দ্বিমুখী চাপে বীমার মুখ্য নির্বাহীরা

আবদুর রহমান আবির: একদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-নিষেধ, অন্যদিকে মালিকদের অবৈধ আবদার- কোনটি সামাল দেবেন বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা! এমন দ্বিমুখী চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-নিষেধ না মানলে হবেন অপরাধী; জুটতে পারে জেল-জরিমানা। আবার মালিকদের কথা না শুনলেও থাকবে না চাকরি; বন্ধ হবে রুটি-রুজির পথ। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির উন্নয়ন বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা –কোনটিতেই মনোযোগ দিতে পারছেন না বীমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা।

ফলে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের পরিবর্তে এখন তারা চাকরি রক্ষার কৌশল রপ্ত করতেই ব্যতিব্যস্ত।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই দেশের বীমা খাতে দক্ষ জনবলের চরম সংকট। তার ওপর মালিকদের অনাকাঙ্খিত চাপ এই সংকট আরো বাড়িয়ে তুলছে। নেতিবাচক ইমেজ ও কাঠামোবিহীন বেতন-ভাতার কারণে এমনিতেই উচ্চ-শিক্ষিতরা বীমা পেশায় আসতে চায় না। আবার বীমা পেশায় যাদের ডিগ্রি আছে এবং কিছুটা দক্ষতাসম্পন্ন তাদের অনেকেই এখন পেশা বদলের কথা ভাবছেন নানামুখী চাপে।

বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্য নির্বাহীরা আইন মেনে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তা হবে দেশের বীমা খাতের উন্নয়নে বড় অন্তরায়। ক্ষুন্ন হবে গ্রাহকস্বার্থ। মুখ থুবড়ে পড়বে দক্ষ জনবল গঠনের বিষয়টিও। ফলে বীমা খাতের সঙ্কট আরো বাড়বে। তাই বীমা খাতের উন্নয়নের স্বার্থে এখনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি।

বিষয়টি নিয়ে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির বেশ কয়েকজন মুখ্য নির্বাহীর সাথে আলাপ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। তবে কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাদের সবার প্রায় একই প্রশ্ন- আমরা কোন দিকে যাবো! একদিকে কোম্পানির মালিক বা পরিচালকদের অবৈধ আবদার। অন্যদিকে আইন মানতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ। আমরা তো দিশেহারা হয়ে পড়ছি। কর্মদক্ষতা বা যোগ্যতা বাড়ানোর পরিবর্তে এখন আমাদের চাকরি রক্ষার কৌশল রপ্ত করাই যেন গুরুত্বপূর্ণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, মুখ্য নির্বাহীরা আসলে সব সময়ই বাধার সম্মুখীন হয়। অবস্থা দৃষ্টে আমার মনে হয়- ‘বড় পাপ যে করে সেই আসে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী পদে’। অনেকে মনে করেন যে, মুখ্য নির্বাহীরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়; গাড়ি, বেতন-ভাতা ইত্যাদি নানান সুবিধা থাকে তাদের। অথচ একজন মুখ্য নির্বাহীকে কত রকমের যে চাপ সহ্য করতে হয় তার কোন ইয়ত্তা নেই।

তিনি বলেন, আইডিআরএ সার্কুলার দিয়ে বলে এটা ঠিক রাখেননি, ওটা ঠিক রাখেননি, ওইটা করেননি। ওইদিক দিয়ে ডাইরেক্টররা বলে ব্যবসা না বাড়ালে তোমাকে রাখা যাবে না; তুমি ব্যবসা বাড়াও। আর তোমাকে ব্যবসা বাড়াতে গেলে কমিশন বেশি দিতে হবে। কমিশন বেশি দিতে হলে সেটা অ্যাডজাস্ট করতে হবে। আর অ্যাডজাস্ট তোমাকেই করতে হবে। কিভাবে করবে সেটা তোমার ব্যাপার; আমরা এগুলো জানি না। ।

এক্ষেত্রে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই তখন একজন মুখ্য নির্বাহীকে আনফেয়ার মিনস (অসাধু উপায় অবলম্বন) করতে হয়। তাছাড়া তার তো আর কোন উপায় নেই। অথচ এই আনফেয়ার মিনসের দায় কোম্পানি বা বোর্ড কেউই বহন করবে না। সেটা মুখ্য নির্বাহীকেই বহন করতে হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তখন মুখ্য নির্বাহীকে ধরে, গণমাধ্যমও তাকেই ধরে। -বলেন নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ওই মুখ্য নির্বাহী।

নতুন প্রজন্মের একটি লাইফ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী বলেন, আমাদের নিয়োগ হয় চুক্তি ভিত্তিক। আর নবায়ন হয় পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে। আজ আমি একটি বীমা কোম্পানিতে আছি, হয়তো আগামীতে অন্য কোন কোম্পানিতে থাকব। তবে সেটা নির্ভর করবে আমার যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপর।

তিনি বলেন, আমি ভালো করলে আরো ভালো সুযোগ-সুবিধা পাবো এবং বড় কোন কোম্পানিতে আমার চাকরি হবে। কিন্তু আমার দ্বারা যদি নেতিবাচক কিছু ঘটে, সেটা হবে আমার ক্যারিয়ারে জন্য বড় বাধা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে আমার রুটি-রুজির পথ। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি কখনো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়াতে চাইব না। চাইব না কোন অনাকাঙ্খিত অনিয়মেরও ভাগিদার হতে।

কিন্তু বীমা কোম্পানির মালিকদের প্রত্যাশা আর বর্তমান বাজার পরিস্থিতি -কোনটাই আমাদের ভালো থাকতে চাওয়ার অনুকূলে নয়। চাকরি বাঁচাতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মালিকদের অনিয়মের সায় দিতে হয়। আর সেই অনিয়মের দায় এসে চাপে আমাদের ঘাড়ে।

লাইফ বীমা কোম্পানির এই মুখ্য নির্বাহী আরো বলেন, আমরা এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে চাই। আইন মেনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাই। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা, কোম্পানির উন্নয়ন- সার্বিকভাবে বীমা খাতের স্বার্থে আমরা কাজ করতে চাই। সেক্ষেত্রে আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে আমাদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে যা বলছে মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বিআইএফ:

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দাবি করে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, একটি কোম্পানির সকল দায়-দায়িত্ব মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার। আমরা কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন বোর্ডের চাপে থাকি। অন্যদিকে তেমনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পরিপালনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়।

তিনি বলেন, অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমাদেরকে অনিয়ম মেনে নিতে হয়। আমরা এ ক্ষেত্রে আপত্তি করলে ক্ষেত্রে বিশেষে চাকরিও হারাতে হয়। মালিকপক্ষ এর কোন দায়-দায়িত্ব নিতে চান না। তাই আমরা চাই অনাকাঙ্খিতভাবে যেন কোন মুখ্য নির্বাহীর চাকরি না যায় সে বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষ মনোযোগ দিবেন।

বিআইএফ’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে যখন সহযোগিতা করা হবে তখন মুখ্য নির্বাহীদের কাজের আগ্রহ ও আন্তরিকতা বাড়বে। আইনের বিধি-বিধান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে কোম্পানি পরিচালনা করলে ব্যবসা বাড়বে। এর ফলে মালিক ও গ্রাহকরা লাভবান হবে। এগিয়ে যাবে দেশের সম্ভাবমনাময় এই খাত।

বীমা মালিকদের সংগঠন বিআইএ’র বক্তব্য:

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশেন (বিআইএ)’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) বলেন, মুখ্য নির্বাহীদের কাছ থেকে এ ধরণের মৌখিক অভিযোগ আমি মূল্যায়ন করব না। কারণ, এখানে তো এমনও হতে পারে যে, তারও স্বার্থ আছে।

তিনি বলেন, কোন বীমা কোম্পানির মালিক তথা বোর্ড যদি কোন অনিয়ম করতে বলে সেটা লিখিতভাবে বলবে না; মৌখিকভাবে বলবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে (বোর্ডে) মৌখিকভাবে কিছু বলার সুযোগ নেই।

কিন্তু কোন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা যদি মনে করেন তাকে আইনের বাইরে গিয়ে বোর্ড কিছু করতে বলছে তাহলে তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারেন। 

বিআইএ’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, কোন মুখ্য নির্বাহীর যদি এমন মনে হয় যে, আইডিআরএ’র কাছে এমন অভিযোগ করলে তার চাকরি থাকবে না, সেক্ষেত্রে তো তাকে আইডিআরএ প্রোটেকশন (সুরক্ষা) দেবে। এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র দায়িত্ব মুখ্য নির্বাহীদের সহযোগিতা করা।

তিনি আরো বলেন, ইচ্ছা করলেই চুক্তির মেয়াদে কোন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাদ দেয়া যায় না; উচিতও না। সেক্ষেত্রে আবার প্রবিধানমালায় বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে হয়। এক্ষেত্রেও আইডিআরএ মুখ্য নির্বাহীকে সহযোগিতা করতে পারে।

যা বলছে বীমা পেশাজীবীদের সংগঠন বিআইপিএস:

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটি (বিআইপিএস)’র সাধারণ সম্পাদক এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই বলেন- বীমা কোম্পানিগুলোর মালিক ও মুখ্য নির্বাহীদের অবস্থা অনেকটা ‘অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার মতো’। এখানে মুখ্য নির্বাহীদের সামনে রেখে মালিকপক্ষ তাদের স্বার্থ সিদ্ধিতে ব্যস্ত। আর অপরাধ প্রকাশ পেলে দায় চাপছে মুখ্য নির্বাহীদের ঘাড়ে।

তিনি বলেন, মুখ্য নির্বাহীদের মধ্যেও হয়তো কেউ খারাপ মানসিকতার থাকতে পারে। তবে একটি কোম্পানির মালিক বা পরিচালকরা যদি চায় সেই মুখ্য নির্বাহীর অনিয়ম বন্ধ করতে পারে। কিন্তু পরিচালকরা যদি অনিয়ম করতে চায় সেটা বন্ধ করার ক্ষমতা একজন মুখ্য নির্বাহীর নেই। সে চাইলে হয়তো চাকরি ছাড়তে পারে; কিন্তু তখন তো অন্য কোন কোম্পানিও তাকে নিতে চাইবে না।

তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে মুখ্য নির্বাহীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সতর্ক করতে হবে মালিকদেরও। কোন পক্ষেরই অনিয়ম বরদাস্ত করা ঠিক হবে না। দেশের বীমা খাতের স্বার্থেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমি মনে করি, বলেন বিআইপিএস’র সাধারণ সম্পাদক।

এ কে এম এহসানুল হক আরো বলেন, মুখ্য নির্বাহীরা আইন মেনে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তা হবে দেশের বীমা খাতের উন্নয়নে বড় অন্তরায়। ক্ষুন্ন হবে গ্রাহকস্বার্থ। মুখ থুবড়ে পড়বে দক্ষ জনবল গঠনের বিষয়টিও। ফলে বীমা খাতের সঙ্কট আরো বাড়বে। যা কখনোই কাম্য নয়।

বিষয়টি নিয়ে যা ভাবছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ:

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও সংস্থাটির মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতার বলেন, আমরা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। ম্যানেজমেন্টের এই চাপের ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাহীদের সহযোগিতা করা বা এটার সমাধান দেয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। হার্ড লাইনে গিয়ে এটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। খুব শিগগিরই আমরা হয়তো বিষয়টি নিয়ে বসব। কর্তৃপক্ষের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বীমা কোম্পানিতে যেভাবে নিয়োগ পান মুখ্য নির্বাহীরা:

দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। মুখ্য নির্বাহীর মেয়াদ, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নির্ধারণ করে পরিচালনা পর্ষদ।

পরবর্তীতে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে সেই নিয়োগ অনুমোদন নিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে আবেদন পাঠান সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান।

এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির দেয়া নিয়োগটি ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা- ২০১২’ অনুসারে হয়েছে কিনা সেটি যাচাই-বাছাই করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এক্ষেত্রে প্রবিধানমালার সকল শর্তপূরণ হয়ে থাকলে সেই নিয়োগ অনুমোদন দেয় আইডিআরএ।

যেসব কারণে মুখ্য নির্বাহী অপসারণ করতে পারে কোম্পানি:

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালার বিধি ৭ অনুসারে, উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে কোন বীমা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পারবে, যদি তিনি-

শারীরিক বা মানসিক অসামর্থের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন বা দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান; উপযুক্ত কারণ ব্যতীত ৩ মাস দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন বা অস্বীকার করেন; এই প্রবিধানের কোন বিধান অনুযায়ী মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েন; এমন কোন কাজ করেন যা বীমাকারীর জন্য ক্ষতিকর হয়;

এমনভাবে নিজেকে পরিচালনা করেন বা নিজের পদকে অপব্যবহার করেন যা আইন বা এই প্রবিধানের উদ্দেশ্য বা পলিসি গ্রাহক বা শেয়ারহোল্ডার বা জনস্বার্থকে ব্যাহত করে; নিজে বা তার স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান, পিতা বা মাতা, ভাই বা বোনের মাধ্যমে এমন কোন কার্যকলাপে জড়িত হন, যার দ্বারা বীমাকারীর স্বার্থের ব্যাঘাত হতে পারে;

পারিতোষিকভিত্তিক হোক বা না হোক, তিনি অন্য কোন লাভজনক পদ বা দায়িত্ব গ্রহণ করেন; অন্য কোন বীমা কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক, স্পন্সর বা বীমাকারীর ব্যবসায়িক স্বার্থের সহিত সংশ্লিষ্ট হন।

মুখ্য নির্বাহী অপসারণে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়:

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালার বিধি ৭ অনুসারে, উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কারণে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার পদে বহাল থাকার অযোগ্য মনে করলে, বীমা কোম্পানি উক্ত কারণের যথার্থতা যাচাই করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিষয়ে উপ-ধারা (২) এর অধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে, বীমা কোম্পানি, সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনাক্রমে, তাকে তার দায়িত্ব পালন হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে পারবেন এবং এতদ্বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করা হলে তিনি তা পালনে বাধ্য থাকবেন।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হইলে এবং তাকে অপসারণ করা সমীচীন বিবেচনা করলে, বীমা কোম্পানি তদন্ত প্রতিবেদন এবং এর সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবে এবং কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে ১৫ দিনের মধ্যে তার সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করবে।

কারণ দর্শানোর যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান না করা হলে কর্তৃপক্ষ -কোন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণ অনুমোদন করবে না। এই ধারার অধীন অপসারিত কোন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বীমা কোম্পানির অন্য কোন পদে নিয়োজিত বা পুনঃনিয়োজিত হতে পারবেন না।