বড় পরিবর্তন আসছে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ প্রবিধানমালায়

আবদুর রহমান আবির: বড় পরিবর্তন আসছে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালায়। একদিকে ছাড় দেয়া হচ্ছে কর্ম অভিজ্ঞতায়, অন্যদিকে জোর দেয়া হচ্ছে স্নাতক ডিগ্রির ফলাফলে। একইসাথে বন্ধ করা হচ্ছে ইনক্রিমেন্ট-ইনসেনটিভের নামে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পথ। এ ছাড়াও বেশ কিছু সংশোধনী আসছে এই প্রবিধানমালায়।

এরইমধ্যে প্রবিধানমালাটির সংশোধিত খসড়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ) এবং মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

রোববার (২২ জানুয়ারি) ইস্যু করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গেজেট আকারে প্রকাশিত ‘বীমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা, ২০১২’ এর সংশোধনী খসড়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে বিআইএ এবং বিআইএফ’র মতামত প্রাপ্তির পর এটি পুনরায় যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে সংশোধিত খসড়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে বিআইএ এবং বিআইএফ’র মতামত কর্তৃপক্ষ বরাবর আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখের মধ্যে প্রেরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মজিদ।

প্রবিধানমালার খসড়া প্রজ্ঞাপন অনুসারে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে- কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমপক্ষে ২য় শ্রেণীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অথবা চার বছর মেয়াদী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রীর অধিকারী। গ্রেডিং পদ্ধতির ফলাফলের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। তবে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারীদের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন হতে সমতাকরণ সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে।

এর আগে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩য় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রীও গ্রহযোগ্য ছিল। অর্থাৎ স্নাতকের ফলাফলের বিষয়ে কোন সীমা নির্ধারণ ছিল না। এমনকি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়েও কোন বক্তব্য ছিল না।

খসড়া প্রজ্ঞাপনে মুখ্য নির্বাহীর কর্ম অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলা হয়েছে- ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা এর অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যুন ২ বছর  কর্ম অভিজ্ঞতাসহ বীমা ব্যবসায় অন্যুন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা; তবে, কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করলে উল্লেখিত শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করতে পারবে।

এক্ষেত্রে সরকার বা সরকারের অধীনস্থ অন্য কোন খাতে সর্বশেষ কমপক্ষে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার পদে কর্মরত ছিলেন, এমন ব্যক্তি মধ্যে যার ব্যাংক বা বীমা অথবা আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কমপক্ষে ৫ বছরের (তন্মধ্যে বীমা বিষয়ক কাজে কমপক্ষে ১ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা) কর্ম অভিজ্ঞতাসহ সরকারি কাজে অন্যুন ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা রয়েছে তার নিয়োগ অনুমোদন করতে পারবে।

এ ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহজাতিক বীমা কোম্পানিতে উর্ধতন ব্যবস্থাপনা পদে কমপক্ষে ৮ বছরের বীমা বিষয়ক সরাসরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকেও দেশের বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন দিতে পারবে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এর আগে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে অব্যবহিত নিম্নপদে কমপক্ষে ৩ বছর সহ বীমা ব্যবসায় ১৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হতো। অর্থাৎ খসড়া প্রজ্ঞাপনে অব্যবহিত নিম্নপদে ১ বছর ও বীমা ব্যবসায় ৩ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা ছাড় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা এবং বিদেশী বহজাতিক বীমা কোম্পানিতে কর্মরতদের মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে এই খসড়া প্রজ্ঞাপনে।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগলাভের জন্য প্রার্থীর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ৪০ বছরের বিধান বাদ দেয়া হয়েছে এবং মেয়াদ শেষ হলে ৬৭ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পুনর্নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশী বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের নাগরিক বা বাংলাদেশের ডমিসাইল’ হওয়ার বাধ্যবাধকতাও তুলে নেয়া হয়েছে।

মুখ্য নির্বাহীর মোট বেতনের বিষয়ে বলা হয়েছে- মোট বেতন, মূল বেতন, বাড়ী ভাড়া এবং অন্যান্য ভাতাদি (চিকিৎসা, উৎসব ভাতা, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদির পরিমাণ বা সীমা নির্দিষ্ট অংকে উর্লেখ থাকতে হবে) সমন্বয়ে গঠিত হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য সুবিধাসমূহ আর্থিক মানদণ্ডে নির্ধারণের বিষয়টি বিয়োজন করা হয়েছে।

অন্যদিকে মুখ্য নির্বাহীর নির্ধারিত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ ব্যতীত অন্য কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা, যেমন- লভ্যাংশ, কমিশন, যেকোন ধরনের ক্লাব সদস্য সংক্রান্ত খরচ প্রদানে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ‘ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘ইনসেনটিভ’ সুবিধা প্রদানেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ছোট-বড় আরো কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ তে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালায় যেসব সংশোধনী আনা হচ্ছে তা খুবই যুগোপযোগী এবং সময়ের-ই দাবি। তবে একইসঙ্গে মুখ্য নির্বাহীদের চাকরির নিশ্চয়তা বা নিরাপত্তার বিধান রাখাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে; তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালাটি আমরা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে এটি নিয়ে কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হচ্ছে। এরপর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কি ধরণের পরিবর্তন আসবে সেটা তখনই বোঝা যাবে। সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তেমন কিছু বলার সুযোগ নেই।