বীমা দাবি পরিশোধে হোমল্যান্ডের প্রবাসী পরিচালকদের আপত্তি, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৯ মাসে ১১ হাজার ৩৯৬টি বীমা দাবি বাবদ ২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করে হোমল্যান্ড লাইফ। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯৫২টি দাবি বাবদ ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে। তবে বীমা দাবির এ টাকা পরিশোধে বোর্ডের অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কোম্পানিটির প্রবাসী পরিচালকরা। 

এসব দাবি পরিশোধে ৮ কোটি টাকার এফডিআর নগদায়ন করাকেও অনুমোদন দেয়নি বোর্ডের প্রবাসী পরিচালকরা। সেই সাথে মেয়াদপূর্তি দাবি পরিশোধের জন্য নতুন করে অর্থ ছাড়েও আপত্তি জানিয়েছেন প্রবাসী পরিচালকরা। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কোম্পানিটির বীমা গ্রাহকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ১৫ জানুয়ারি কোম্পানির বোর্ড সভায় বীমা দাবি পরিশোধে ৫ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের বিষয়টি বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হলে প্রবাসী পরিচালকরা অর্থ ছাড়ে আপত্তি জানান। এছাড়াও আগের ২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করেন তারা।

গত ১২ জানুয়ারি আইডিআরএ’র কাছে দু’টি অভিযোগ করেন ১২ পরিচালক। এতে বোর্ড সভার অনুমোদন ছাড়াই দাবি পরিশোধ করা এবং দাবি পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য তাদের দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়াও কত টাকা ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানির একাউন্টে কত টাকা জমা হয়েছে; গ্রাহকদের কত টাকা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে; লাইফ ফান্ডের অবস্থা কি; যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও মামলা পরিচালনার নামে কত টাকা খরচ দেখানো হয়েছে এসব হিসাব প্রবাসী পরিচালকদের সামনে তুলে না ধরার অভিযোগ করে তা খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।

একইসাথে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া এফডিআর এর টাকা থেকে দাবি পরিশোধ করার জন্য কোম্পানির উর্ধ্বতন নির্বাহীদের অপসারণ এবং শাস্তির দাবি করেছেন ওই ১২ পরিচালক।

তবে সর্বশেষ বোর্ড সভায় দাবি পরিশোধের জন্য বোর্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় অর্থ বরাদ্দের জন্য কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক মো. হান্নান মিয়াকে চিঠি দেন।

চিঠিতে মুখ্য নির্বাহীর পক্ষ থেকে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বর ১২ কোটি টাকা দাবি পরিশোধে আইডিআরএ নির্দেশ প্রদান করে। এ সময়ে কোম্পানির পরিচালকদের দ্বন্দের কারণে স্বাভাবিক নিয়মে কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে আইডিআরএ’র নির্দেশ পরিপালনের জন্য দাবি পরিশোধ করা হয়েছে।

এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ। এ কারণে কোম্পানির ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড পরিচালনার চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়। এক্ষেত্রে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটানো হয়নি। কোম্পানির কোন এফডিআর ভাঙ্গানো হয়নি। একটি এফডিআর মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ইনক্যাশ হয়। যেখান থেকে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক দাবি পরিশোধ করা হয়।

জানা গেছে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৮ কোটি টাকার এফডিআর ইনক্যাশ হয়। তবে এই এফডিআর নগদায়ন করার অুনমোদন দেয়ার বিষয়ে কোম্পানিটির প্রবাসী পরিচালকরা জোড় আপত্তি জানান।

কোম্পানিটির চেয়ারম্যান বরাবরে মুখ্য নির্বাহীর চিঠিতে বীমা দাবি পরিশোধে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বীমা গ্রাহকের উত্থাপিত দাবি অনুসারে দাবি পরিশোধ করা না হলে মাঠ কর্মীদের ওপর তার বিরুপ প্রভাব পড়ে। ফলে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়।

দাবি পরিশোধের বাস্তবতা তুলে ধরে ওই চিঠিতে বলা হয়, গত এক মাসে গ্রাহকরা দাবি আদায়ে ৬টি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। এছাড়াও আইডিআরএ কাছে ৫ হাজার ৩৮৯টি পলিসির বীমা দাবি পরিশোধের জন্য অভিযোগ করেছে। অন্যদিকে কোম্পানির সার্ভিস সেন্টার ও ব্রাঞ্চগুলোতে গ্রাহকরা দাবি উত্থাপন করেছে। এসব দাবি পরিশোধ করা না হলে বীমা গ্রাহকরা চরম হয়রানির শিকার হবে। মাঠ কর্মীদের মাঝেও অনাস্থার সৃষ্টি হবে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে কোম্পানির ব্যবসার ওপর। এসব কারণ তুলে ধরে দ্রুত প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ চান কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটানো হয়নি।

বিশ্বজিৎ কুমার বলেন, কোম্পানির কোন এফডিআর ভাঙ্গানো হয়নি। তবে একটি এফডিআর মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ইনক্যাশ হয়েছে এবং সেখান থেকে গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। নতুন করে গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে বোর্ডসভা সেটা অনুমোদন করেনি। কিন্তু গ্রাহকদের উত্থাপিত দাবি অনুসারে বীমার টাকা পরিশোধ করা না হলে মাঠ কর্মীদের ওপর তার বিরুপ প্রভাব পড়ে; ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমার নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বীমা আইন পরিপালনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে দাবি পরিশোধে। ফলে কোম্পানির ব্যবসায়ীক অগ্রগতি, বীমা আইন পরিপালন ও গ্রাহকের দাবি পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে নানা অজুহাতে বীমা দাবি পরিশোধ বাধাগ্রস্ত করা হলে তা যেমন আইন লঙ্ঘন হবে অপর দিকে গ্রাহকস্বার্থ ক্ষুন্ন হবে।  কোম্পানিও ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব দিক বিবেচনা করেই বর্তমান চেয়ারম্যান মহোদয়কে চিঠিতে অবহিত করা হয়েছে।

প্রবাসী পরিচালকদের অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানিটির এই মুখ্য নির্বাহী বলেন, প্রবাসী পরিচালকরা যেসব অভিযোগ করেছেন তার কোন ভিত্তি নেই। কারণ, তাদের অনুমোদন নিয়েই কোম্পানির সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এরপরও যদি তারা মনে করেন নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত, তাহলে তারা সেটা করতে পারেন।

এ বিষয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রবাসী পরিচালকদের মধ্যে কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বলেন, এখানে সবকিছু বোর্ডের মাধ্যমে হয়। সুতরাং বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি কিছু বলতে পারি না। তিনি বলেন, “বোর্ড বলছে, আমরা একটু যাচাই করে দেখতে চাই; যাচাই করবে- দ্যাটস অল। আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না। পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলতে পারব না।”