সিএমজেএফ টক-এ আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী

অর্থ আত্মসাৎ ও যথাযথ বিনিয়োগ না করায় দাবি পরিশোধ করতে পারছে না বীমা কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থ আত্মসাৎ ও সম্পদের যথাযথ বিনিয়োগ না করা ও অতিরিক্ত ব্যয় করায় বীমা কোম্পানিগুলোতে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং এ কারণে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

বুধবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউর রহমান।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠার প্রথম ১০ বছরে শুধু প্রিমিয়াম আয় হয়েছে। এ সময়ে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। যথাযথ বিনিয়োগ হয়নি। ফলে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে।  

বীমা দাবি পরিশোধকে গুরুত্ব দিয়েছি। যেসব কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছেন না সেগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে ডেকে আমরা বৈঠক করেছি। তাদেরকে একটা ডেডলাইন দিচ্ছি। সাধারণত যেসব কোম্পানির সমস্যা থাকে সেই কোম্পানির মূখ্য নির্বাহীদের ডেকে আমরা কথা বলতাম। কিন্তু এখন আমরা সরাসরি পরিচালকদের সাথে কথা বলছি।

তিনি বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোকে জমি বিক্রি করে হলেও তাদের গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জমি বিক্রি করার অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তবে একটু যাচাই-বাছাই করে এই অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কোন বীমা কোম্পানি দাবি পরিশোধের নির্দেশ না মানলে প্রয়োজনে ওই বীমা কোম্পানির বোর্ড ভেঙ্গে দেয়া হবে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বীমা দাবি পরিশোধ না করার প্রেক্ষিতে আমরা অভিযোগ সেল গঠন করেছি। একটা হটলাইনও চালু করা হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত কল পাচ্ছি, দরখাস্ত, মেইল ও বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে আসছি। এর প্রেক্ষিতে আমরা ৭টা কোম্পানির সাথে কথা বলেছি। যাদের ব্যয় বেশি তাদের ব্যয় কমাতে বলেছি। পাশাপাশি ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরের মধ্যে যেসব বীমা পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে সেগুলোর বিষয়ে কি পরিকল্পনা করছে তা দেয়ার জন্য বলেছি। এভাবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, বীমা খাত ডিজিটাইজেশন হলে আমরা ক্লোজলি মনিটর করতে পারব। এটা হলে কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম অটোমেশন হয়ে যাবে। তাহলে মানুষের সংস্পর্শ আরো কমে যাবে। এতে করে বীমা গ্রাহকের দাবি পরিশোধ সহজ হবে। আমরা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। ফান্ড ও আর্থিক বিষয়ে আমরা দেখতে পারব। প্রতিষ্ঠানগুলো কি অবস্থায় আছে, তারা কি করছে -তা সহজে মনিটর করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, বীমা খাতের উন্নয়নে ডিজিটাইজেশন অনেক জরুরি। নতুন প্রজন্ম অনলাইনে খাবার ও পোশাকসহ নানা পণ্য কিনে অভ্যস্ত। বীমার প্রোডাক্টও যদি অনলাইনে কেনা যায়, তাহলে তাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে। তাছাড়া ডিজিটালাইজড করা হলে গ্রাহক তার প্রিমিয়াম জমা হয়েছে কি-না, পলিসির অবস্থা কী ইত্যাদি নিজেই চেক করতে পারবেন। এর ফলে একদিকে গ্রাহকের আস্থা বাড়বে, অন্যদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগও কমে আসবে।

জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ৪০ কোটি টাকার একটি বীমা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ৪০ কোটি টাকা বীমা দাবির অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বীমা দিবসের বন্ধের পর প্রথম কর্মদিবসে আমরা ৪০ কোটি টাকার বীমা দাবি পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে মিটিং করেছি। এটা পরীক্ষা করার জন্য কমিটি করে দায়িত্ব দিয়েছি। কমিটি কাজ করছে।

মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, আমরা বীমা আইন সংশোধনের মাধ্যমে সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমরা দেখেছি কিছু কিছু জায়গায় অসঙ্গতি আছে, নানা অস্পষ্টতা রয়েছে। এত বেশি ধারায় রেগুলেশন করার কথা বলা আছে যা একেবারেই বাস্তবায়ন অযোগ্য। তাই বীমা আইন সংশোধন করা জরুরি। ইতোমধ্যে সংশোধনীর খসড়া তৈরি শুরু করেছেন তারা।

বীমা খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বীমা খাতের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সমস্যাও কম নয়। এর মধ্যে কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো পরিপালন না করা সবচেয়ে বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন কমপ্লায়েন্স না থাকায় অনেক কোম্পানির মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে; গ্রাহক ও কোম্পানির টাকা অপচয়, অপব্যবহার, এমনকি কোন ক্ষেত্রে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই সমস্যার সমাধানে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।