কৃষি বীমার ব্যাপক প্রচলন ছাড়া অর্থনীতি টেকসই হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষি বীমার ব্যাপক প্রচলন ছাড়া অর্থনীতি টেকসই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ‘বাংলাদেশে কৃষি ক্ষুদ্রবীমা বাজারের সম্ভাবনা উন্মোচন: সম্ভাবনা ও ঝুঁকি’ শীর্ষক কর্মশালার আলোচকরা। তারা বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের কৃষকদের বীমার আওতায় নিয়ে এলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশের কৃষকেরা সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি বীমার আওতায় এনে তাদের ক্ষতি কিছুটা পূরণ করা যাবে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের অর্থায়নে এই কর্মশালার আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ হারুন পাশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন কোরিন হেনচোজ পিগনানি, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন, সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী প্রমূখ।
কৃষি বীমায় সরকারের আগ্রহ ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, কৃষি বীমার জন্য একটি গাইডলাইন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। তিনি বলেন, মৎস এবং প্রাণী সম্পদকেও বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
দেশের আর্থিক উন্নয়নে কৃষি বীমার গুরুত্ব এবং সাধারণ মানুষের জন্য বীমা সেবাকে সহজলভ্য করতে সরকারী সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। তিনি দরিদ্র বীমা গ্রাহকদের জন্য প্রণোদনার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান কৃষি বীমার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ কৃষকরা তুলনামূলক কম সচেতন। প্রথমে আমাদের কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য বীমা কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। আর কৃষি বীমা আরও সহজ করতে হবে যাতে করে কৃষকরা সহজেই বীমা সুবিধা পেতে পারে। কৃষি বীমা সহজীকরণের মাধ্যমে কৃষকদের এতে সংযুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সকল কৃষককে এর আওতায় আনতে কৃষি বীমার প্রিমিয়াম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। কৃষকের জন্য বীমা দাবির পরিশোধের জন্য ৯০ দিন অনেকদিন হয়ে যায়। এটা যদি ১৫ দিনে নিয়ে আসা হয় তাহলে কৃষকদের জন্য অনেক ভালো হয়। কৃষি বীমা আরও জনপ্রিয় করতে হলে আমাদের বীমা অ্যাপস এর ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং এর প্রচলন বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে এর ব্যাপকতা।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, কৃষি খাত হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। বাংলাদেশের মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে। কৃষকদের সহযোগিতা করতে পারলে দেশের অর্থনীতি খুব শক্তিশালী হবে। বীমা শিল্পের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। তিনি এ পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। এই সেক্টরের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে তা পরিচালনা করছে। কৃষি খাত সহ অন্যান্য খাতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে আসছে। কৃষি বীমা শিল্পে সরকার যদি সরাসরি সহযোগিতা করে তাহলে এ খাত অনেক এগিয়ে যাবে। আর এ জন্য ভ্যাট-ট্যাক্স মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষকদের আন্দোলনের কথা আমরা শুনি কিন্তু আমাদের দেশে কৃষকরা কোনদিন তাদের দাবি দাওয়ার জন্য আন্দোলন করেনি। তাই আমাদের তাদের জন্য সহযোগিতা করতে হবে। সাধারণ বীমা করপোরেশনের পক্ষে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এটার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষি বীমা কোম্পানি নামে যদি পৃথক কোম্পানি করে তাহলে আরো এগিয়ে যাবে বীমা খাত।
তিনি আরো বলেন, কৃষকদের কৃষি বীমার আওতায় নিয়ে আশা হলে তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে এই বীমার। আবার নতুন করে চাষাবাদ শুরু করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট বি এম ইউসুফ আলী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষি খাতের অবদানে ভূমিকা রয়েছে। বছরের পর বছর দেশের দরিদ্র বিমোচন কৃষিখাত মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। কৃষকেরা অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের। তাদের অধিকাংশই এখনো ব্যাংক ঋণ সহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা হতে বঞ্চিত। তাদের জন্য কৃষি বীমা প্রয়োজনীয় অনস্বীকার্য। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গ্রামীণ ক্ষুদ্র কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হয়। তার জন্য তাদের বীমা সুবিধা আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।
প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য প্রতিবছর কৃষিপণ্য ফসলাদি উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনে আবহাওয়া আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া অস্বাভাবিক রূপ পরিবর্তন করেছে। এতে করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
এদেশে কৃষি বীমার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমে ইউনিয়ন ভিত্তিক কিশোরদের জীবনমান বিবেচনা করে বীমা সুবিধার আওতায় এনে কৃষি বীমা চালু করা যেতে পারে।