স্বদেশ ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানসহ ১২ পরিচালককে অপসারণ করেছে আইডিআরএ
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১২ পরিচালককে অপসারণ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । আইন লঙ্ঘন করে কোম্পানির স্থায়ী আমানতের বিপরীতে নেয়া ঋণের অর্থ আত্মসাৎ করায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত পৃথক পৃথক চিঠি কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহীসহ সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের পরিচালক (আইন) মোহা. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, এ আদেশ পত্র জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে এটা জারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইডিআরএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, স্বদেশ ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়াও ১০ জন পরিচালককে অপসারণ করা হয়েছে। তবে কোম্পানিটির পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়নি।
এক্ষেত্রে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বাকী সদস্যদের নতুনভাবে বোর্ড গঠন করতে হবে। কোম্পানি পরিচালনায় তাদেরকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজন হলে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বা সহযোগিতা চাইতে পারে, বলেন জাহাঙ্গীর আলম।
উল্লেখ্য, স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৭। এর মধ্যে ১২ পরিচালককে অপসারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিটির পর্ষদে এখনো ৭ জন পরিচালক বাকী রয়েছেন।
স্বদেশ ইসলামী লাইফের অপসারিত পরিচালকরা হলেন- পরিচালক ও চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান, পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শহিদুল আহসান, পরিচালক নুরুল আলম চৌধুরী, পরিচালক মো. বাহারুল আহসান, পরিচালক মারজানুর রহমান, পরিচালক ফারাহ আহসান, পরিচালক এ বি এম আব্দুল মান্নান, পরিচালক শাসসুন নাহার রহমান, পরিচালক মো. ফিরোজুল আহসান, পরিচালক মো. কামরুল আহসান, পরিচালক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম এবং পরিচালক মদিনা তুন নাহার।
আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, স্বদেশ ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা পদে আসীন থাকা অবস্থায় কোম্পানি ‘বীমা আইন ২০১০’-এর ধারা ২১ মোতাবেক কোম্পানির পেইড-আপ ক্যাপিটালের বিপরীতে রাখা ১৩ কোট ৫ লাখ টাকা স্থায়ী আমানতের বিপরীতে এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে।
বীমা আইন ২০১০ এর ২১ (২) ধারায় পেইড-আপ ক্যাপিটাল কোনো তফসিলি ব্যাংকে দায়মুক্তভাবে রাখার বিধান রয়েছে। তাছাড়া ঋণ হিসেবে উত্তোলিত টাকা কোম্পানির সংশ্লিষ্ট সময়ের স্থিতিপত্রে প্রদর্শন করা হয়নি বিধায় উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
এতে বলা হয়, স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করে বীমা আইন লঙ্ঘন ও আত্মসাৎ করার মাধ্যমে বীমা কোম্পানি ও পলিসি গ্রাহকের স্বার্থহানী করায় বীমা আইন ২০১০ এর ৫০ (১) ধারা অনুযায়ী কেন পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য গত ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় প্রদান করে ডাকযোগে (রেজিস্ট্রিসহ) এবং ই-মেইলের মাধ্যমে গত ৪ ডিসেম্বর পত্র প্রেরণ করা হয়।
নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও এসব পরিচালক কারণ দর্শানোর কোনো জবাব দাখিল করেনি অর্থাৎ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ গ্রহণ করেনি।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা তাদের পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালে কার্যক্রমগুলো বীমা কোম্পানি ও পলিসি গ্রাহকদের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ‘বীমা আইন ২০১০’-এর ৫০(১) ধারা অনুযায়ী তাদেরকে পত্র জারির তারিখ হতে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদ হতে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।