আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ে আইডিআরএ’র তদন্ত

আর্থিক ভিত্তি দুর্বল যমুনা লাইফের, বিক্রি করতে হবে অতিরিক্ত গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। গঠন করতে পারেনি লাইফ ফান্ড। মূলধন বিনিয়োগেও রয়েছে অনিয়ম। এসব কারণে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল বলে মতামত দেয়া হয়েছে আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত দলের প্রতিবেদনে।

অপরদিকে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম খরচ করে বিগত বছরগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় পুনর্ভরণ এবং গ্রাহকদের বীমা দাবি দ্রুত পরিশোধ করাসহ ৭টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে বেসরকারি খাতের এই লাইফ বীমা কোম্পানিকে।

গত ২১ আগস্ট যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

২০১৩-২০১৪ সালে অনুমোদন দেয়া নতুন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’কে নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে নতুন বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় আইডিআরএ।

এরই অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত দল। তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর চলতি বছরের ২২ মে অনুষ্ঠিত শুনানী শেষে এসব নির্দেশ দেয়া হয়।

শুনানিতে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে আরো যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- নবায়ন পলিসির হার ৬০ শতাংশের বেশি উন্নীত করতে হবে। প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ওপর এজেন্ট কমিশনের ১০ শতাংশ স্থগিত রেখে দ্বিতীয় বর্ষ নবায়ন কমিশনের সাথে সমন্বয় করতে হবে।

গাড়ি সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের সার্কুলারের অতিরিক্ত গাড়ি অতিদ্রুত বিক্রি করতে হবে। লাইফ ফান্ডের বিস্তারিত হিসাব দিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এসব নির্দেশনা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে পরিপালন করতে হবে।

যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক ভিত্তি নাজুক পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তদন্ত দলের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, কোম্পানির নগদ আন্ত:প্রবাহ কম থাকায় ভবিষ্যতে গ্রাহকের উত্থাপিত বীমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হবে যমুনা লাইফ।

তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি সর্বমোট ৫৫.৫৯ কোটি টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ব্যয় করেছে ৫২.২৮ কোটি টাকা। অথচ ব্যয়ের অনুমোদন ছিল ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরে কোম্পানিটি ১৬.২৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে।

কোম্পানিটির অতিরিক্ত খরচের হার বছরপ্রতি গড়ে প্রায় ৪৫.৬০ শতাংশ। ২০২১ সালেও কোম্পানিটি ৪.৬৯ কোটি টাকা বা ৫০.২০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। এ কারণে দীর্ঘ ৮ বছরেও কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ৩.৬৭ কোটি টাকা ঋণাত্মক রয়েছে বলে মনে করছে তদন্ত দল।

অপরদিকে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালে যমুনা লাইফের মোট সম্পদে সর্বমোট ১৪ লাখ টাকা যুক্ত হলেও বিনিয়োগ বাড়েনি এক টাকা। ২০২১ সাল শেষে কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণ ২২.৬৯ কোটি টাকা এবং ১৫.৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ। আবার কোম্পানিটির বিনিয়োগ আয়ের হার ১০.৩৪ শতাংশ, যা বাস্তবিক নয় বলছে তদন্ত দল।

যমুনা লাইফের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম নবায়নের হার গড়ে ১৪.০৮ শতাংশ। অপরদিকে সার্বিকভাবে কোম্পানিটির পলিসি তামাদির হার প্রায় ৫০ শতাংশ। কোম্পানিটির গ্রস প্রিমিয়াম বৃদ্ধির হার ১০.৭৯ শতাংশ। আইডিআরএ বলছে, প্রতিষ্ঠার ৫ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না হতে পেরে কোম্পানিটি অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

এসব বিষয়ে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে আইডিআরএ। আমরা সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আগামী ৫ বছরের মধ্যে যমুনা লাইফ আইডিআরএ’র নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়নে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

কামরুল হাসান বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যেই যমুনা লাইফের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনুমোদিত সীমার মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। আশা করা যায় ২০২৪ সালে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনুমোদিত সীমার নিচে থাকবে। তিনি আরো বলেন, কোম্পানির প্রয়োজন অনুসারে গাড়ি থাকে। তবে এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেগুলো মানার চেষ্টা করছি।

যমুনা লাইফের এই মুখ্য নির্বাহী বলেন, লাইফ বীমা কোম্পানির খরচের সবচেয়ে বড় খাত কমিশন। এই কমিশনের হার না কমালে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে কোন কোম্পানির পক্ষে এককভাবে নিয়মের মধ্যে থাকা কঠিন। সে জন্য পুরো শিল্পকে নিয়মের মধ্যে আনা প্রয়োজন।