অতিরিক্ত ব্যয় নেই ১৫ লাইফ বীমা কোম্পানির, খরচ কমেছে ৩৪৭ কোটি টাকা

আবদুর রহমান আবির: সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০২১ সালে দেশের বেসরকারি ১৫টি লাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা খাতে অনুমোদিত ব্যয়সীমার চেয়ে কম খরচ করেছে। কোম্পানিগুলোর এই কম খরচের পরিমাণ ৩৪৭.০৪ কোটি টাকা।

এর আগে ২০২০ সালেও কোম্পানিগুলো ৩২৪.১৬ কোটি টাকা কম খরচ করেছিল। তবে নতুন-পুরনো ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে তিনটির তথ্য পাওয়া যায়নি।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আইন মেনে ব্যবসা করায় কিছু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খরচ আগে থেকেই কম ছিল। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যয় পুনর্ভরণের অঙ্গীকার করার পর বেশ কিছু কোম্পানি তাদের ব্যবস্থাপনা খরচ অনুমোদিত সীমার নিচে নামিয়ে এনেছে।

সবশেষ ২০২১ সালের ২৭ মে দেশের লাইফ বীমা খাতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

এতে কোম্পানিগুলোর সুপারভাইজরি লেভেলে ৫টি গ্রেডের পরিবর্তে ৩টি গ্রেড রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে এই তিন গ্রেডের জন্য বেতন-ভাতা, কমিশন, বোনাস ও যাতায়াতসহ সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ খরচের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।

তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ১৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ২৯৮২.৭০ কোটি টাকা। তবে কোম্পানিগুলোর প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ২৬৩৫.৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩৪৭.০৪ কোটি টাকা কম খরচ করেছে।

এর মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন মেটলাইফ (বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ) কম ব্যয় করেছে ১০৯.৫৫ কোটি টাকা। এরপরেই রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কোম্পানিটি গেলো বছর ১০৬.০৩ কোটি টাকা কম খরচ করেছে।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাপনা খাতে কম খরচ করেছে ৬৯.২১ কোটি টাকা। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০.১৩ কোটি টাকা ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১০.৯৭ কোটি টাকা কম খরচ করেছে।

গেলো বছর আলফা লাইফ ০.৪২ কোটি টাকা, আস্থা লাইফ ০.৬৩ কোটি টাকা, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ১.৬৯ কোটি টাকা, মেঘনা লাইফ ৫.৪৫ কোটি টাকা কম খরচ করেছে।

এ ছাড়াও পপুলার লাইফ ৪.৮৮ কোটি টাকা, প্রগতি লাইফ ৫.৫৩ কোটি টাকা, প্রাইম ইসলামী লাইফ ৪.৮৭ কোটি টাকা, রূপালী লাইফ ৪.৫৮ কোটি টাকা, সন্ধানী লাইফ ২.০৪ কোটি টাকা কম খরচ করেছে।

কম খরচের বিষয়ে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দিন বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে আমরা কোম্পানির সর্বক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আইন মেনে ব্যবসা করায় খরচ যেমন কমছে, তেমনি বাড়ছে প্রিমিয়াম সংগ্রহ। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা বৃদ্ধির ফলে কমে আসছে স্থায়ী খরচের হার।

এ বিষয়ে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব বিধি-বিধান পুরোপুরি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। এর ফলে কোম্পানির সব জায়গায় একটা শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা সংগ্রহের খরচ আমরা কমিয়ে এনেছি।

এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে মাঠপর্যায়ে লেয়ার কমিয়ে আনা হয়েছে, ফলে খরচও কমেছে। নবায়ন প্রিমিয়াম না আসা পর্যন্ত কমিশনের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে, এতে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে। সার্বিকভাবে কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচের হারও কমে এসেছে।

প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ বলেন, আমরা সব সময়ই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে ব্যবসা পরিচালনার চেষ্টা করি। নিয়মের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনার ফলে অতিরিক্ত কোন খরচ হয় না। তাছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহারে স্বচ্ছতা যেমন আসছে তেমনি খরচও কিছুটা কমছে। আর ব্যবসা বৃদ্ধির ফলে সার্বিকভাবে আমাদের খরচের হারও কমে আসছে।

আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী শামসুল ইসলাম বলেন, আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুসারে আমরা আমাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আর আস্থা লাইফ কোন ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিষ্ঠান নয়, এটি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। এখানে একশ’জনের কাজ চল্লিশজন করে যাচ্ছে। ফলে আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় কিছু কম।