মরটালিটি ও মরবিডিটি টেবিল পরিবর্তন, নতুন দিগন্তে দেশের লাইফ বীমা খাত
আবদুর রহমান আবির: দেশের লাইফ বীমা খাতে বীমা পরিকল্প প্রণয়নে নতুন মরটালিটি টেবিল ও মরবিডিটি টেবিল বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের জন্ম-মৃত্যু হার ও স্বাস্থ্যগত পরিসংখ্যান নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে এসব টেবিল।
এর ফলে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সালে এ অঞ্চলের মানুষের জন্ম-মৃত্যু হার ও স্বাস্থ্যগত পরিসংখ্যান নিয়ে প্রস্তুত করা ১৯৮০ সালের মরটালিটি টেবিল ও মরবিডিটি টেবিলের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে দেশের লাইফ বীমা খাত। এর মাধ্যমে প্রবেশ করতে যাচ্ছে নতুন এক দিগন্তে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই মরটালিটি ও মরবিডিটি টেবিল বাস্তবায়ন হলে যুগপোযোগী ও বাস্তবসম্মত হবে দেশের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন পরিকল্পের ডিজাইন। একইসঙ্গে নতুন বীমা পরিকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
লাইফ বীমা খাতে নতুন মরটালিটি টেবিল ও মরবিডিটি টেবিল বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার নং লাইফ: ১৩/২০২৩ জারি করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এ সার্কুলারে স্বাক্ষর করেছেন।
সার্কুলারটিতে বলা হয়েছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশ বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃক নিয়োজিত আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মরটালিটি টেবিল ও মরবিডিটি টেবিল প্রণয়ন করা হয়েছে।
মরটালিটি টেবিলকে ‘বাংলাদেশ অ্যাসিউরড লাইভস মরটালিটি টেবিল (২০১৫-২০১৮)’ নামে এবং মরবিডিটি টেবিলকে ‘বাংলাদেশ মরবিডিটি টেবিল (২০১৫-২০১৮)’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।
দেশের সকল লাইফ বীমা কোম্পানির বীমা পরিকল্প প্রণয়ন, দায় মূল্যায়ন ও রিজার্ভ পরিগণনা এবং বীমা সম্পর্কিত অন্যান্য কাজে উল্লেখিত টেবিল দু’টি ব্যবহারের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
নতুন এই মরটালিটি টেবিল ও মরবিডিটি টেবিল অনুসরণের ক্ষেত্রে ৪টি শর্ত আরোপ করেছে বীমা খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে-
বীমাকারীর পরিকল্প প্রণয়ন, দায় মূল্যায়ন ও রিজার্ভ পরিগণনা এবং বীমা সম্পর্কিত অন্যান্য কাজে ‘বাংলাদেশ অ্যাসিউরড লাইভস মরটালিটি টেবিল (২০১৫-২০১৮)’ এবং ‘বাংলাদেশ মরবিডিটি টেবিল (২০১৫-২০১৮)’ ব্যবহৃত হবে;
বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন টেবিল (যেমন: মরটালিটি টেবিল এ (৪৯-৫২)আল্ট.,সিএসও ১৯৮০) সমান্তরালভাবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে;
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন টেবিল যেমন: মরটালিটি টেবিল এ (৪৯-৫২)আল্ট.,সিএসও ১৯৮০) ইত্যাদি ১ জানুয়ারি ২০২৪ এর পর বীমা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে না; এবং
বীমা গ্রহীতাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য একচ্যুয়ারি তার অভিজ্ঞতার আলোকে ‘বাংলাদেশ অ্যাসিউরড লাইভস মরটালিটি টেবিল (২০১৫-২০১৮)’ ও ‘বাংলাদেশ মরবিডিটি টেবিল (২০১৫-২০১৮)’ এর হার সমন্বয়পূর্বক ব্যবহার করতে পারবেন, তবে সমন্বয় করার যৌক্তিকতা একচ্যুয়ারির নোটে আবশ্যিকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
এ বিষয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আপেল মাহমুদ, এসিআইআই (ইউকে) বলেন- মরটালিটি ও মরবিডিটি টেবিল প্রণয়নে ক্ষেত্রে বর্তমান অথরিটি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এটি আমাদের বীমা শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং নতুন নতুন প্রোডাক্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে যুগোপযোগী প্রোডাক্ট ডিজাইন করার সুযোগ হবে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, লাইফ বীমা খাতে নতুন মরটালিটি ও মরবিডিটি টেবিল বাস্তবায়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান নেতৃত্বের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এর ফলে কোম্পানিগুলোর বীমা পরিকল্পের ডিজাইনে এখন হালনাগাদ ও বাস্তবসম্মত তথ্য ব্যবহৃত হবে, যা দেশের লাইফ বীমা খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, মরটালিটি টেবিল বা মৃত্যুর সারণী একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্ম-মৃত্যু, বয়স, লিঙ্গ এবং পেশার মতো বিভিন্ন উপাদানের সাথে মৃত্যুর সম্পর্কের পরিসংখ্যানগত তথ্য সরবরাহ করে।
বীমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম হার নির্ধারণের জন্য মরটালিটি টেবিলকে একটি নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করে। এটি বীমা পরিকল্প ডিজাইনের ক্ষেত্রে অ্যাকচুয়ারিয়াল এক্টিভিটির টেবিল হিসেবেও পরিচিত।
মরবিডিটি টেবিল বা অসুস্থতার সারণী হলো এমন একটি তালিকা যাতে বয়স এবং পেশার মতো বিভিন্ন উপকরণের দ্বারা সুশৃঙ্খল একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসুস্থতা এবং হতাহত হওয়ার সংখ্যার বিবরণ থাকে।
কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি মৃত্যু, আহত হওয়া বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করতে বীমা কোম্পানিগুলো মরবিডিটি টেবিলের সহযোগিতা নিয়ে থাকে। এই টেবিল বীমা কোম্পানির প্রতি একজন বীমা গ্রহীতার ঝুঁকির মূল্যায়ন করে স্বাস্থ্য এবং লাইফ বীমা প্রিমিয়াম নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।