অগ্নি বীমায় ছাড় দিয়ে ঝুঁকি গ্রহণ, আইডিআরএ’র হুশিয়ারি

আবদুর রহমান আবির: আইন লঙ্ঘন করে প্রিমিয়াম ছাড় দিয়ে অগ্নি বীমা ঝুঁকি গ্রহণের বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । গত ২৭ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত সার্কুলার নং নন-লাইফ- ৮৭/২০২২ জারি করে এই হুশিয়ারি দেয়া হয়।

সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ৭ মে দেশের সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ‘অগ্নি বীমা ট্যারিফ- ২০১৯’ পরিপালন বাধ্যতামূলক করা হয়। এই ট্যারিফে ফায়ার এক্সটিংগুইশার অ্যাপ্লাইয়ান্স (এফইএ) বা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট তথা ছাড়ের বিধান রাখা হয়েছে।

এই ছাড় পেতে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরমে আবেদন জানাতে হয়। এরপর কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিদর্শন করে উপযু্ক্ত এফইএ ডিসকাউন্ট অনুমোদন করেন। এক্ষেত্রে দূরত্বের ভিত্তিতে পরিদর্শন ফিও পরিশোধের বিধান রয়েছে।

তবে আইডিআরএ বলছে, ফায়ার এক্সটিংগুইশার অ্যাপ্লাইয়ান্স (এফইএ) বা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র সম্পর্কিত অগ্নি বীমা ট্যারিফ-২০১৯ এর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন কোন নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান অগ্নি বীমা পলিসির সাথে প্রভিশনাল এফইএ ডিসকাউন্ট দিয়ে বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করছে।

এর ফলে বিদ্যমান বীমা আইন যেমন লঙ্ঘিত হচ্ছে তেমনি এ ধরণের ব্যত্যায় বীমা খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে অন্তরায়। এ ধরণের কার্যক্রমের ফলে বীমা খাত তার যথাযথ প্রিমিয়াম আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।

এই প্রেক্ষিতে নন-লাইফ বীমা খাতে সুশাসন ও কাঙ্খিত শৃঙ্খলা আনয়নের স্বার্থে সার্কুলার নং নন-লাইফ- ৮৭/২০২২ জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। সার্কুলারে বলা হয়েছে-

“কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রিমিয়াম রেট অনুমোদিত হওয়ার পূর্বে প্রভিশনাল এফইএ ডিসকাউন্ট প্রদানের মাধ্যমে বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করা যাবে না। এ বিষয়ে ব্যত্যয় হলে বীমা আইন ২০১০ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট বীমা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।”

এ বিষয়ে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক-উর রহমান বলেন, ফায়ার ট্যারিফে এফইএ ছাড়ের মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস মেনেই এটা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এফইএ বাস্তবায়নের দায়িত্ব আইডিআরএ’র। নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে যায় এবং সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সেটা অনুমোদন দেয়।

তারেক-উর রহমান আরো বলেন, সাধারণত বীমা কোম্পানিগুলো প্রভিশনাল এফইএ ডিসকাউন্ট দিয়ে বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করে। তবে এ ব্যাপারে আইডিআরএ’কে খুব তৎপর হতে হবে। কারণ, আবেদন করার তিন বছর পর এটা অনুমোদন দিলে তো হবে না। উপযুক্ত সময়েই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তা (নন-লাইফ, রেটিং) মোহাম্মদ মোর্শেদুল মুসলিম বলেন, সম্প্রতি মেট্রো নামে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৭০ শতাংশ এফইএ (ফায়ার এক্সিংগুইশার অ্যাপ্লাইয়ান্স) ডিসকাউন্ট সুপারিশ করেছি।

তিনি বলেন, এফইএ ডিসকাউন্টের মাত্রা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটিতে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা কতটা কম- তার ওপর। মেট্রো নামের ওই প্রতিষ্ঠানে স্প্রিঙ্কলার্স ও হাইড্র্যান্টসসহ অগ্নি নির্বাপনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৭০ শতাংশ এফইএ ডিসকাউন্ট সুপারিশ করেছি।

এ বিষয়ে বীমা বিশেষজ্ঞ এ কে এম এহসানুল হক এফসিআইআই বলেন, বিশ্বের কোন দেশে ১০ শতাংশের ওপর এফইএ ছাড় দেয়া হয় বলে জানা নেই। দুবাইয়ে আমি দীর্ঘ দিন নন-লাইফ বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছি। সেখানে ১০ শতাংশের ওপর কোন এফইএ ছাড় দিতে দেখিনি। তিনি বলেন, এটাই আন্তর্জাতিক চর্চা।