হোমল্যান্ডের ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের তদন্তে আরো ৭ ধরণের তথ্য চেয়েছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক: হোমল্যান্ড লাইফে গ্রাহকদের জমা করা ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের প্রয়োজনে কোম্পানিটির আরো ৭ ধরনের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । রোববার (২০ আগস্ট) বীমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এসব তথ্য চাওয়া হয়। আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংস্থাটিকে এসব তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।

এর আগে ১০ আগস্ট হোমল্যান্ড লাইফের পরিচালকদের পাসপোর্টের কপিসহ ১০ ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। বীমা কোম্পানিটিকে পাঠানো উভয় চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কমিশনের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. ইয়াছির আরাফাত।

তদন্তের প্রয়োজনে সংস্থাটির চাওয়া হোমল্যান্ড লাইফের ৭ ধরনের তথ্যের মধ্যে রয়েছে-

কোম্পানির কতগুলো ব্যাংক একাউন্ট আছে? তাদের হিসাব শিরোনামসহ, একাউন্ট নম্বর শাখা এবং ব্যাংকের নাম এবং শুরু থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত বিবরণী; কোম্পানির পেইড-আপ ক্যাপিটাল কত টাকা আছে এবং এ টাকা কোথায় কি অবস্থায় আছে তার প্রমাণাদিসহ বিস্তারিত বিবরণ;

কোম্পানির কতগুলো যানবাহন আছে? যানবাহনগুলো কার নামে বরাদ্দ এবং প্রত্যেক যানবাহনের বিপরীতে বছরওয়ারী কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ (শুরু থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত);

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকাল হতে কি পরিমাণ নবায়ন প্রিমিয়াম হয়েছে বা নবায়ন প্রিমিয়াম ব্যবসা হয়েছে এবং এ ব্যবসার বিপরীতে কত টাকা কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হয়েছে তার ভাউচারসহ বিস্তারিত বিবরণ;

কোম্পানির জমি ক্রয় এবং বিক্রয়ের সমস্ত দলিলের সার্টিফাইড কপি এবং জমি ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা পরিশোধ বা গ্রহণের ভাউচারসহ প্রমাণাদি (শুরু থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত);

কোম্পানি প্রতিষ্ঠা থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত যে সকল মামলা হয়েছে, প্রতিটি মামলার বিপরীতে আইনজীবী ফি বা দাপ্তরিক ও টিএ/ডিএ এবং অন্যান্য খরচের ভাউচারসহ বিস্তারিত বিবরণ; এবং আরজেএসসি’তে রির্টান জমা করণের সময় দাপ্তরিক ও লিগ্যাল কি বা অন্যান্য খরচের ভাউচারসহ বিস্তারিত বিবরণ।

উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রাহকের ১০৪ কোটি টাকা যেভাবে লুট হয়েছে হোমল্যান্ড লাইফে’ শিরোনামে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। পরবর্তীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোতেও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে কোম্পানিটির অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রাহিমা আক্তার নামে হোমল্যান্ড লাইফের একজন গ্রাহক গত ৫ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বীমা গ্রাহকদের ১০৪ কোটি টাকা লুটের ঘটনায় বিচারিক তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

পরবর্তীতে গত ২৯ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালত শুনানি শেষে হোমল্যান্ড লাইফের ১০৪ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৮ টাকা লুটের অভিযোগ তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশ দেন।

এই প্রেক্ষিতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে গ্রাহকদের জমা করা ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।