মূলধন পরিশোধ না করার অভিযোগ কুদ্দুস পরিবারের পরিচালকদের বিরুদ্ধে

ফ্লোর বিক্রি করে সোনালী লাইফ থেকে ২১২ কোটি টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, অনুমোদন নেই আইডিআরএ’র 


বিশেষ প্রতিবেদক: নিজের মালিকানাধীন মালিবাগের একটি ভবনের ফ্লোর বিক্রি করেন সোনালী লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ১৫তলা বিশিষ্ট ওই ভবনের ১ লাখ ৩২ হাজার ৮শ’ স্কয়ার ফিট জায়গা বিক্রির তিনি চুক্তি করেন সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ফ্লোরের মূল্য বাবদ ইতোমধ্যেই তিনি নিয়েছেন ২১২ কোটি টাকা। এই টাকা সোনালী লাইফ পরিশোধ করেছে আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়াই। এসব তথ্য উঠে এসেছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানে।

জমি, ভবন বা ভবনের ফ্লোর ক্রয়ের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সার্কুলারে বলা হয়েছে- আইডিআরএ’র সার্কুলার অনুসারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া জমি বা ভবন ক্রয় করা এবং এসব ক্রয় বাবদ লেনদেন করা অবৈধ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফ্লোর বিক্রির মূল্য বাবদ সোনালী লাইফ ২১২ কোটি টাকা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পরিশোধ করেছে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের নভেস্বর মধ্যে।
অথচ সোনালী লাইফ ভবনটির ৭৪ হাজার ৭শ’ স্কয়ার ফিট জায়গা ক্রয়ের অনুমোদন চেয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর।

তবে এ আবেদন এখনো অনুমোদন করেনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। অর্থাৎ ভবন ক্রয়ের অনুমোদনের আগেই ভবন বিক্রির মূল্য বাবদ ২১২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সোনালী লাইফ।

গত ২৮ অক্টোবর সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ২০২১ সালে তিনি কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক হন। ২০১৯ সালে পুত্রবধু সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে গিফট হিসেবে পাওয়া শেয়ার নিয়ে তিনি কোম্পানির শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন।

অভিযোগ রয়েছে, সাফিয়া সোবহান চৌধুরী তার শ্বশুর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে যে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেছেন তার কোনো মূল্য সাফিয়া সোবহান চৌধুরী পরিশোধ করেনি। আবার গিফট পাওয়া শেয়ার নিয়ে ২০২১ সালে সোনালী লাইফের পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান।

এর মধ্যে তাসনিয়া কামরুন আনিকাকে শেয়ার গিফট করেছে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল, মোস্তফা কামরুন সোবহানকে শেয়ার গিফট করেছেন সাফিয়া সোবহান চৌধুরী। ফজলুতুন নেছাকে শেয়ার দিয়েছে রুপালী ইন্স্যুরেন্স।

অভিযোগ উঠেছে গিফট যারা দিয়েছেন বা নিয়েছেন তাদের কেউ ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করেনি।

অর্থাৎ ২০২১ সালে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ পরিবারের যে ৩ জন নতুন করে সোনালী লাইফের পরিচালক হন তারা সবাই কোনো রকম বিনিয়োগ ছাড়াই কোম্পানির পরিচালক হয়েছেন।

২০২১ সালে সোনালী লাইফের টাকা দিয়েই শেয়ার কিনে পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ পরিবারের ৪ জন। অপর ৩ জন হলেন- মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান।

সোনালী লাইফের আগের ৩ পরিচালকের শেয়ারও রূপালী ইন্স্যুরেন্সের টাকায় কেনার অভিযোগ রয়েছে।

২০১৩ সালে সোনালী লাইফের প্রতিষ্ঠার সময় কোম্পানির ১৪ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের ছিলেন ৩ জন। এরা হলেন- মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের বড় মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, ছোট মেয়ের জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল ও ছেলের বউ সাফিয়া সোবহান চৌধুরী।

অভিযোগ রয়েছে এই ৩ জনের উদ্যোক্তা পরিচালক হওয়ার টাকাও দিয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের অপর নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান রুপালী ইন্স্যুরেন্স থেকে।

এই হিসেবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের ৭ পরিচালকের কেউ-ই গাঁটের পয়সা দিয়ে সোনালী লাইফের পরিচালক হননি। অথচ কোম্পানির পরিচালক হিসেবে তারা ডিভিডেন্ট, বোর্ড ফি ও অন্যান্য নানা ধরণের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন।

সূত্র মতে, ২০১৩ সালে যখন সোনালী লাইফ লাইসেন্স পায় তখন উদ্যোক্তা হিসেবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নাম ছিল না। তবে কাগজে কলমে তার নাম না থাকলেও তার পরিবারের ৩ জন সদস্য উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে ছিলেন। এছাড়া বড় শেয়ারের মালিকানা ছিল তারই অপর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান  রুপালী ইন্স্যুরেন্সের।

ফলে কাগজে কলমে নাম না থাকলে তার সিদ্ধান্ত অনুসারে কোম্পানি পরিচালিত হয়ে আসছে। বীমা খাতও মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকেই সোনালী লাইফের প্রকৃত চেয়ারম্যান হিসেবে জানেন।

কোম্পানিটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে কোম্পানির সকল ধরনের লেনেদেনে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে ধরা হয়।

অপরদিকে পরিবারের সদস্যদের বিনা পয়সায় সোনালী লাইফের পরিচালক বানিয়ে কোম্পানিতে একক আধিপত্য তৈরি করেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। এই আধিপত্যের কারণেই তিনি কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই উচ্চ মূল্যে জমি বিক্রির চুক্তি করেন এবং আইডিআরএ’র অনুমোদনের আগেই ফ্লোরের মূল্য বাবদ নেন ২১২ কোটি টাকা।

কোনো রকমের বিনিয়োগ ছাড়াই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান হওয়া, পরিবারের সদস্যদের পরিচালক বানানো এবং ফ্লোর ক্রয়ের অনুমোদনের আগেই কোম্পানির তহবিল থেকে ২১২ কোটি টাকা নেয়ার কাহিনী নিয়েই সাজানো হয়েছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

অনুমোদনের আগেই নেন ফ্লোরের মূল্য, বেশি নেন ১০২ কোটি টাকা
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফ্লোর বিক্রির মূল্য বাবদ সোনালী লাইফ থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নেন ২১২ কোটি টাকা। এই টাকা তিনি নেন ২০২১ সালের আগষ্ট থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বরে। অথচ আইডিআরএ’র কাছে আবেদনে জমির মূল্য উল্লেখ করেন ১১০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ফ্লোর ক্রয়ের অনুমোদন পাওয়ার আগেই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ১০২ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করে সোনালী লাইফ। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠানো আরেকটি আবেদনে এই জমির মূল্য উল্লেখ করা হয় ১৩৬ কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও সোনালী লাইফের সাথে ফ্লোর বিক্রি সংক্রান্ত চুক্তি অনুসারে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮শ’ বর্গফুটের ফ্লোরের মূল্য দেখানো হয় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। এই হিসেবে প্রতি বর্গফুট ফ্লোরের মূল্য দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৩শ’ ৫৫ টাকা।

অথচ আইডিআরএ'র কাছে ফ্লোর ক্রয়ের জন্য করা আবেদনে ৭৪ হাজার ৭শ’ স্কয়ার ফিটের মূল্য উল্লেখ করা হয় ১১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বর্গফুটের মূল্য দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩শ’ টাকা।

অর্থাৎ ফ্লোর ক্রয়ের চুক্তি ও আইডিআরএ’র কাছে করা আবেদনে প্রতি স্কয়ার ফিটের মূল্যের পার্থক্য ১৮ হাজার ৫৫ টাকা।

সোনালী লাইফ থেকে যেভাবে ২১২ কোটি টাকা নেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস
২০২১ সালের ১৯ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫২টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে সর্বমোট ২১২ কোটি ৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা নেন মোস্তাফা গোলাম কুদ্দুস।

এর মধ্যে সোনালী লাইফের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৫০ কোটি ৩৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে। ১১টি পে-অর্ডারে তার নামে পরিশোধ করা হয়েছে  ৪০ কোটি ৭০ লাখ ১৮ হাজার টাকা; ৩টি ফান্ড ট্রান্সফারে তার নামে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ কোটি টাকা এবং ১টি চেকে তার নামে পরিশোধ করা হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এসবিএসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন একাউন্ট থেকে এসব টাকা নেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। লেনদেনগুলো হয় ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বরের মধ্যে।

২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর অর্থাৎ একই দিনে এবং একই সাথে তিনটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে ফান্ড ট্রান্সফার করে পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ওই পে-অর্ডার তিনটির নম্বর ৩১১১৪৯৩, ৩১১১৪৯৪ ও ৩১১১৪৯৫।

সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে ট্রান্সফার করা হয়েছে সোনালী লাইফের ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক এবং একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে একইদিনে এসব অর্থ ট্রান্সফার করা হয়।

ড্রাগন সোয়েটারের নামে ট্রান্সফার ৬৩ কোটি টাকা
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ড্রাগন সোয়েটার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং লিমিটেডের নামে ট্রান্সফার করা হয়েছে সর্বমোট ৬৭ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ৫শ’ টাকা।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির নামে ১১টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৫৬ কোটি ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫শ’ টাকা এবং একটি চেকের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ড্রাগন সোয়েটার বাংলাদেশের নামে ট্রান্সফার করা হয় সোনালী লাইফের ২২ কোটি টাকা। এসবিএসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের একটি পে-অর্ডারে এই টাকা ট্রান্সফার করা হয়।

উল্লেখ্য, ড্রাগন সোয়েটার বাংলাদেশ লিমিটেড বর্তমানে ড্রাগন সোয়েটার এন্ড স্পিনিং লিমিটেডের সাথে একীভূত।

ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজির নামে ট্রান্সফার ৬৩ কোটি টাকা
ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড কমিউনিকেশনের নামে ট্রান্সফার করা হয় ৬২ কোটি ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এর মধ্যে ২০২৩ সালের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পৃথক ৩টি চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়া হয় ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ১৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়া হয় ৬০ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে এসব পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়।

২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজিকে দেয়া হয় সোনালী লাইফের ২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তোপখানা রোড ব্রাঞ্চের একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এই টাকা ট্রান্সফার করা হয়।

ইম্পেরিয়াল সোয়েটারের নামে ট্রান্সফার সাড়ে ৩ কোটি টাকা
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল সোয়েটার বাংলাদেশ লিমিটেডের নামে একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হয় সোনালী লাইফের ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এই পে-অর্ডারটি ইস্যু করা হয় ২০২২ সালে ৫ জানুয়ারি।

সিডি এক্রেলিক বাংলাদেশের নামে এক দিনেই ট্রান্সফার ২৭ কোটি টাকা
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান সিডি এক্রেলিক বাংলাদেশ লিমিটেডের নামে নেয়া হয়েছে সোনালী লাইফের ২৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অর্থাৎ একই দিনে এবং একই সাথে তিনটি ব্যাংকের পৃথক ৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হয়েছে এই টাকা।

এর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় সোনালী লাইফের একাউন্ট থেকে একটি পে-অর্ডারে ট্রান্সফার করা হয় ২২ কোটি টাকা, পে-অর্ডার নাম্বার ০৯০৯০১০।

এ ছাড়াও সোনালী লাইফের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মান্ডা ব্রাঞ্চের দু’টি পে-অর্ডারে ৩ কোটি টাকা এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ব্রাঞ্চের একটি পে-অর্ডারে ২ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়।

অন্যান্য খাতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ট্রান্সফার
সোনালী লাইফের একাউন্ট থেকে নিজ নামে ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া টাকার বাইরে আরো ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৯ টাকা নিয়েছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পে-অর্ডারসহ ক্যাশ ভাউচার তৈরি করে নগদ তুলে নেয়া হয়েছে এসব টাকা।

যেদিন পে-অর্ডার করে শেয়ারের মূল্য বাবদ ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন ১০ পরিচালক: সেদিনই সোনালী লাইফের একাউন্ট থেকে নগদ তোলা হয় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে উদ্যোক্তাদের অংশে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন নেয় সোনালী লাইফ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই অনুমোদন দেয় ২০১৮ সালের ১৫ মে।

এর এক মাস ১৬ দিন পর ২৬ জুন ২০১৮ সালে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের নামে একটি এসএনডি একাউন্ট খোলা হয়। একাউন্ট নাম্বার ০০০২১৩০০০০৭৭২।

ওই দিনই এই একাউন্টটিতে ১০টি পৃথক পে-অর্ডারে ১০ জন পরিচালক জমা করেন ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করেন তারা।

পরে এই একাউন্ট থেকে সোনালী লাইফের ০০২১৩০০০০৩৩৪ নাম্বার এসএনডি একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এই টাকা ট্রান্সফারের জন্য ওই দিন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয় সোনালী লাইফের পক্ষ থেকে। ওই নির্দেশনায় কোম্পানিটির তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী অজিত চন্দ্র আইচের সিল ব্যবহার করা হয়, তবে এতে স্বাক্ষর করেছেন ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া। আরেকটি সিল-স্বাক্ষর শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের।

এই টাকা ট্রান্সফারের পর এই এসএনডি একাউন্ট থেকে নগদ তোলা হয় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, এই একাউন্টটিতে আগের ব্যালান্স ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা।

ওই দিনই আবার সোনালী লাইফের লিয়েন করা একাউন্ট থেকে (একাউন্ট নাম্বার ০০০২৬২২০০০০৭৩) ২ বারে ৪ কোটি ও ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করে মোট ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা নগদ তোলা হয়।

সোনালী লাইফের নামে পৃথক ২টি ব্যাংক একাউন্ট থেকে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করে শেয়ার ক্রয়ের জন্য কোনো টাকাই পরিচালকরা জমা করেননি। নগদ টাকা ছাড়াই পে-অর্ডার জমা করা হয়েছে একাউন্ট স্টেটমেন্টে কাল্পনিক পোস্ট দেখিয়ে। টাকা ট্রান্সফারও করা হয়েছে কাল্পনিকভাবে।

এভাবেই সোনালী লাইফের এসওডি একাউন্টের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকাই বানানো হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তাদের মতে, ব্যাংকটির ওই ব্রাঞ্চে টাকা জমা, উত্তোলন ও তারল্যের হিসাব ঠিক রাখতে এবং পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা করা ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকার সাথে মিল করতে লিয়েন একাউন্ট থেকে ৮ কোটি ৯৫ লাখ ও এসএনডি একাউন্ট থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ অর্থাৎ ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন দেখানো হয়।

সোনালী লাইফের নামে এসএনডি- ০০২১৩০০০০৩৩৪ নাম্বার একাউন্টটির ব্যালান্স পূর্ণ করতেই এই একাউন্টটিতে পে-অর্ডার জমার একাউন্ট থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ট্রান্সফার করা হয়।

ওই দিনই সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখারই সোনালী লাইফের নামের পৃথক ২টি একাউন্ট থেকে নগদে তোলা হয় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

যেভাবে শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যরা 
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নতুন করে শেয়ার ক্রয় করা ১০ জনের মধ্যে ৪ জন শেয়ার ক্রয় করেন ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ' শেয়ার। এরা হলেন- উদ্যোক্তা পরিচালক রুপালী ইন্স্যুরেন্স ও অপর ৩ জন উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের।

এর মধ্যে- মোস্তফা কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, মেয়ে জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল, ছেলের বউ সাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও রুপালী ইন্স্যুরেন্স।

এই ৪ জন পরিচালকের কাছ থেকে শেয়ার নিয়ে সোনালী লাইফের নতুন করে শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস  ও তার স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা ও ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান।

এসব শেয়ারে মূল্য বাবদ কোনো টাকা সোনালী লাইফকে পরিশোধ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সময় সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নামে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৭ লাখ শেয়ার। শেয়ারের মূল্য বাবদ সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নামে ইস্যু করা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার নগদ একটি পে-অর্ডার জমা করা হয় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকে সোনালী লাইফের একাউন্টে। একাউন্ট নাম্বার- ০০০২৬২২০০০০৭৩, পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩৩।

অভিযোগ রয়েছে, সোনালী লাইফের লিয়েন একাউন্ট থেকে নগদ টাকা তুলে এই পে-অর্ডার করা হয়েছে। সাফিয়া সোবহান চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে শেয়ারের মুল্য পরিশোধ করেনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ২০১৯ সালে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেন সাফিয়া সোবহান চৌধুরী। গিফট পাওয়া এই শেয়ার নিয়েই সোনালী লাইফের পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর সেই ১৭ লাখ শেয়ার থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেন। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে এই শেয়ার ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে।

পরে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ১২ লাখ শেয়ার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার মোস্তফা কামরুন সোবহানকে গিফট করেন। বাকি ৯ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার নিজের নামে রেখে দেন। ফলে বর্তমানে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে শেয়ারের পরিমাণ ৯ লাখ ৭০ হাজার।

মোস্তফা কামরুস সোবহানও সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ লাখ শেয়ার গিফট হিসেবে পেয়ে। সাফিয়া সোবহানের গিফট করা শেয়ার মোস্তফা কামরুস সোবহানের নামে ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে। পরে ২০২১ সালে সাফিয়া সোবহান চৌধুরী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে আরো ৬ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার গিফট করেন। ফলে মোস্তফা কামরুস সোবহানের শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ৫০ হাজার। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশের বেশি।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন তার স্বামী শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে গিফট হিসেবে পাওয়া শেয়ার নিয়ে।

২০১৮ সালে নতুন করে ইস্যু করা শেয়ার থেকে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল বরাদ্দ পান ২১ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার। এসব শেয়ারের মুল্য বাবদ শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের নামে ইস্যু করা ২ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার নগদ একটি পে-অর্ডার কোম্পানির তহবিলে জমা করা হয়। (পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩২)।

অভিযোগ রয়েছে, শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল এসব শেয়ারের মুল্য নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করেনি।

শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল ২১ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ারের মধ্যে তাসনিয়া কামরুণ আনিকাকে গিফট করেন ১২ লাখ শেয়ার। এসব শেয়ার আনিকার নামে ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে।

এই ১২ লাখ শেয়ার নিয়েই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক হন তাসনিয়া কামরুন আনিকা।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ফজলুতুন নেছা শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন রুপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে।

ফজলুতুন নেছার নামে বর্তমানে শেয়ার রয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৮৬টি। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশ। এর মধ্যে ফজলুতুন নেছা রুপালী ইন্স্যুরেন্স থেকে নিয়েছেন ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের কাছ থেকে নিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছে থেকে নেয়া ১২ লাখ শেয়ার থেকে এই ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ফজলুতুন নেছাকে গিফট করেন।

২০১৮ সালে নতুন ইস্যু করা শেয়ার থেকে  রুপালী ইন্স্যুরেন্সের নামে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয় ১৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চে সোনালী লাইফের একাউন্টে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ দেখানো হয় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩১।

রুপালী ইন্স্যুরেন্সের এই ১৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার থেকে  ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার ট্রান্সফার করে দেয় ফজলুতুন নেছার নামে। এই শেয়ার ট্রান্সফার নথিভুক্ত করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে। অভিযোগ রয়েছে, এসব শেয়ারের মূল্য বাবদ কোনো টাকা পরিশোধ করেনি রুপালী ইন্স্যুরেন্স ও ফজলুতুন নেছা।

আবার মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের কাছ থেকে যে ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার গিফট পেয়েছেন তার মূল্যও কেউ পরিশোধ করেনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে যে ১০ জন উদ্যোক্তা পরিচালক ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার কেনেন তাদের মধ্যে ৬ জন পরিচালকের নামে নিজ নিজ নামে ক্রয় দেখানো হয় ৩১ লাখ ২ হাজার ৫টি শেয়ার।

এই ৬ পরিচালক তাদের নামের শেয়ার অন্যান্যদের নামে হস্তান্তর করেন। ৬ জন পরিচালক যাদের নামে শেয়ার হস্তান্তর করে তারা কোম্পানির তহবিলে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করেন ২০১৭ সালে। অর্থাৎ শেয়ার ইস্যু তা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই ৬ পরিচালক তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেন।

এই ৬ পরিচালক হলেন- নূর-ই হাফজা, আহমেদ রাজিব সামদানি, হাজেরা হোসাইন, কামরুন নাহার, হুদা আলী সেলিম মায়া রানি।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে অফলাইনে না পেয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপে এ বিষয়ে বার্তা পাঠানো হয়। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র বার্তা এবং বার্তার জবাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস যা লিখেছেন-
“জেনে খুশি হয়েছি যে, সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স এর প্রতি আপনার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সঙ্গে সঙ্গে আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, সম্ভবত দীর্ঘদিন থেকে আপনার স্বনামধন্য insurance news bd.com এ আমাদের সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের একটি লাইভ বিজ্ঞাপন পরিলক্ষিত হয়। আপনার বক্তব্যটি সঠিক না হলে এবং কোম্পানির সামান্যতম সুনাম ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনার টেলিফোন মেসেজ এর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বাধ্যবাধকতা হিসাবে দাঁড়াতে পারে।

সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড তার জন্মলগ্ন থেকেই সুনামের সাথে বিগত ১০ বছর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। দুই মাস আগে দশ বছরের স্থায়ী চেয়ারম্যান পরিবর্তন হওয়ায় সম্ভবত রাগে ও দুঃখে এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কোম্পানিটি ২০২০ সালে ১০ শতাংশ, ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ, ২০২২ সালে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ সকল শেয়ারহোল্ডারদেরকে প্রদান করেছেন।

আপনার সদয় বক্তব্যটি যদি ব্যক্তিগত কাউকে অথবা কোম্পানিকে হেয় করার উদ্দেশ্যে লেখা হয় তাহলে আপনি নিজ উদ্যোগে প্রত্যাহার করার অনুরোধ করছি আর যদি কোম্পানির সুনাম ও আর্থিক ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে, প্রদত্ত পোস্ট টি প্রত্যাহার করার জন্য আবার বিনীত অনুরোধ করছি।
আপনার একান্ত. (মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস) চেয়ারম্যান, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড”

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠানো বার্তাটি যেমন ছিল-
“আসসালামু আলাইকুম। জনাব, আপনার প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। এই প্রতিবেদনের সহায়ক তথ্যের জন্য আপনার মতামত প্রয়োজন। নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনার মতামত জানালে প্রতিবেদনটি আরো গুরুত্ববহ ও সুন্দর হবে বলে আমরা আশা করি।

# পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ২০১৮ সালে সাড়ে ১০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে সোনালী লাইফ। তবে শেয়ার বিক্রির এই টাকা পরিশোধ করা হয় সোনালী লাইফের নামে লিয়েন করে নেয়া ঋণের টাকায়। নগদ পে-অর্ডার দেখিয়ে শেয়ারের মূল্য কোম্পানির তহবিলে জমা দেখানো হয়।

এর আগে ২০১৩ সাল সোনালী লাইফ প্রতিষ্ঠার সময় আপনার পরিবারের যারা পরিচালক হয়েছিলেন তাদের শেয়ার ক্রয়ের টাকা রুপালী ইন্স্যুরেন্স থেকে পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

# আইডিআরএ’র অনুমোদনের আগেই সোনালী লাইফের কাছে জমি বিক্রির চুক্তি এবং এ বাবদ কোম্পানিটি থেকে ২০৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। নিজের নামে এবং আপনার মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আপনার প্রয়োজনীয় মতামত প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হলো।

ধন্যবাদান্তে-
আবদুর রহমান আবির, সিনিয়র রিপোর্টার, ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি
মোবাইল: ০১৯২১ ৯৭১৩১৮, ই-মেইল: abirdu5@gmail.com”