২০২১ সালে যাদের হারিয়েছে দেশের বীমা খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায় নিয়েছে আরেকটি বছর। সেই সাথে নিভে গেছে কিছু প্রাণ। যাদের ঘিরে আলোকিত ছিল দেশের বীমা খাত, তাদের অনেকেই এবার পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। তবে রেখে গেছেন তাদের কর্ম আর স্মৃতিময় দিনগুলো।

২০২১ সালে বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছে দেশের বীমা খাত। নতুন বছরে এসে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি স্মরণ করছে এসব গুণীজনকে।

মাহমুদুন নবী:

বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব মাহমুদুন নবী ছিলেন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি'র প্রধান সম্পাদক। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি বীমা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স ও সর্বশেষ দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন।

মাহমুদুন নবী বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সাবেক মেম্বার, ইনস্টিটিউট অব ইন্স্যুরেন্স এক্সিকিউটিভ বাংলাদেশ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি'র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে প্রধান সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন।

ফরিদপুরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার কৈজুরী মিয়া বাড়িতে ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন মাহমুদুন নবী।

রেজাকুল হায়দার:

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজাকুল হায়দার ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

বিশিষ্ট শিল্পপতি রেজাকুল হায়দার ইয়ুথ গ্রুপ, শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লি. এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. এর চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং মিডল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লি. ও অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

হাবীব জামান:

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উদ্যোক্তা ও সাবেক পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি কে এম হাবীব জামান ইন্তেকাল করেন ২০২১ সালের ২১ মে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

হাবীব জামান একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি তরঙ্গ বাংলাদেশ লি., তাজ চিশতী প্রপার্টিজ লি. এর চেয়ারম্যান ও ক্যানাডিয়ান স্যুয়েটার্স লি. এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স লি. এর সাবেক পরিচালক ছিলেন।

মুসা মিয়া:

মোহাম্মদ মুসা মিয়া ছিলেন কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান এবং কুলিয়ারচর গ্রুপের চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত থেকে তিনি ২০২১ সালের ১৯ জুন ইন্তেকাল করেন।

মুসা মিয়ার শিক্ষা জীবন শুরু কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাথমিক শাখায়। ১৯৭৫ সালে কুলিয়ারচর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭৭ সালে চট্রগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৯ সালে একই কলেজ থেকে বি.কম পাশ করেন।

১৯৯৪ সালে নির্মিত দেশের বৃহত্তম কুলিয়ারচর সোয়েটার ইন্ডাষ্ট্রিজ লি.সহ গাজীপুরে একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে মুসা মিয়ার। তিনি এনসিসি ব্যাংকের অন্যতম উদ্যেক্তা ও শেয়ার হোল্ডার। ১৯৯০ সালে প্রথম সিআইপি মর্যাদা পান মুসা মিয়া।

মুসা মিয়া ১৯৫৮ সালের ৫ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

এমএ সালাম:

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন মো. আবদুস সালাম (এমএ সালাম) । কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে গেলো বছরের ২ এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এমএ সালাম ১৯৫৬ সালে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব এমএ সালাম কর্মজীবনের শুরুতে লিবিয়ান সরকারের অধীনে দীর্ঘ ৭ বছর ইংলিশ লেকচারার ছিলেন। পরবর্তীতে ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে অবলিখন, দাবি ও পুনর্বীমা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মূখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি ইন্স্যুরেন্স একাডেমি ও ব্যাংক ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ বিষয়ে পাঠদান করতেন।

আবদুল খালেক:

স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সেক্রেটারি ছিলেন মো. আবদুল খালেক। ২০২১ সালের ২৪ মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। নিজ গ্রাম নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর দত্তপাড়ায় চির নিদ্রায় শায়িত আছেন আবদুল খালেক।

জাহিদ আলী:

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এইচআরডি প্রধান ইভিপি মো. জাহিদ আলী। গত ১৩ জুন ২০২১ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।

জাহিদ আলী ২০১৩ সালে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বীমা কোম্পানিটিতে কর্মরত ছিলেন।

মো. ইব্রাহিম:

স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. ইব্রাহিম। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে গত ৪ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর।

ইব্রাহিমের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর গ্রামে। স্বদেশ ইসলামী লাইফের আগে তিনি ট্রাষ্ট ইসলামী লাইফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ছিলেন।

জাহিদুল ইসলাম:

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দিনাজপুর সার্ভিস সেন্টারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস-প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন ২৮ জুন, ২০২১।

জাহিদুল ইসলাম দিনাজপুর কেবিএম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর।

মশিউর রহমান:

প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর।

মশিউর রহমান প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ঢাকা জোন-১৩ এর আওতাধীন ফরিদাবাদ সাংগঠনিক অফিসে কর্মরত ছিলেন।