই-রিসিপ্ট (অরিজিনাল রিসিপ্টি বা ওআর, রিনিউয়াল রিসিপ্ট বা আরআর, মানি রিসিপ্ট বা এমআর) প্রদান করতে হবে। লাইফ বীমার ক্ষেত্রে সকল ধরণের প্রদেয় প্রিমিয়াম (প্রথম বর্ষ/ডেফার্ড/নবায়ন) এবং অন্যান্য ফি প্রয়োজনে একাধিক পিআর (প্রোভিশনাল রিসিপ্ট)’র মাধ্যমে সংগ্রহের পর যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পাদনপূর্বক ই-রিসিপ্ট এর মাধ্যমে ওআর বা পিআর ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে।

১ মার্চ ২০২২ তারিখ থেকে বীমা পলিসি গ্রাহকগণের নিকট হতে গৃহীত প্রিমিয়ামের বিপরীতে কাগজে ছাপা রশিদের পরিবর্তে ইউএমপি সিস্টেম হতে প্রস্তুতকৃত ই-রিসিপ্ট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তবে, বিশেষ প্রয়োজনে বীমাকারীর প্রচলিত প্রিমিয়াম রশিদ (ওআর/আরআর/এমআর) প্রদান করা যাবে, এক্ষেত্রে বীমাকারীর প্রচলিত প্রিমিয়াম রশিদে ইউএমপি হতে জেনারেটেড প্রিমিয়াম রশিদের লিংকটি অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।

এক্ষেত্রে ই-রিসিপ্ট এর জন্য গৃহীতব্য পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ এবং বীমাকারীর চাহিদার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিমিত্ত বীমাকারীর আইটি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের দপ্তরে উন্নয়ন ও গবেষণা শাখায় যোগাযোগ করতে পারবে।

১ মার্চ ২০২২ তারিখ থেকে নন-লাইফ বীমায় বিশেষ ক্ষেত্রে কাগজে ছাপা মানি রিসিপ্ট (এমআর) প্রদান অত্যাবশ্যকীয় হলে ইস্যুকৃত কাগজে ছাপা মানি রিসিপ্টসমূহের মাসিক বিবরণী নির্ধারিত ছক মোতাবেক পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করতে হবে। একইসাথে উক্ত কাগজে ছাপা মানি রিসিপ্টসমূহ ইস্যু করার পরবর্তী কার্যদিবসের মধ্যে মানি রিসিপ্টসমূহের তথ্য ইউএমপি আপলোড করতে হবে।

১ জানুয়ারি ২০২২ হতে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিবিধ আয় যেমন: পুরাতন দলিল-দস্তাবেজ বিক্রয়, পুরাতন/অকেজো গাড়ি বা অন্যান্য সম্পদ এবং ফরমসহ বিবিধ কাগজ-পত্রাদি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এমআর প্রদান না করে এআর (একনলেজমেন্ট রিসিপ্ট) প্রদান করা যেতে পারে।

বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক পলিসি ইস্যু ও পলিসি ব্যবস্থাপনা, হিসাব, বিনিয়োগ ও শেয়ার ব্যবস্থাপনা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির জন্য আলাদা আলাদা সফটওয়ার ব্যবহৃত হলে সেই সকল সফটওয়্যারের তালিকা ও তথ্যাদি নির্ধারিত ছক মোতাবেক সাকুলার জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করতে হবে এবং বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের সফটওয়্যারে কোন ধরণের পরিবর্তন সাধিত হলে (নতুন সংযোজন/রিপ্লেসমেন্ট/আপগ্রেডেশন ইত্যাদি) তাও নির্ধারিত ছক মোতাবেক পরিবর্তনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করতে হবে।

ডিজিটাইজেশন থেকে পরবর্তী ধাপ ডিজিটালাইজেশন অর্থাৎ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্লকচেইন ইত্যাদির সমন্বয়ে নির্ভুল ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বীমা খাতের পেনিট্রেশন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বীমা খাতে আরো স্বচ্ছতা আনয়নপূর্বক গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে পেনিট্রেশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে ত্বরান্বিত করতে হলে বীমা খাতকে শুধু ডিজিটাইজেশন বা অটোমেশন নয়, নিশ্চিত করতে হবে ডিজিটালাইজেশন, আর ডিজিটালাইজেশনের পূর্বশর্ত হিসেবে বীমাকারীর আইটিসহ সংশ্লিষ্ট জনবলকে ইন্স্যুরটেক, সাপটেক, রেজটেক ইত্যাদির মত আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সার্কুলারটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের ২৬ আগস্ট ২০২১ তারিখের (সূত্রঃ বিআইএ-৩(৩৫)/২০২১-২৩৭) পত্রে উল্লিখিত সুপারিশসমূহ আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ (সংযোজিত) গ্রহণপূর্বক এই সার্কুলার জারি করা হলো।

এই সার্কুলার জারির তারিখ থেকে কর্তৃপক্ষের জিএডি সার্কুলার নং-৭/২০২১, তারিখ: ২৬ এপ্রিল ২০২১ বাতিল মর্মে গণ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষতির এই সার্কুলারে।