বীমা এগিয়ে যাবে, পিছিয়ে থাকবে না: শেখ কবির হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরে বীমা কোম্পানিগুলোর নতুন নতুন প্রোডাক্ট তৈরি এবং দ্রুত দাবি পরিশোধের বিষয়টি তুলে ধরে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেছেন, আমরা মনে করি বীমা এগিয়ে যাবে। বীমা পিছিয়ে থাকবে না।

বীমা খাতের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন শেখ কবির হোসেন বলেন, আমি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ্য মানুষ, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি দোয়া করি- আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনি আপনার নেতৃত্বে বীমা খাত বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিবে।

আজ মঙ্গলবার (১‌ মার্চ) সকালে জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজক।

শেখ কবির হোসেন বলেন, আমরা জানি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালিন আলফা ইন্স্যুরেন্সের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সুসংগঠিত করেছিলেন। বীমাকে তিনি তার আন্দোলনের প্লাটফরম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কারণ জীবন বীমা হচ্ছে এমন একটি সেক্টর যার মাধ্যমে একেবারে নিম্নস্তর থেকে অট্রালিকা পর্যন্ত সবার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা যায়।

বীমা এসোসিয়েশনের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়ারল ট্রাস্ট্রের অনুমোদনক্রমে সরকার ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুধু আমি না, আমরা এই পরিবার আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শেখ কবির হোসেন বলেন, আমি গর্ব করি বঙ্গবন্ধু ও আপনি আমাদের বীমা পরিবারের সদস্য। এটি আমাদের বীমা খাতের জন্য একটি বিশাল প্রাপ্তি। তাই আমি আমার বীমা পরিবারের সকলের প্রতি আহবান রাখব- আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াই। তার হাতকে শক্তিশালী করি। আপনাদের কাছে এটাই আমার আবেদন।

আমি এখানে নজরুল ইসলাম এনআই খানের নাম বিশেষভাবে স্মরণ করছি। কারণ বঙ্গবন্ধুর আলফা ইন্স্যুরেন্সের যোগদানের তারিখটা তার কাছ থেকেই পেয়েছি। তিনি আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন।

এবছরে বীমা প্রতিপাদ্য বীমায় সুরক্ষিত থাকলে এগিয়ে যাব সবাই মিলে। যে দেশের বীমা খাত যত উন্নত সে দেশের অর্থনীতি তত শক্তিশালী, জনগণ তত নিরাপদ।

বিআইএ প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বীমা খাত ব্রিটিশ আমলের আইন দারা পরিচালিত হত। ২০১০ সালে নতুন বীমা আইন আপনি করলেন। ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করেন। এখনো বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে স্থায়ী লোক বলের সংকট বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্যান্ত দুঃখ জনক। 

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে কমিশনে প্রেরণে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। নিজেদের পারদর্শিতা বাস্তবায়নের পূর্বেই তারা অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। এতে করে কর্তৃপক্ষের কাজের গতি শ্লথ হয়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ কমিশন বা কমিটি এখানে নাই। প্রথমবার  মেয়াদে এখানে পূর্ণাঙ্গ কমিশন ছিল, এরপর আর পূর্ণাঙ্গ কমিশন হয় নাই।  কোনো সময় ৩ জন, কোনো সময়ে ২ জন কাজ করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এদিকে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। ২জন সদস্যের পদ শুন্য থাকায় বর্তমানে কাজের পরিপূর্ণতা আসছে না। তাই এ সংকট উত্তোরণে আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

তিনি আরো বলেন, মোটরযান আইন ২০১৯ এ তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাতিল করার ফলে জনসাধারণের মাঝে মোটরযান বীমা না করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তবে মোটরযান আইন ২০১৮ এর ৬০ ধারার ২ এ বীমা করার বিষয়ে বিধান থাকলেও মোটরযানের মালিকগণ সেটির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এমনকি সরকারি প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসিন রয়েছে।

বীমা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশেই গাড়ি চলে এ আমার জানা নাই। এই পরিকল্প চালু করা অতীব জরুরি। আপনি বলেছিলেন থার্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স এটা কোনো ইন্স্যুরেন্সই না।  একটা লোক মারা গেলে ২০ হাজার টাকা পাবে এটা হতে পারে না। তার প্রেক্ষিতে আমরা এসোসিয়েশন ও আইডিআরএ থেকে যৌথভাবে একটি প্রপোজাল পেশ করেছি। সেটা হলো মোটর লায়াবেলিটি ইন্স্যুরেন্স। অর্থাৎ একজন পথচারি মারা গেলে সে কয়েক লক্ষ টাকা পাবে এবং যে গাড়িটি ক্ষতগ্রস্ত হবে তারাও কিছু পাবে।  সেটি প্রস্তাব করা হয়েছে কিন্তু আজো অনুমোদন হয় নাই। এ বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  মোটরযান বীমা না করায় সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, জনগণও বীমা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শেখ কবির হোসেন বলেন, মার্চ মাস বঙ্গবন্ধুর জন্ম মাস, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বীমা কোম্পানিতে যোগদান তাই মার্চ মাসকে বীমা সেবা মাস হিসেবে পালন করার জন্য আমরা বীমা এসোসিয়েশন থেকে ঘোষণা করেছি। এতে করে বীমা বিষয়ে জনগণের একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলে আমি মনে করি। বীমা খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে প্রতীয়মান হয়।

এবছর অনেকগুলো নতুন নতুন প্রডাক্ট তৈরি হয়েছে আমাদের সহযোগিতায়। আপনি জেনে খুশি হবেন সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানি ৭ দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করছে। এটা অত্যান্ত আনন্দের বিষয়। আমরা মনে করি বীমা এগিয়ে যাবে। বীমা পিছিয়ে থাকবে না।

আমি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ্য মানুষ, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি দোয়া করি- আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনি আপনার নেতৃত্বে বীমা খাত বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিবে।