ব্যয় কমছে লাইফ বীমায়, ৪ বছরে সীমার নিচে খরচ ৮২২ কোটি টাকা

আবদুর রহমান আবির: ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমে আসছে দেশের লাইফ বীমা খাতে। ২০১৮ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবেই কমে আসছে এই ব্যয়। গেলো ৪ বছরে ব্যবস্থাপনা খাতে অনুমোদিত ব্যয়সীমার চেয়ে ৮২২ কোটি টাকা কম খরচ করেছে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো।

এমন-ই চিত্র উঠে এসেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। গত ৩০ মার্চ ‘লাইফ বীমাকারীর তথ্য (২০১৮-২০২২)’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ৫ বছরের এই প্রতিবেদনে ২০২১ ও ২০২২ সালের তথ্য অনিরীক্ষিত।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন মেনে ব্যবসা করায় কিছু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খরচ আগে থেকেই কম ছিল। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যয় পুনর্ভরণের অঙ্গীকার করার পর বেশ কিছু কোম্পানি তাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনুমোদিত সীমার নিচে নামিয়ে এনেছে।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৭ মে দেশের লাইফ বীমা খাতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

এতে কোম্পানিগুলোর সুপারভাইজরি লেভেলে ৫টি গ্রেডের পরিবর্তে ৩টি গ্রেড রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে এই তিন গ্রেডের জন্য বেতন-ভাতা, কমিশন, বোনাস ও যাতায়াতসহ সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ খরচের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।

তথ্য অনুসারে, সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০২২ সালে দেশের লাইফ বীমা খাতে সর্বমোট ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৩ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে অনুমোদিত সীমার নিচে ২২৫ কোটি টাকা বা ৫.৭৫ শতাংশ কম খরচ হয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালে দেশের লাইফ বীমা খাতে সর্বমোট ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয় ৩ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সে বছর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৩ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। সে হিসাবে ২০২১ সালে অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৬.৪৬ শতাংশ বা ২২৬ কোটি টাকা কম খরচ হয়।

২০২০ সালে দেশের লাইফ বীমা খাতে সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৯ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। এই প্রিমিয়াম সংগ্রহে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। আলোচ্য বছরে ২০৩ কোটি টাকা বা ৬.৩৭ শতাংশ অনুমোদিত সীমার নিচে খরচ হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সর্বমোট ৯ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হয় ৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। তবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে অনুমোদিত সীমার নিচে কম খরচ হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা বা ৪.৯৩ শতাংশ।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে অতিরিক্ত ব্যয় করে দেশের লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো। এই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯৫ কোটি, ২.৯৯ শতাংশ। আলোচ্য বছরে ৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদ থাকলেও প্রকৃত খরচ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান বলেন, এ খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নির্দেশনা এবং কোম্পানিগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টায় সমস্যাটা এখন অনেকটাই কমেছে।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে লাইফ বীমা খাতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমলেও কিছু কোম্পানির খরচ এখনো সীমার ওপরে রয়েছে, যা কমিয়ে আনা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির জন্যই ভালো। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বীমা গ্রাহক ও মালিকদের স্বার্থে ব্যবস্থাপনা ব্যয় আমাদের আরো কমিয়ে আনতে হবে।

এর ফলে একদিকে যেমন বীমা কোম্পানিগুলোর দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বাড়বে, অন্যদিকে দূরীভূত হবে এ খাতের নেতিবাচক ইমেজ; ফিরে আসবে বীমার প্রতি গ্রাহকদের আস্থাও, বলেন এস এম নুরুজ্জামান।