ডেল্টা লাইফের প্রশাসককে অব্যাহতি, আগামীকাল দায়িত্ব নিচ্ছে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ
আবদুর রহমান আবির: ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বর্তমান প্রশাসককে অব্যাহতি দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় এবার দায়িত্ব গ্রহণ করছে ৮ সদস্যের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ। আগামীকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এই দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হবে।
আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত পৃথক দু’টি চিঠি কোম্পানিটির বর্তমান প্রশাসক মো. কুদ্দুস খান এবং পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদারকে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২২ আগস্ট সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আদেশের প্রেক্ষিতে বীমা আইন ২০১০ এর ৯৯ ধারা অনুযায়ী ডেল্টা লাইফের প্রশাসক মো. কুদ্দুস খানকে প্রশাসকের পদ হতে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক প্রশাসক নিয়োগের অবসানে আদেশ প্রদান করা হয়েছে, যা আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
এমতাবস্থায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রশাসক হিসেবে সকল কার্যক্রম পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের নিকট হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মো. কুদ্দুস খানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ২৪ জুলাই আইডিআরএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ডেল্টা লাইফে সমঝোতার মধ্য দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে আইডিআরএ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর গত ২২ আগস্ট ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সমঝোতা চুক্তি অনুমোদন দেন সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ শুনানী শেষে এই অনুমোদন দেন।
এর আগে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। পরে গত দেড় বছরে ৩ দফায় প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়। সবশেষ প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আছেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য কুদ্দুস খান।
চিঠিতে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে বলা হয়েছে:
পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, যিনি কোম্পানিটির নিরপেক্ষ পরিচালক; ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জুনায়েদ শফিক; পরিচালক সুরাইয়া রহমান, তিনি সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন; পরিচালক আদিবা রহমান, যিনি কোম্পানিটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা; পরিচালক জেয়াদ রহমান, তিনি সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন; নিরপেক্ষ পরিচালক সাকিব আজিজ চৌধুরী, পরিচালক চাকলাদার রেজানুল আলম এবং পরিচালক সাকিব আজাদ।
বীমা কোম্পানিটি পরিচালনায় ৯টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে চিঠিতে:
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- প্রচলিত আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সকল কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। কোম্পানির আর্থিক বিবরণী সম্পর্কিত তথ্যাদি উদঘাটনে নতুন করে অডিট ফার্মের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। ইতোপূর্বে নিরীক্ষিত বিষয়াবলি শুনানি সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করতে হবে। পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক দ্রুততম সময়ের মধ্যে এক বছরের ব্যবসায়িক কৌশলপত্র প্রদান করতে হবে এবং তার অগ্রগতি প্রতি এক মাস অন্তর কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হবে।
বীমা আইন ও অন্যান্য আরোপিত বিধি নিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে অতি দ্রুত একজন দক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। পূর্বে যদি কোন অনিয়ম চিহ্নিত হয়ে থাকে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পূর্বে আরোপিত জরিমানা আইন অনুযায়ী বিবেচিত হবে।
এ ছাড়াও পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক হিসেবে মন্ত্রণালয়ের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধিকে (যুগ্ম সচিবের নিম্নে নয়) নিয়োজিত করা হবে।